স্থানীয় সংবাদ

মাউশির ৬৩ টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চার মাস ধরে বেতন বন্ধ মানবতা জীবনযাপন

কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি ঃ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অধীনে থাকা ৬৩টি বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে স্থানান্তরের নামে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারে (ইএফটি) যুক্ত করেনি মাউশি। ফলে ২৪-এর নভেম্বর থেকেই বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না ওই সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। চিঠি চালাচালি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বেতন বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তারা। ভুক্তভোগী শিক্ষকরা বলছেন, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত চার মাসের বেতন তারা এখনো পাননি। এমনকি ঈদ বোনাস, বৈশাখী ভাতাও পাননি। কবে পাবেন বেতন, তাও জানেন না এসব শিক্ষক।
জানা গেছে, দেশে ১৯৯৫ সালে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্তির কাজ শুরু হয়। প্রথমে এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অধীনে। পরে ২০০৯ বা ২০১০ সালের দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেয়, বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বেতন-ভাতা মাউশি দেবে না, এসব প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর দেবে। সে সময় মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে মাউশি এসব প্রতিষ্ঠান কারিগরিতে স্থানান্তর করে। তখন ভুলক্রমে প্রায় ১৫০টি প্রতিষ্ঠান মাউশিতে থেকে যায়। পরে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে অনেক প্রতিষ্ঠানকেই কারিগরিতে আবার স্থানান্তর করা হয়। সর্বশেষ ৬৩টি প্রতিষ্ঠান মাউশিতেই থাকে এবং এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দিয়ে আসছে মাউশি।এদিকে ২০২৪ সালের নভেম্বরে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) চালু হয়। নতুন এ পদ্ধতিতে বেসরকারি এমপিওভুক্ত কারিগরি ৬৩টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা যুক্ত হতে পারেননি। তখন ইএফটিতে যুক্ত করতে মাউশিতে যোগাযোগ করেন এসব শিক্ষক। এর মধ্যে ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকেই সবার বেতন বন্ধ হয়ে যায়। পরে ওই মাসেই মাউশি এই ৬৩ প্রতিষ্ঠানের তালিকা করে ও মতামত চেয়ে একটি চিঠি পাঠায় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরকে। এসব চিঠি চালাচালির মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ও শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।সর্বশেষ রোববার (২০ এপ্রিল) কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে দেখা করেন ৬৩টি বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। ওই দিনই মাউশির মহাপরিচালকের সঙ্গে কারিগরির মহাপরিচালক কথা বলেছেন বলে জানা গেছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার কারিগরি প্রতিষ্ঠানে একজনশিক্ষক বলেন চার মাস বেতন বন্ধ আমরা খুবই কষ্ঠে আছি রাজশাহি বিভাগের কারিগরি ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ,মোবাইল ফোনে বলেন‘আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও আমাদের এক অধিদপ্তর থেকে অন্য অধিদপ্তরে দেওয়ার নাম করে চার মাস ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে। আমরা খুবই কষ্টে আছি। ইএফটি চালু হওয়ার পর মাউশির অধীনে থেকেও এ পদ্ধতিতে যুক্ত হতে পারিনি। আমাদের এই ৬৩টি প্রতিষ্ঠান অন্য অধিদপ্তরে স্থানান্তর করা হচ্ছে জানিয়ে মাউশি আমাদের ইএফটিতে যুক্ত করেনি। আমরা কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে দেখা করেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। এখন আমরা অপেক্ষায় আছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুলনা বিভাগের কারিগরি প্রতিষ্ঠানের প্রধান মোবাইল ফোনে বলেন, ‘মাউশি নিয়ন্ত্রিত ৬৩ কারিগরি প্রতিষ্ঠান চার মাস ধরে বেতন, ঈদ বোনাস, বৈশাখী ভাতা কিছু পাইনি। এ ৬৩টি প্রতিষ্ঠানের বিল মাউশি থেকে হতো। এখন বলছে এ বিল কারিগরি অধিদপ্তর দেবে। অধিদপ্তর পরিবর্তনের নামে আমাদের বেতন-বোনাস সব আটকে আছে।
জানতে চাইলে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) শোয়াইব আহমাদ খান বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি। তবে বিষয়টি নিয়ে আমাদের এমপিও শাখা কাজ করছে।’
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খোরশেদ আলম (এমপিও) বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) আমাদের বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের তালিকা দিয়েছে, কিন্তু শিক্ষকদের তালিকা দেয়নি। তাই আমরা শিক্ষকদের নাম-পদবি চেয়ে তালিকা চেয়েছি। আমাদের তো আর বাজেট নেই। মন্ত্রণালয়ের কাছে আমরা বাজেট চাইব। বাজেট দিলে আমরা বেতন দিতে পারব। এটা কবে হবে তা বলতে পারব না।’
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর মাউশিকে যে বাজেট দিয়েছিল, তা কারিগরি অধিদপ্তরকে দিতে বলেছিলাম। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে সংসদের অনুমতি ছাড়া এক মন্ত্রণালয়ের টাকা আরেক মন্ত্রণালয়কে দেওয়া যাবে না। যেহেতু সংসদ চালু নেই, তাই এটা দেওয়া সম্ভব নয়। কারিগরি থেকে বেতন দিতে হবে। কারিগরিতে তো আর বাজেট নেই। আমরা মাউশি থেকে ৬৩ প্রতিষ্ঠানের জনবল, মাসিক বেতন ও খরচের হিসাব দিলে মন্ত্রণালয়ের কাছে নতুন করে বাজেট চাইব। তখন বেতন-ভাতা দিতে পারব।’

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button