খুলনায় আইনগত সহায়তা দিবসের র্যালীতে ফ্যাসিস্ট আইনজীবীদের সামনের সারিতে উপস্থিতি নিয়ে তোলপাড়

স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনায় আইনগত সহায়তা দিবস নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে। সোমবার সকাল ৯টায় র্যালী, পরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি এ সভার আয়োজক। সভাপতিত্ব করেন কমিটির চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ চাঁদ মোহাম্মদ আব্দুল আলিম আল রাজি। অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশিনার ফিরোজ সরকার, মহানগর দায়রা জজ মোঃ শরীফ হোসেন হায়দার, জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম, চীফ ম্যাট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আকরাম হোসেন। জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা সহকারি জজ ফারাহ দিবা ছন্দা সরকারিভাবে আইনী সহায়তার ভূমিকা তুলে ধরেন। সঞ্চালনায় ছিলেন অন্যন্যা রায়। তবে বক্তারা এই সংস্থার সেবার বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার প্রচারণা চালানোর ব্যাপারে মত দেন। এদিকে মাত্র কিছুদিন আগে পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার দাবিতে খুলনা জেলা প্রশাসকের দপ্তর অবধি চলে গিয়েছিলেন স্মারকলিপি নিয়ে। তবে বিষয়বস্তু জানার পর তাদেরকে কড়া সতর্কবার্তা দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে ওই গ্রুপটি নদীতে নৌকায় চড়ে একই দাবিতে মানববন্ধন করে। আর সোমবার জাতীয় আইন সহায়তা দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধনী পর্বের র্যালীর প্রথম কাতারে ছিল তাদের অবস্থান। জাতীয় লিগ্যাল এইড কমিটি অর্থায়নে ক্রয়কৃত হলুদ শাড়ি তাদের পরনে, হাতে বর্ণিল কুলায় নানা শ্লোগান। তবে হঠাৎই পরিস্থিতি পাল্টে যায়, যখন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ আইনজীবীরা কর্মসুচিতে আসেন। আদালত অঙ্গনে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে চিহ্নিত, বিগত দিনে পিপি, এপিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এই সব নারী আইনজীবীদেরকে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে প্রথম কাতারে দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন অনেকেই। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে দ্রুত তাদেরকে সরিয়ে দিয়ে অন্যদেরকে সামনে এনে র্যালী শুরু করা হয়। তবে এ নিয়ে চলতে থাকা নানা সমালোচনা। খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাড. নুরুল হাসান রুবা বলেন, কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে দেখি আওয়ামীপন্থী নারী আইনজীবীরা সেজেগুজে প্রথম কাতারে দাঁড়িয়ে আছে। বিগত দিনে এরা পালিয়ে যাওয়া আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. সাইফুলের সহযোগী ছিল। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিল। আদালত প্রাঙ্গনে আওয়ামী লীগের হয়ে নানা অনিয়ম করেছে। স্বাভাবিক ভাবেই সাধারণ আইনজীবীরা মারাত্মক ক্ষুব্ধ হন। অবশ্য পরে তাদেরকে সরিয়ে অন্যদের দিয়ে র্যালী করা হয়। এসব কর্মসূচীর কোন বিষয়ই আইনজীবী সমিতিকে অবগত করা হয়নি। নেয়া হয়নি কোন মতামত। এর সব কিছু করেছেন লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা। এমন কি আলোচিত রূপান্তর নামক এনজিও পট গান দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করা হয়। এসব কর্মকান্ড ছিল খুবই দুঃখজনক। এড. বাবুল হাওলাদার বলেন, মিছিলে আওয়ামী আইনজীবীদের মধ্যে রুমানা তানহা। যিনি আ’লীগের ক্ষমতাবলে তিনি হয়েছেন ল কলেজের শিক্ষক। এড. সাইফুলের বন্ধু এড. এনামুলের জুনিয়ার সাবেক এপিপি শাম্মী আক্তার, সাবেক এপিপি আক্তারুন্নেসা তিতাস, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য লিপি চৌধুরী, সাবেক এডিশনাল পিপি রিক্তা লতা পালিত, আওয়ামী আইনজীবী শিপ্রা বিশ্বাস, সাবেক এডিশনাল পিপি শিরিন লিপি, সাবেরা সুলতানা, খাদিজা তুলু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তাদের পরিহিত শাড়ি ও সাজানো কুলা কর্মসূচির ফান্ডে কেনা হয়েছে। কর্মসূচি সাজানোর ক্ষেত্রে আইনজীবী সমিতির মতামত নেয়া হয়নি। মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কো অর্ডিনেটর এড. মোমিনুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। যারা বিগত দিনে আইনী পেশাকে নানাভাবে কুলুষিত করেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে তারা র্যালীর সামনের সারিতে সেজে গুজে। তাৎক্ষণিক বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে তাদের সরিয়ে সাধারণ আইনজীবীদের নিয়ে র্যালী করা হয়। খুলনা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ফারাহ দিবা ছন্দা জানান, ঘটনাটি সিরিয়াস কিছু নয়। প্যানেল আইনজীবীদের কাছ থেকে র্যালীতে অংশগ্রহণকারীদের নাম আসে। সেভাবেই তাদের র্যালীতে রাখা হয়। র্যালীর শুরুতে কয়েকজনকে নিয়ে আইনজীবীরা আপত্তি তুললে আমরা তাদেরকে বাদ দিয়ে কর্মসূচি করেছি। পরে সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। কর্মসূচীতে হিজড়া সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করা সংগঠন বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি খুলনা টিম অংশ নেয়।