কেসিসির পলাতক মেয়র খালেকের ঘনিষ্টজন ফ্যাসিস্ট এ্যানির অনিয়ম দুর্নীতির তদন্তে গঠিত কমিটির সদস্য রদবদল

# সাসপেন্ডের ৮ মাস পর জমা দিলো মোটরসাইকেল #
স্টাফ রিপোর্টারঃ খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) পলাতক মেয়র তালুকদার আঃ খালেকের ঘনিষ্টজন ও সহকারী কনজারভেন্সি অফিসার নূরুন্নাহার এ্যানির বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি তদন্তে গঠিত তদন্ত টিমের সদস্য রদবদল করা হয়েছে। তার দুর্নীতি আর অনিয়ম যেন শেষ নেই। এক বছরের ব্যবধানে তিনি এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেছেন। আট মাস আগে চাকুরি থেকে বরখাস্ত হলেও চাপের মুখে তিনি ১১মার্চ কেসিসির দেয়া মটর সাইকেল জমা দিয়েছেন। নানা অনিয়মের দায়ে কর্তৃপক্ষ এ্যানীকে গত ২১ আগস্ট’২৪ চাকুরি থেকে সাময়ীক বরখাস্ত করে। কেসিসির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এ তথ্য জানান। সূত্রগুলো জানায়, দুর্নীতিবাজ এ্যানীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্তে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। গত ৫ মার্চ কেসিসির সচিব শরীফ আসিফ রহমান এ কমিটি গঠন করেন। কেসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কোহিনুর জাহানকে আহবায়ক, কনজারভেন্সী অফিসার মোঃ অহিদুজ্জামানকে সদস্য সচিব ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা মারুফ রশিদকে সদস্য করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু কমিটি গঠন বিধি মোতাবেক না হওয়ায় ওই কমিটির একজন সদস্যকে বাদ দিয়ে কেসিসির ভেেেটরিনারি অফিসার ড. পেরু গোপাল বিশ্বাসকে নতুন করে সদস্য করা হয়েছে। কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কর তাজুল ইসলাম এ তথ্য দেন। ওই কমিটির সদস্য থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা মারুফ রশীদকে বাদ দেয়া হয়। গত ১৫ এপ্রিল এ কমিটি গঠন করা হয়। তবে কমিটি কত দিনে প্রতিবেদন জমা দিবে সে ব্যাপারে চিঠিতে কোন কিছু উল্লেখ করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, ফ্যাসিস্ট এ্যানী কেসিসির মটর সাইকেল জমা না দিয়ে এ মটর সাইকেল দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের পলাতক নেতা-কর্মীদের সংঘবদ্ধ করে চলেছেন। বিভিন্ন জায়গায় করছেন গোপন বৈঠক এই সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী। এই এ্যানী ছিলেন বয়রা মহিলা কলেজের ছাত্রলীগের নেত্রী। সেই সুবাধে তিনি সাবেক মেয়র তালুকদার আঃ খালেকের সানিধ্য লাভ করেন। হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। তিনি কোন যোগ্যতা ছাড়াই ভূয়া কাগজপত্র দিয়ে কেসিসিতে চাকুরি নেন। নিয়োগ বোর্ড তার চাকুরি না দিয়ে গেলেও খালেকের ক্ষমতার বলে তিনি চাকুরি পান বলে কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি উজ্জল কুমার সাহা জানান। তিনি বলেন, মশক নিধনের ওষুধ পাচারসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি ও চাকুরির বৈধ কাগজপত্র নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। সাবেক মেয়রের নাম ভাঙ্গিয়ে মাস্টাররোলে চাকুরি দেয়ার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে তার স্বামীর (মারুফ, ওয়াসার সহকারী প্রকৌশলী) মাধ্যমে টাকা নেন। একই পদে বেশী টাকা পেয়ে অন্যকে চাকুরি দেয়াকে কেন্দ্র করে ওই সময় বিষয়টি জানাজানি হয়। ইতোমধ্যে তাকে এসব অভিযোগে চাকুরি থেকে সাময়ীক বহিস্কার করা হয়েছে। কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কর তাজুল ইসলাম বলেন, নানা অভিযোগে চাকুরি থেকে সাময়ীক বহিস্কৃত নুরুন্নাহার এ্যানীর ব্যক্তিগত শুনানী শেষ হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্তে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, কেসিসির বরখাস্তকৃত সহকারি কনজারভেন্সী অফিসার নুরুন্নাহার এ্যানীর বিরুদ্ধে আনীত ৩/২৪নং বিভাগীয় মামলাটি তদন্ত করার জন্য এই কমিটি গঠন করা হয়। তবে কত দিন নাগাদ কমিটি তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করবেন তা উল্লেখ করেননি। অপর একটি সূত্র জানায়, দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত হওয়া এ্্যানির ব্যক্তিগত শুনানীতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে উপাস্থাপিত অভিযোগ নতুন করে তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করেছে। এ্যানির স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন নিরাপত্তা প্রহরী মোহাম্মদ আলী হাওলাদার। তিনি বলেন, তার ছেলে শাকিলকে এ্যানীর মাধ্যমে চাকুরি দেয়ার জন্য আয়নাল (এ্যানীর কাছের লোক) ৫০ হাজার টাকা নেন। ওই টাকা আয়নাল তার স্বামী ওয়াসার সহকারি প্রকৌশলী (সিভিল) শেখ মারুফুল হকের মাধ্যমে টাকা দেয়া হয়। তবে তার ছেলেকে চাকুরি না দিয়ে ৮০ হাজার টাকা পেয়ে আরমান নামের আরেকজনকে চাকুরি দেয় কেসিসিতে। এভাবে এ্যানী সরাসরি চাকুরি প্রার্থীদের নিকট থেকে টাকা না নিয়ে স্বামীর মাধ্যমে টাকা নিয়ে কেসিসিতে চাকুরি দেয় বলে ওই নিরাপত্তা প্রহরী অভিযোগ করেন। মারুফ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি ও তার স্ত্রী ষড়যন্ত্রে শিকার। কনজারভেন্সী অফিসার আনিস সাহেব এসব মিথ্যা তথ্য দিয়ে সবাইকে বিভ্রান্ত করছে বলে তিনি দাবি করেন। পতিত সরকারের দোসর ্এ্যানীর বিভাগীয় মামলায় উল্লেখ করা হয়, রেশমা খাতুন গং কর্তৃক গত ৭ আগস্ট’২৪ অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, তারা খুলনা সিটি কর্পোরেশনে আউট মৌর্সিং-এ বিভিন্ন কাজে শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। আপনি বিভিন্ন সময়ে তাদের অনেকের কাছ থেকে মাস্টাররোলে চাকুরী দেয়ার কথা বলে লক্ষাধিক টাকা ঘুষ নিয়ে আউট সোর্সিং এ চাকুরী দিয়েছেন। আউট সোর্সিং এ চাকুরী দিলেও তাদের ৩০ দিনের কাজ করিয়ে ১৫/২০ দিনের হাজিরা দেন। যার কারণে তারা যে পারিশ্রমিক পান তা দিয়ে তাদের সংসার নির্বাহ করা সম্ভব হয় না। এছাড়া আপনি সাবেক মেয়রকে বলে তাদের বেতন বৃদ্ধির আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। তারা আপনাকে বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে একাধিকবার তাগিদ প্রদান করলে আপনি রাগান্বিত হয়ে চাকুরী থেকে অব্যাহতি প্রদানের হুমকি দেন। এছাড়া তাদের পারিশ্রমিক নিয়েও আপনি টালবাহানা করেন। বিধায় তারা আপনার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেছেন। যেহেতু, আপনার এহেন কর্মকান্ডে ২০ আগস্ট’২৪ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ কেসিসি’র অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ক প্রতিনিধিরা ভীষণভাবে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আপনাকে চাকুরী হতে বরখাস্ত করার জন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেছেন। তাছাড়া আপনি মশক নিধনের যন্ত্রপাতি, তেল, মালামাল রুমে তালাবদ্ধ রেখে অননুমোদিত ভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার ফলে কঞ্জারভেন্সি শাখার কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে আপনার দায়িত্ব প্রাপ্ত স্থানের রুমের তালা ভেঙ্গে কঞ্জারভেন্সি মালামাল বের করে কঞ্জারভেন্সি শাখার কার্যক্রম চালানো হয়। এছাড়া আপনার বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগের কারণে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। এছাড়া আপনার সহকারী কঞ্জারভেন্সি অফিসার পদে চাকুরী পাওয়ার আবেদনে প্যারা মেডিকেল ডিপ্লোমা স্নাতকসহ পাঁচ বছরে অভিজ্ঞতা নেই, এছাড়া একই আবেদনের মার্জিনে আপনার চাহিত অভিজ্ঞতা নেই মর্মে দেখা যায়। আপনি ২০০৩ সালে এস.এস.সি পাশ করেন এবং ২০০৪ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেন। এতে প্রমাণ করে আপনি ভূয়া সনদপত্র দাখিল করে চাকুরীতে যোগদান করেন। আপনার এহেন অপরাধ খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকুরী বিধিমালা ১৯৯৩ এর ৩৮ (ক) (খ) এবং (ঙ) ধারায় বর্ণিত দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, পলায়ন এবং দুর্নীতি পরায়নের সামিল। আপনার এহেন কর্মকান্ডের জন্য কর্তৃপক্ষ আপনার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেহেতু, আপনি নূরুন্নাহার এ্যানি, পিতা-শেখ নুরুল ইসলাম, সহকারী কঞ্জারভেন্সি অফিসার, এর বিরুদ্ধে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকুরী বিধিমালা ১৯৯৩ এর ৩৮ (ক) (খ) এবং (ঙ) ধারায় বর্ণিত দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ ও দুর্নীতির অপরাধে অভিযোগ আনায়ন করা হলো। এ্যানী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে লিখিত এক অভিযোগপত্রে বলেন, আমার দীর্ঘ চাকুরী জীবনে বা তার পূর্বে আমি কখনই ফ্যাসিস্ট অপবাদের কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না। এমন কি পলাতক মেয়র আমার ঘনিষ্টজন নয়। ফ্যাসিস্ট শব্দ ব্যবহার করে মহল বিশেষের অপকর্ম ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশেষ করে কনজারভেন্সী অফিসার আনিসুর রহমান তার দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে আমার বিরুদ্ধে এসব প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। বর্তমানে কেসিসি হতে আমার বিষয়ে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। তবে কনজারভেন্সী অফিসার আনিসুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ্যানী তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট।