খুলনাঞ্চলে এবার ১৬’শ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির টার্গেট

# চলতি অর্থ বছর ২০২৪-২০২৫ রবি মৌসুম #
# ১৮০৫৫ হেক্টর জমিতে খরচের বিপরীতে বিক্রির সম্ভাবনা ১৬২১,৬৬,৭২, ৭২৭ টাকা #
# এ বছর তরমুজ থেকে লভ্যাংশ আসবে ১২১৬ কোটি ১৯ লক্ষ ৫৬ হাজার ৩৩০ টাকা #
# স্বল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়াই চাষাবাদে ঝুঁকছেন কৃষক #
মো: আশিকুর রহমান ঃ গ্রীষ্মের একটি জনপ্রিয় ফল তরমুজ। উত্তপ্ত রোদে দেহের সামায়িক স্বস্তি পেতে তরমুজের বিকল্প নাই। তরমুজের প্রধান উৎপাদন অঞ্চল দক্ষিণাঞ্চল। বিশেষ করে চরঞ্চল পটুয়াখালী, যেখানে দেশের মোট তরমুজ উৎপাদনের প্রায় ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ আসে। এছাড়া পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা ও ভোলা জেলার চাষাবাদ করা হয়েছে। সাধারনত ফেব্রুয়ারী থেকে এপ্রিল মাস তরমুজ চাষের উপযুক্ত সময়, তবে অনেক কৃষক জানুয়ারীতে তরমুজ আবাদ শুরু করে থাকেন। এ বছর খুলনাঞ্চলের ৪ জেলার উপজেলা সমূহে তরমুজের আবাদ করা হয়েছে। তরমুজ চাষাবাদে এই অঞ্চলে খুলনা জেলার বাজুয়া, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, শান্তহারসহ অন্যান্য উপজেলাগুলো গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখছে। সল্প খরচে অধিক লাভের কারণে এই অঞ্চলের কৃষকেরা দিন দিন তরমুজ চাষে অধিক আগ্রহী হয়ে উঠছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো বড় ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা না দিলে এই অঞ্চলের কৃষকেরা এবার তরমুজ চাষাবাদে দারুন সফলতা অর্জনে সক্ষম হবে।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের রবি মৌসুমের ফসল খুলনাঞ্চলের ৪ জেলা- খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইলে তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ১৩ হাজার ৪৩২ হেক্টর জমি। যার মধ্যে খুলনা ১২,৯৬৫ হেক্টর, বাগেরহাট ১৪২ হেক্টর, সাতক্ষীরা ৩১২ হেক্টর ও নড়াইল ১৩ হেক্টর। ইতোমধ্যে ওই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবার খুলনাঞ্চলে আবাদ সম্পন্ন করেছে ১৮০৫৫ হেক্টর জমিতে, যার মধ্যে যার মধ্যে খুলনা ১৭,২৯১ হেক্টর, বাগেরহাট ১৩৩ হেক্টর, সাতক্ষীরা ৬১৮ হেক্টর ও নড়াইল ১৩ হেক্টর। হেক্টর প্রতি তরমুজের উৎপাদন খরচ পড়েছে ২ লক্ষ ২৪ হাজার ৫৪৫ টাকা, হেক্টর প্রতি তরমুজের সম্ভব্য ফলন ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টি তরমুজ। হেক্টর প্রতি তরমুজ বিক্রয় করা হচ্ছে ৮ লক্ষ ৮৯ হাজার ১৮২ টাকা, একজন কৃষক হেক্টর প্রতি তরমুজ চাষাবাদ করে লাভের মুখ দেখবে ৬ লক্ষ ৭৩ হাজার ৬৩৬ টাকা। ওই তথ্যনুসারে এ বছর খুলনাঞ্চলের ৪ জেলার ১৮০৫৫ হেক্টর (১,৩৫,১৩৮ বিঘা) জমিতে আবাদকৃত তরমুজ চাষাবাদে খরচ হয়েছে ৪০৫ কোটি ৪১ লক্ষ ৬৮ হাজার ১৮২ টাকা। ওই আবাদকৃত তরমুজ বিক্রির সম্ভবনা রয়েছে ১৬২১ কোটি ৬৬ লক্ষ ৭২ হাজার, ৭২৭ হাজার টাকা। খরচ-খরচাবাদে এ বছর খুলনাঞ্চলে তরমুজ থেকে লভ্যাংশ আসবে ১২১৬ কোটি ১৯ লক্ষ ৫৬ হাজার ৩৩০ টাকা।
এদিকে রবিবার (২৩ মার্চ) খুলনার বিভিন্ন বাজার ঘুরে তরমুজ বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিপরীতে বিক্রেতারা বলছেন, এখনো গ্রীষ্ম মৌসুমের তরমুজ বাজারে পুরাদমে আসা শুরু করেনি। চর এলাকা যে সকল চাষীরা আগাম বাজার ধরতে আগাম তরমুজের চাষাবাদ করেছিলেন, ওই সকল তরমুজই বর্তমান বাজারে দৃশ্যমান। তবে আমাদের খুলনার স্থানীয় এলাকা সমূহ বিশেষ করে দাকোপ, বটিয়াঘাটা, বাজুয়া, শান্তহারসহ অন্যান্য অঞ্চলের তরমুজ আর ১৫-২০ দিনের মধ্যে বাজারে চলে আসতে শুরু করবে। বাজারে বর্তমানে ভালো মানের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আবার মানভেদে কোনো কোনো তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা দরে।
দৌলতপুর বাজার ফল ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন আহম্মেদ রাজু জানান, ইতোমধ্যে আগাম তরমুজ বাজারে এসেছে। পবিত্র মাহে রমজানের কারণে বাজারে তরমুজের দারুন ক্রেতা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে ভালো মানের প্রতি কেজি তরমুজ ৩৫-৪০ টাকা দরে বিক্রি করছি। সিজিনের আগাম ফল হওয়াতে পাইকারী বাজারে তরমুজের দাম একটু বেশি, তবে স্থানীয় এলাকা দাকোপ, বাজুয়া, বটিয়াঘাটার গ্রীষ্মকালীন তরমুজ বাজারে আসা শুরু করলে দাম হাতের নাগালে চলে আসবে।
দাকোপ উপজেলার এলাকার কৈল্লাসগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনটানা ব্লকের কৃষক ইন্দ্রজিং জানান, আমি এবার ১৫ বিঘা জমিতে তরমুজের চাষাবাদ করেছি। বিঘা প্রতি খরচ পড়েছে ২৫ হাজার টাকা। এবার ফলন বেশ ভালো হয়েছে। প্রতি বিঘাতে ৮/৯’শ পিস তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। তবে মৌমাছি কমে যাওয়ার কারনে পরাগায়ণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। স্যাররা নিয়মিত আসেন, খোজ খবর নেন, সহযোগীতা করেন। আশাকরি কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা না দিলে
দাকোপ উপজেলার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা করুনা কান্ত সরকার জানান, কৈল্লাসগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনটানা ব্লকে ৬০০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষা করা হয়েছে। এ বছর তরমুজের ফলন সন্তোষজনক। বড় কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা না দিলে এই এলাকার কৃষকেরা এবার তরমুজ চাষে লাভবান হবে। আগামী ১৫/২০ দিন পর থেকে তরমুজ কর্তন শুরু হবে।
খুলনার দাকোপ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ২৮ টি ব্লক নিয়ে দাকোপ উপজেলা। খুলনাঞ্চলে মধ্যে দাকোপ উপজেলাতে সবচেয়ে বেশি তরমুজের আবাদ হয়ে থাকে। গত বছর আবাদ করা হয়েছিল ৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে , এ বছর ওই লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে উপজেলাতে ৮ হাজার ১’শ হেক্টর করা হয়েছে। আর ১৫/২০ দিন পর তরমুজ কর্তন শুরু হবে। বর্তমানে আমাদের কার্যক্রম হিসাবে ক্ষেতের রোগ-বালাই প্রতিরোধে গ্রুপ মিটিং করছি। উপজেলাটিতে তেমন মারাত্বক সমস্যা দেখা দেয়নি। আশাকরি সামনে কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঘটার সম্ভবনা না থাকলে চাষাবাদ সম্পন্ন শেষে তরমুজ বিক্রি করে এই অঞ্চলের কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চল খুলনার অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম জানান, গ্রীষ্মের একটি জনপ্রিয় ফল তরমুজ। গত বছরের তুলনায় এ বছর খুলনাঞ্চলে তরমুজের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ কয়েক’শ হেক্টর বেশি আবাদ করা হয়েছে। আশাকরি কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ ( কালবৈশাখি ঝড়, শিলা বৃষ্টি) দেখা না দিলে চলতি অর্থ বছর ২০২৪-২০২৫’ এর রবি মৌসুমের ফসল হিসাবে তরমুজ এবার এই অঞ্চলের উৎপাদিত উল্লেখযোগ্য ফসল হিসাবে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখবে। সল্প খরচে অধিক লাভের কারণে এই অঞ্চলের কৃষকেরা দিন দিন তরমুজ চাষে অধিক আগ্রহী হয়ে উঠছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।