স্থানীয় সংবাদ

খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় নিয়োগ সিদ্ধান্ত মূলতুবী

# দৈনিক প্রবাহে দুর্নীতি ও অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের জের #
# প্রবাহের সংবাদ ও মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের লিগাল নোটিশ আটকে দিল তড়িঘড়ি করে নিয়োগ প্রক্রিয়া
# ভিসি ছাড়া সুপ্রীম কোর্টের লিগ্যাল নোটিশে সিন্ডিকেট সভার সদস্যদের একাতœতা

স্টাফ রিপোর্টার ঃ গত ১৬ এপ্রিল ছুটির দিনে তড়িঘড়ি করে সিন্ডিকেট সভা ডেকে একটি অবৈধ নিয়োগের জোরালো প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভিসি’র একক স্বেচ্ছচারিতা ও দুর্নীতি অনিয়মের কোন দায়ভার সিন্ডিকেটের কোন সদস্য নেবেন না বলে তারা সভায় সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। ফলে ওই সভায় নিয়োগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারেন নি বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ডা. মো.মাহবুবুর রহমান। তার পদত্যাগের দাবিতে একাধিক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ হওয়া সত্বেও হাসিনার দোসর ভিসি এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।
লিগাল নোটিশ সূত্রে আর জানা যায়, ঢাকাস্থ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন’র চেয়ারম্যান ড. এস এম এ ফয়েজ ও দুর্নীতি দমন কশিন এর চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেনকেও অবগত করতে লিগাল নোটিশটি তাদের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ভিসিসহ বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৭জন সিন্ডিকেট সদস্যকেও লিগাল নোটিশটি পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এ্যাডভোকেট মোঃ ইয়াসিনুজ্জামান স্বাক্ষরিত ও প্রেরিত লিগ্যাল নোটিশে লেখা আছে ঃ
যেহেতু আমি জাতীয় স্বার্থে হিতার্থে জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকার নিউজের উপর ভিত্তি করিয়া অত্র লিগ্যাল নোটিশ দ্বারা আপনাদিগকে জানানো যাইতেছে যে,
১. যেহেতু, বিগত ০৯.-০৩.২০২৫ ইং তারিখে স্মারক নং-শেহামেবি/রেজি:/নথি-৬৪/২০২৫/৬০২ মূলে আপনি নোটিশ (প্রাপক নং-০৪) রেজিষ্ট্রার এস এম আবু নাসের ফারুক স্বাক্ষরিত ও প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকে আবেদন করতঃ বিগত ০৮/০৪/২০২৫ইং তারিখে আপনি নোটিশ প্রাপক নং-০৩ এর বোর্ডে নিয়োগ প্রার্থীগণ উপস্থিত হইয়া মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করিয়াছেন।
২. যেহেতু, আপনারা ১৭জন নোটিশ প্রাপক ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের পদলেহনকারী, দুর্নীতি পরায়ন ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করিয়া স্বেচ্ছাচারিতায় অভ্যস্ত। অতঃপর আপনারা নোটিশ প্রাপকগণ (নং-০৩ থেকে ১৯) বাকি ১৭জন এর পদত্যাগের দাবির প্রেক্ষিতে বিগত ০৩/০৩/২০২৫নং তারিখে দৈনিক যুগান্তর, সময়ের নিউজ ও দৈনিক কালবেলা পত্রিকায় এবং ০৪/০৩/২০২৫ ইং তারিখে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
৩. যেহেতু, বিগত ০৯.০৩.২০২৫ ইং তারিখে স্মারক নং- শেহামেবি/রেজি:/নথি-৬৪/২০২৫/৬০২ মূলে আপনি নোটিশ প্রাপক নং-০৪ (রেজিষ্ট্রার) স্বাক্ষরিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। তদালোকে বিগত ০৮/০৪/২০২৫ইং তারিখে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হইয়াছে এবং বর্ণিত নিয়োগ সংশ্লিষ্টে সিন্ডিকেট সভার ঘোষিত তারিখ ১৬/০৪/২০২৫ইং। বর্ণিত নিয়োগ পরীক্ষায় আপনারা নোটিশ প্রাপকগণ নং-০৩ থেকে ১৯ এর ব্যাপক অনিয়ম, জাল-জালিয়াতি, দুর্নীতি অভিযোগ সংক্রান্ত প্রতিবেদন গত ১৪/০৪/২০২৫ ইং তারিখে দৈনিক প্রবাহ পত্রিকায় প্রকাশিত হইয়াছে। প্রাকশিত অভিযোগগুলো নি¤œরূপ:
৩.১ শর্ত অনুযায়ী নিয়োগ বোর্ডের কমিটিতে বিভাগীয় প্রধানকে রাখার শর্ত থাকলেও এক্ষেত্রে বিভাগীয় প্রধানকে উহ্য রেখেই নিয়োগ কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত।
৩.২ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধি অনুযায়ী নিয়োগ কমিটির এক্সপার্ট মেম্বার হিসেবে যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) কে রাখার বিধি থাকলে অনৈতিক সুবিধা গ্রহনের জন্য ওজোপাডিকোর একজন রিটায়ার্ড পরিচালককে ভিসি নিয়োগ কমিটিতে রেখেছেন, যিনি নোটিশ প্রাপক নং-০৩ এর ক্লাস ফ্রেন্ড এবং ঘনিষ্ঠবন্ধু।
৩.৩ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে আবেদনের জন্য ২১ দিন সময় প্রদানের বিধি থাকলেও সময় দেয়া হয়েছে মাত্র ১৩ দিন (০৯ মার্চ থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত) যার মধ্যে ছুটিই ছিল ৪ (চার) দিন অর্থাৎ আবেদনের জন্য প্রকৃত সময় দেয়া হয়েছে মাত্র ১০ (দশ) কর্ম দিবস যা আইনত: অবৈধ। সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় হচ্ছে, আবেদনের শেষ তারিখ নির্ধারণ করেছেন সরকারি ছুটির দিনকে।
৩.৪ পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সহকারী পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) পদের বিপরীতে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহনকারী ৩ জনের ১ জনের আবেদন করার যোগ্যতা নাই কেননা তার ৪ (চার) বছরের অভিজ্ঞতা নাই। অথচ সরকারি চাকরীর প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সপ্তম গ্রেডে আবেদনের জন্য নূন্যতম ৪ (চার) বছরের অভিজ্ঞতা থাকিতে হইবে। অর্থাৎ ৯ম গ্রেডের চাকরির ৪ বছর মেয়াদকাল ছাড়া কোনভাবেই কোন প্রার্থী ৭ম গ্রেডের পদে আবেদন করতে পারনেনা। যেটা আপনি নোটিশ প্রাপক নং-০৪ (রেজিষ্ট্রার) স্বাক্ষরিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে নিয়ম বহির্ভুতভাবে শর্ত শিথিল করা হইয়াছে।
৩.৫ আপনি নোটিশ প্রাপক নং-০৩ এর একক সিদ্ধান্তে সিন্ডিকেটের অনুমোদন ছাড়া MFQ (Minimum Presented Qualification) এর কোন শর্তাবলী শিথিল করতে পারেননা। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ৭নং শর্তাবলীতে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে অবিজ্ঞতা শিথিলযোগ্য। কিন্তু সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের বিবিধ-১ শাখার ০১/১২/২০০৪ইং তারিখের পরিপত্র অনুযায়ী “চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীও বয়স সীমা কেন্দ্রীয়ভাবে সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রার্থীর বয়সসীমা পরিমার্জনের কোন বিধিগত সুযোগ নেই। উক্ত পরিপত্রটি আপনারা নোটিশ প্রাপকগণ নং-০৩ থেকে ১৯ (ভিসিসহ ১৭জন সদস্য) সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করেছেন।
৩.৬ আপনি নোটিশ প্রাপক নং-০৩ এর সাথে বিশেষ সুস্পর্কের খাতিরে জাকিয়া সুলতানা ২০২১ এর আগস্ট মাসে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পান। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মোতাবেক ৬ মাস করে ২ বার অর্থাৎ ১ বছর মেয়াদ বৃদ্ধির পর আর সুযোগ না থাকায় ১ দিনের সার্ভিস গ্যাপ দিয়ে পুনরায় তাকে আবারও এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ০৮/০৮/২০২২ ইং তারিখে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ঐ বছরের ডিসেম্বর তাকে স্থায়ীভাবে যোগদান করানো হয়। বিধিবর্হিভূত হওয়ায় তৎকালীন সময়ে উক্ত ১ দিনের সার্ভিস গ্যাপটি ব্রিজ করানো সম্ভব হয়নি। উক্ত নিয়োগ ডিসেম্বর ২০২২ থেকে মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত হিসাব করলে তার অভিজ্ঞতা দাঁড়ায় সর্বসাকুল্যে ২ বছর ৪ মাস। ৯ম গ্রেডের চাকিরতে ৪ বছর মেয়াদ কাল ছাড়া কোন ভাবেই তিনি ৭ম গ্রেডের পদে আবেদন করতে পারনেনা।
৩.৭ এছাড়াও জাতীয় পে-স্কেল ২০১৫ (Public Bodies Autonomous)   এর অনুচ্ছেদ-১২ অনুযায়ী ৭ম গ্রেডের বেতন পেতে হলে প্রার্থীকে অবশ্যই কমপক্ষে ৪ বছর যাবৎ ৯ম বা তদুর্ধ গ্রেডের চাকরিতে নিয়োজিত থাকতে হবে (সরাসরি বা পদোন্নতি যেভাবেই নিয়োগ প্রদান হোক না কেন) অর্থাৎ এক্ষেত্রে উক্ত বেতন আদেশও অমান্য করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, গচছ তে ও বলা হয়েছে উক্ত পদে নিয়োগের জন্য ৪ বছরের অভিজ্ঞতা আবশ্যক অর্থাৎ বিশেস সুস্পর্কের খাতিরে এই একজন প্রার্থীকে নিয়োগ গিতে আপনি নোটিশ প্রাপক নং-০৩ থেকে ১৯ (১৭জন সদস্য) ২০০৪ সালে জারিকৃত সরকারের পরিপত্র, জাতীয় বেতনাদেশ-২০১৫ এবং গচছ এই তিনটি বিধানই ভঙ্গ করেছেন।
৩.৮ সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদিত সংবিধি-১ অনুযায়ী ৭ম গ্রেডের নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাচনী বোর্ডের সুস্পষ্ট পদ বিন্যাস রয়েছে। কিন্তু আপনি নোটিশ প্রাপক নং-০৩ এর আশীর্বাদপুষ্ট নোটিশ প্রাপক নং-০৪ রেজিস্টার) এবং নোটিশ প্রাপক নং-০৫ ট্রেজারার) এর যোগসাজশে উক্ত বিন্যাসের ব্যত্যয় ঘটিয়ে উপাচার্যের একাধিক ঘনিষ্ঠবন্ধু এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস.এম. মাহবুবর রহমান, সিন্ডিকেট সদস্য ইউসুফ হারুন প্রমুখ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচনী বোর্ড করেন। কিন্তু সংবিধি অনুযায়ী উক্ত নির্বাচনী বোর্ডটি অবৈধ।
৩.৯ দৈনিক প্রবাহের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অধিকাংশ সময় সিন্ডিকেট সভায় আলোচনার কোন সুযোগ না দিয়ে প্রায় সব সিদ্ধান্ত ভিসি একাই নেন এবং নিজের প্রার্থীকে (জাকিয়া সুলতানা) উক্ত পদেও নিয়োগপত্র দেওয়ার পায়তারা চালাচ্ছেন ভিসি ডাঃ মোঃ মাহবুবুর রহমান।
এমতাবস্থায় অত্র লিগ্যাল নোটিশের মাধ্যমে আপনারা অত্র নোটিশ প্রাপক নং-০১ ও ০২ এর নিকট বিনীত প্রার্থনা এই যে, প্রায় ২০০০ (দুই হাজার) মানুষের শাহাদাত আর প্রায় ৪০০০ (চার হাজার) আহত মানুষের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে খুলনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন অর্থাৎ নোটিশ প্রাপক নং-০৩ থেকে ১৯ কিভাবে স্ব-পদে বহাল থাকিয়া বিধিবহির্ভূত কার্যক্রম চালাইতে পারে? সেহেতু, নোটিশ প্রাপক নং-০৩ থেকে ১৯ কে এক্ষুনি : “তাদের পদ হতে অব্যাহতি প্রদান করা, যাহাতে সিন্ডিকেট সভায় অবৈধ নিয়োগ প্রদান করিতে না পারে তাহার জন্য বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণ করা, দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে তাদের দুর্নীতির তদন্ত করত: যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।”
অন্যথায় আপনাদের নোটিশ প্রাপক নং-০-৩ ও ১৯) বিরুদ্ধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সিভিল, ক্রিমিনাল বা রিট বা অন্য যে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করিতে বাধ্য হইব এবং ইহার ভবিষ্যত পরিণতির জন্য শুধুমাত্র আপনারা দায়ী থাকিবেন। অত্র লিগাল নোটিশটি পাওয়ার পর গত ১৬ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়টির সিন্ডিকেট সভার সদস্যরা জাকিয়া সুলতানার অবৈধ নিয়োগ পক্রিয়ার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। তারা কোন অনিয়ম দুর্নীতির সাথে নিজেদেরকে জড়াবেন না জানিয়ে নিয়োগের সিদ্ধান্ত মুলতুবী রাখতে মতামত দেন। ফলে তড়িঘড়ি করে জাকিয়া সুলতানার নিয়োগ গত সিন্ডিকেট সভায় বাস্তবায়ন করতে পারেননি বর্তমান ভিসি ডা. মো. মাহবুবুর রহমান।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button