স্থানীয় সংবাদ

রূপসায় সন্ত্রাসী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বাড়িতে অভিযান ঃ একাধিক অস্ত্রসহ গ্রেফতার ৬

স্টাফ রিপোর্টার ঃ রূপসা উপজেলার আইচগাতী ইউনিয়নের দেয়াড়া গ্রামের কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হান্নানের বাড়িতে সেনা এবং নৌ বাহিনির যৌথ অভিযানে পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র ও তিনটি ধাঁরালো অস্ত্রসহ ছয় জন গ্রেফতার হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টার অভিযানে এ উদ্ধার-গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতার ছয় জন এবং পলাতক সন্ত্রাসী হান্নানের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। সন্ত্রাসী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা খুলনার আলোচিত শেখ বাড়ি ও খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সুজিত অধিকারীর ডান হাত বলে খ্যাত। বিগত হাসিনা সরকারের আমলে রূপসার গোটা আইচগাতি ইউনিয়নে সে ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। তাকে বলা হতো নব্য খুনি এরশাদ শিকদার। অভিযানে গ্রেফতারকৃতরা হলো, রূপসা উপজেলার মিলকি দেয়াড়ার মৃত শেখ নুরুদ্দীনের ছেলে মোঃ জাহিদুজ্জামান (৪৮), মোঃ জোনায়েদ (৫৫) ও মোঃ মোশারফ হোসেন (৪২); লুৎফর রহমানের ছেলে মোঃ মিজানুর মুন্সী(৪৩) ও আজানুর মুন্সি (৩৬), মৃত মোজাহার উদ্দীনের ছেলে জহির উদ্দীন (৩৬) । তারা সকলেই রূপসার দেয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশ জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে লেঃ কর্নেল মোহাম্মদ তাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ভোর রাত দু’ টা ১০ থেকে সকাল সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত অভিযান পরিচালিত হয়। তখন হান্নানের বাড়ি এবং জুনায়েদের ডক থেকে একটি ম্যাগজিনসহ নাইন এমএম পিস্তল, চারটি দেশি তৈরি পাইপগান, একটি চাইনিজ কুড়াল, একটি রামদা এবং একটি চাকু উদ্ধার হয়। রূপসা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় এসআই শরীফ বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখ কওে মামলা দায়ের করেছেন। তার ভিতরে একজন পলাতক রয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই খান ইমরান। আসামিদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে রিমা-ের আবেদন জানানো হবে বলে তিনি জানান। পলাতক সন্ত্রাসী হান্নানের অবস্থান কোথায়? তাদের হেফাজতে আরও অস্ত্র-গুলি আছে কিনা? এসব প্রশ্নের উত্তর জেনে উদ্ধার-গ্রেফতারের চেষ্টায় তাদেরকে পুলিশ হেফাজতে জ্ঞিাসাবাদের অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করা হচ্ছে। পলাতক সন্ত্রাসী হান্নান মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের নেতা ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সেচ্ছাসেবক লীগে যোগ দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে তিনি জুনিয়র এবং সিনিয়রদের নিয়ে পৃথক দুইটি সন্ত্রাসী বাহিনি গড়ে তোলেন। যারা ওই এলাকায় মাদক কারবার এবং খেজুরতলা ঘাট এলাকায় চোরাই তেল, কয়লা ও সারের কারবার নিয়ন্ত্রণ করতেন। স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্রমতে, হান্নানের বসত ঘরের পাশেই একটি কক্ষে লেদ মেশিন রয়েছে। সেখানে তারা দু’ ভাই দেশি অস্ত্র তৈরি করতেন। হান্নানের ব্যক্তিগত কারগোতে করে চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা ট্যাবলেটের বৃহৎ চালান এনে ওই অঞ্চলে মাদক কারবার পরিচালিত হতো। রূপসার দেয়াড়া গ্রামের নিয়ামুল করিম (৩৮)কে নৃশংসভাবে হত্যার পর হান্নান বাহিনি নিজেদের অপশক্তির জানান দেন। গত ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বিকেলে হান্নান গ্রুপের সন্ত্রাসীরা নিয়ামুলকে খেজুরতলা ঘাট এলাকায় গাছে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সকালে তার মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা এলাপাতাড়ি পিটিয়ে হত্যাকা-ের দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করলেও কেউ বাঁচাতে যেতে সাহস পায় নি। ওই ভিডিও সিডি আকারে পুলিশ সংরক্ষণ করে। নিহতের পিতা শেখ সাইদুল করিম ১৩ জনের নাম উলে¬খসহ অজ্ঞাত ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এছাড়া হান্নানের বিরুদ্ধে আরও একটি অস্ত্র ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button