খুলনায় হঠাৎ সরব আ’লীগ : জনমনে আতঙ্ক

# আওয়ামী ফ্যাসিস্ট দমনে পুলিশ ও প্রশাসন নির্বিকার, একদিনে চারস্থানে ঝটিকা মিছিল, বয়রায় অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের শো-ডাউন
# আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ও যেকোনো সময় নাশকতার আশংকা
# পুলিশ বলছে ২৫জনকে আটক করা হয়েছে, বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে
মুশফিকুর রহমান মেহেদী ঃ ৫ আগষ্ট গনঅভ্যুত্থানের পর খুলনায় এই প্রথম মিছিল করেছে আওয়ামীলীগ। যা নিয়ে নগরজুড়ে চলছে তুমুল সমালোচনা। খুলনার সড়কে আওয়ামী লীগের সরব হওয়া নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। এছাড়া মিছিলের ঘটনায় দেশব্যাপি রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর এ ধরনের মিছিল বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়ার পরপরই যেন সরব হয়েছে আওয়ামী লীগ। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গতকাল (১৯ এপ্রিল) সতর্ক করে দিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম ও ঝটিকা মিছিলের বিরুদ্ধে । পুলিশের কোনো নিষ্ক্রিয়তা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে স্পষ্ট বার্তা দেন তিনি। তবে খুলনায় বেশ কিছুদিন ধরে গোপনে আওয়ামী লীগের উপস্থিতি থাকলেও নির্বিকার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ সূত্রে জানা যায় , খুলনা সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকা, নিরালা আবাসিক এলাকা, দৌলতপুর, খালিশপুর, লবনচরাসহ বেশকিছু স্থানে গোপনে অবস্থান করছে আওয়ামী লীগ সহ অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীগণ। এছাড়া তথ্য পাওয়া গেছে, পাশবর্তী জেলাগুলোর মধ্যে বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, যশোর,ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গার আওয়ামী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীগন খুলনায় বিভিন্ন আত্মীয় -স্বজনদের বাড়ি লুকিয়ে রয়েছেন । একদিনে চার স্থানে আওয়ামী লীগের এই ঝটিকা মিছিল নিয়ে বি এন পি, এন সি পি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে তুমুল উত্তেজনা। সকাল আনুমানিক ৭ টায় জিরোপয়েণ্ট এলাকায়, দুপুর ৩ টায় বয়রা মহিলা কলেজ মোড় , বিকাল ৪ টায় দৌলতপুরে ও সন্ধ্যার পর খুলনা সাতরাস্তা মোড়ে ঝটিকা মিছিল করেছে আ’লীগ। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত একটি ব্যানার ধরে আছেন। এ সময় তারা ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’, ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘নেতা মোদের শেখ মুজিব’, ‘আমরা সবাই মুজিব সেনা’সহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্লোগান দেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশনার অংশ হিসেবে খুলনায় ঝটিকা মিছিল করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে এ নিয়ে জেলা বা মহানগর পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এর মধ্যে জিরো পয়েন্টে প্রায় ৩শ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিল। তবে কে এম পির তথ্যানুযায়ী জিরো পয়েন্টের মিছিলে অংশগ্রহণকারী ২৫ জন কে আটক করেছে পুলিশ। জিরোপয়েন্টের মিছিলের পরই খুলনা বয়রা মহিলা কলেজ রোডে ৩০ থেকে ৩৫ জনের একদল মধ্যবয়সী যুবক কালো পতাকা নিয়ে মিছিলের চেষ্টা করে। এদের মধ্যে ৪ থেকে ৫ টি মটরসাইকেলে ছিল অস্ত্রধারী যুবক। এসময় এলাকাবাসী ও স্থানীয় বি এন পি নেতা কর্মী তাদেরকে ধাওয়া করলে ছত্র ভঙ্গ হয়। কালো পতাকার ব্যাগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের স্বাক্ষরকৃত বিভিন্ন কাগজসহ একজন ছেলেকে আটক করে এলাকাবাসী। তার নাম অলিদ হাসান, পিতা-হাবিব, ঠিকানা – আফজালের মোড়, খালিশপুর। তাকে গনপিটুনি দিয়ে পুলিশের নিকট সোপর্দ করে স্থানীয়রা। পরবর্তীতে দৌলতপুর ও খুলনা সদর থানাধীন সাত রাস্তার মোড়ে ঝটিকা মিছিলের চেষ্টা করে আ’লীগ। তবে বি এন পি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রতিহত করার জন্য শহরজুড়ে মটরসাইকেলযোগে শো-ডাউন দিয়ে যাচ্ছে ।
তবে হটাৎ আওয়ামীলীগের এমন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠাকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা কর্মীগন। এ বিষয়ে বি এন পি নেতা রয়েল বলেন, আওয়ামী লীগকে কোনো ভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া যাবে না। প্রশাসনকে আরো একটিভ হতে হবে। বয়রায় মিছিলের সময় স্থানীয় এক ব্যাক্তি বলেন, আমি ঘরে ছিলাম। হটাৎ শুনি চিৎকার হচ্ছে। নেমে দেখি আওয়ামী লীগের মিছিল দেওয়ার চেষ্টা করছিলো কিছু যুবক। তাদের কাছে অস্ত্র ও ছিল। প্রশাসন কেন এদেরকে ধরছে না। রুহুল আমিন নামক একজন বলেন, এদেরকে চিরুনী অভিযান দিয়ে ধরা উচিত। নইলে আমরা আতঙ্কে থাকবো।
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে এন সি পি। রোববার (২০ এপ্রিল) বিকেলে খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন এনসিপি খুলনার নেতা আহম্মদ হামীম রাহাত ও ডা. আব্দুল্লাহ চৌধুরী। তারা অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত ‘গণহত্যা ও সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত’ আওয়ামী লীগ খুলনার রাজপথে পুনরায় সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। এনসিপি নেতারা বলেন, ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানে বিতাড়িত এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর রাজপথে প্রত্যাবর্তন জাতির জন্য হুমকি। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় তারা বারবার উস্কানিমূলক কর্মসূচি দিচ্ছে। এ বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) উপ-কমিশনার মো. আবু তারেক জানান, মিছিলের স্থানটির সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে অংশগ্রহণকারীদের শনাক্ত করার কাজ চলছে । ইতোমধ্যে ২৫ জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।