ভিডিও ধারন করায় সাংবাদিকের উপর হামলা : দায়-সারা ভূমিকায় পুলিশ

# খালিশপুরে শহীদ মিনারের জমি দখল করে হোটেল ব্যবসা #
স্টাফ রিপোর্টার: বাঙ্গালী জাতির পরম আবেগের স্থান শহীদ মিনার। আর সেই শহীদ মিনারসহ সরকারী সম্পত্তি দখল করে খালিশপুর নেভী চেক পোস্ট মোড় এলাকায় চলছে রমরমা হোটেল ব্যবসা।আর এই সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে অতর্কিত হামলার স্বীকার হন খুলনার তিন সংবাদকর্মী। আজ ১০ মে শনিবার সকাল সাড়ে ১১ টায় নগরীর খালিশপুর থানাধীন নেভি চেকপোষ্ট মোড়ে ১৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ অফিসের পাশে শহীদ মিনার সংলগ্ন স্থানে ঘটনাটি ঘটে।জানা যায়, নেভী চেক পোস্ট মোড় এলাকার রেলওয়ের সরকারি জায়গা ও শহীদ মিনারের একাংশ দখল করে হোটেল ব্যবসা শুরু করে স্থানীয় বি এন পি নেতা।সেই তথ্যের ভিত্তিতে সরেজমিনে অনুসন্ধান করতে যান দৈনিক প্রবাহ ও বিজনেস বাংলাদেশ পত্রিকার জেষ্ঠ সাংবাদিক মামুন রেজা হাওলাদার, বিজয় টেলিভিশনের আব্দুর রাজ্জাক ও জাতীয় দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার সাংবাদিক শেখ শান্ত ইসল্মা।ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পর এলাকাবাসীর সাক্ষাৎকার নেয় তারা। এসময় ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র সদস্য ও সাংবাদিক পরিচয়দানকারী মো: ওয়াহিদ হাসানসহ কয়েকজন ঐ তিন সাংবাদিকের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। সাংবাদিকদের উপর এ হামলার ভিডিও মুহূর্তে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ায় সৃষ্টি হয়েছে নানা আলোচনা। স্থানীয়রা জানান, ওয়াহিদ হাসান নামক এই ব্যক্তি নিজেকে যশোর বার্তা নামে একটি পত্রিকার সাংবাদিক ও বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে একাধিক জায়গা দখল করে করে নেয়। ৫ ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর তার বিরুদ্ধে লুটপাট, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অনেক অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি নেভি চেকপোষ্ট মোড় সংলগ্ন ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ অফিসের পাশে রেলওয়ের সরকারি সম্পত্তি দখল করে নেয় ওয়াহিদ । প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ আওয়ামী লীগ অফিসের পাশে সংবাদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে যান তিন সংবাদ কর্মী । এ সময় রেলের সম্পত্তি ও শহীদ মিনারের একাংশ দখল করে অবৈধভাবে হোটেল স্থাপনের ভিডিও ধারণ করায় বাধা দেয় ও এক পর্যায়ে মোবাইলটি ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে ওয়াহিদ নামে ওই ব্যক্তি। দৈনিক প্রবর্তন ও বিজয় টেলিভিশনের সাংবাদিক মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ওয়াহিদ হাসান সহ কয়েকজন। এসময় দৈনিক প্রবাহ ও বিজনেস বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মামুন রেজা ঠেকাতে গেলে তার মাথা, গলা-পিঠে এলোপাথাড়ি কিল ঘুসি মারে। সময়ের আলো পত্রিকার সাংবাদিক শেখ শান্ত মারপিটের ভিডিও করায় তার ওপর ও হামলা চালায়।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা শহিদুল বলেন, দীর্ঘ তিন বছর শহীদ মিনারের জায়গা দখল করে হোটেল চালিয়ে আসছে ওয়াহিদ হাসান ও ১৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সদস্য মোঃ আলী আজিম রানা।
১ নং নেভি চেকপোস্ট মসজিদের খাদেম বলেন, তিন বছর পূর্বে মসজিদ কমিটির সভাপতি টিটু ১৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ আলী আজিম রানাকে এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক করেন । এরপর থেকেই তিনি এই মাদ্রাসার বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আসছে।
এ ঘটনায় খুলনার সকল সংবাদ কর্মী ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে খুলনা মহানগর বিএনপি’র সভাপতি শফিকুল আলম মনাকে জানানো হলে তিনি বলেন, সংবাদ কর্মীর গায়ে হাত
দেওয়াটা অনেক বড় অন্যায় । লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ বিষয়ে খালিশপুর থানা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ আলী বাবু বলেন, সংবাদ সংগ্রহের কাজে বাধা প্রদান ও মারপিট করা কোনভাবেই শোভনীয় আচরণ নয়।
এ বিষয়ে সাংবাদিক মামুন রেজা বলেন, শহীদ মিনার বাঙালি জাতির একটি আবেগের অংশ। আমরা গোপন তথ্যে জানতে পারি একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু লোক শহীদ মিনারের কিছু অংশ ও রেলওয়ের সম্পত্তি দখল করে রেখেছে। রানা নামে আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে দিয়ে দখলীয় এই জায়গার দেখাশোনা করে অভিযুক্ত ওয়াহিদ। আমরা অবৈধ দখলের এই ভিডিও করতে গেলেই হামলার শিকার হই। এ বিষয়ে খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের নিকট গেলে তিনি একটি অভিযোগ দায়ের করতে বলেন। তবে ঘটনার মোড় ঘুরাতে অভিযুক্ত অহিদসহ কয়েকজন থানায় এসে মিথ্যা অভিযোগ করার চেষ্টা করে।
তবে ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে কেএমপির পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের নিকট সাক্ষাৎ করেন কয়েকজন সংবাদ কর্মী। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ও নিরপেক্ষ সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।