বৈঠা আর জালে ভবিষ্যতের স্বপ্ন বোনে উপকূলের শিশুরা

# আজ মহান মে দিবস #
রিয়াছাদ আলী, কয়রা (খুলনা) ঃ মাত্র ১৫ বছর বয়সেই পরিবারের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছেন আলমগীর। যখন তার সম বয়সীরা বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যায়, খেলাধুলায় মেতে থাকে, ঠিক তখনই আলমগীর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাতে বৈঠা আর জাল নিয়ে সুন্দরবনে যায় মাছ ও কাঁকড়া ধরতে। শুধু আলমগীর নয় অভাব অনাটনের মধ্যে পরিবারের হাল ধরতে তার মতো উপকুলীয় কয়রার নদী তীরবর্তী অনেক শিশু বয়সী সন্তানরা সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে গহীন সুন্দরবনে যায়। আর সুন্দরবনের আয় রোজগারে চলে তাদের সংসার। সংসারের ঘানি টানতে অন্যর নৌকায় এসব শিশুরা কঠোর পরিশ্রম করে শ্রমের বিনিময় অর্থ উপার্জন করে তা দিয়ে তারা সংসার চালায়। আলমগীরের বাড়ি কয়রা উপজেলার ৫নং কয়রা গ্রামে। সে তার মা বোনদের নিয়ে পাউবোর রাস্তার উপর ঝুপড়ি বেধে সেখানেই বসবাস করে। জমি জমা বলতে তাদের কিছু নেই। বনে গিয়ে যা আয় রোজগার হয় তাই দিয়ে চলে তাদের সংসার। জানা গেছে, উপকুলীয় জনপদ খুলনার কয়রার নদী তীরবর্তি এলাকার গরীব অসহায় পরিবারের সদস্যরা সুন্দরবনে হাড়ভাঙ্গা প্ররিশ্রম করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এ সকল শিশুদের যে বয়সে বই-খাতা নিয়ে তাদের স্কুলে যাওয়ার কথা, সেই বয়সে তারা অন্যর সঙ্গে সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে যায়। অভাব অনটনের কারণে তারা স্কুলে যেতে পারেনা। আলমগীরের সাথে কথা হলে সে জানায় তার বাবা বেঁেচে নেই। এখন চার সদস্যের পরিবারের হাল ধরেছে সে। এই বয়সেই সে মাছ ও কাঁকড়া ধরায় দক্ষ হয়ে উঠেছে। রোদ-ঝড়-বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে, বনদস্যু আর বাঘের ভয়কে তুচ্ছ করে সুন্দরবনে গিয়ে দক্ষতার সঙ্গে মাছ ও কাঁকড়া ধরে সে। মাছ ধরা ছাড়াও ছেড়া জাল ঠিক করতে হয় স্বহস্তে। শুধু আলমগীর নয়, তার মতো শত শত শিশু সুন্দরবনে গিয়ে মাছ ও কাঁকড়া ধরে সংসার চালায়। কয়রা উপজেলার অসংখ্য জেলে পরিবারের এসব শিশু সংসারে সহায়তা করতে সুন্দরবনে যায় মাছ ধরতে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে এবং শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও অভাবের কারণে সব চেষ্টাই বিফল হচ্ছে। ঐ গ্রামের আকবার হাওলাদার (১৪) জানায়, সে ঠিকমতো খেলাধুলা করার সময় পায়নি। স্কুলে যাওয়ার সুযোগও হয়নি। নদী, নৌকা আর মাছ ও কাঁকড়া নিয়েই সময় কেটেছে তার। নদীতে জাল ফেলা, কৌশল করে মাছ সহ জাল টেনে তোলা এবং ছেড়া জাল মেরামত করা সব কিছুই সে শিখেছে তার পিতার কাছ থেকে। সে জানায়, নিজে স্কুলে যেতে পারেনি, কিন্তু আরও ৬ ভাই আর ২ বোন রয়েছে তার। তাদেরকে স্কুলে পাঠাতে চায় সে। আকবারের মা রাবেয়া খাতুর বলেন, তাদের কোনও জমিজমা নেই। রোজগার করেই সংসার চালাতে হয়। সংসার অনেক বড় হওয়ায় স্বামীর একার পক্ষে তা চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। অভাব ঘোচাতে ছেলেদেরকে দিয়ে মাছ ধরানো হয়। আকবারের লেখাপড়া শেখার আগ্রহ ছিল, কিন্তু অভাব অনটনের কারণে হয়নি। তার ছেলেরা মাছ ও কাঁকড়া ধরতে পারলেই পেটে ভাত পড়ে তাদের। স্থানীয় ইউপি সদস্য সরদার নাজমুস সাদাত বলেন, ‘সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় শিশুশ্রমের প্রচলন রয়েছে। শিশুশ্রম বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব পরিবারকে সহযোগিতার পরিকল্পনা রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ সহ সরকারি কিংবা বেসরকারী সংস্থার মাধ্যমে।’ উপজেলা শিক্ষা অফিসার তপন কুমার বর্মন বলেন, ‘গরিব পরিবারের শিশুদের লেখাপড়ার জন্য সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। বিভিন্ন সময় বিদ্যালয় কেন্দ্রিক অভিভাবক সমাবেশ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতার মাধ্যমে ঝরে পড়া শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।