স্থানীয় সংবাদ

দাকোপে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় ৩১ জনের নামে মামলা : আটক ২ জন

দাকোপ প্রতিনিধি ঃ খুলনার দাকোপে খাল ইজারাকে দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ৩ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন। থানা পুলিশ উভয় গ্রুপের সংঘর্ষে ঘটনার কবলে পড়া এক পুলিশ কর্মকর্তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মঙ্গলবার ভোরে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানা পুলিশ বাদী হয়ে উভয় পক্ষের মোট ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫০ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,দাকোপ উপজেলা বিএনপিতে বর্তমানে দুটি গ্রুপে বিভক্ত রয়েছে। একটি পক্ষের নেতৃত্বে আছেন চালনা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মোজাফফর হোসেন। অপর পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন খুলনা জেলা বিএনপি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শাকিল আহমেষ দিলু।
গত ১২ মে সোমবার বেলা ১২ টার দিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে চালনা পৌরসভার খলিশা ও বাজুয়া ইউনিয়নের বিল ডাকাতিয়া খালের ইজারাকে ভুমি অফিসের মধ্যে দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে দুই গ্রুপের লোকজন অফিস থেকে বের হয়ে আসে। এঘটনা নিয়ে চালনা ডাকবাংলো মোড়ে দুই গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে দুপুর আনঃ ১টা নাগাদ উত্তেজনার বিষয়টি কিছুটা থেমে গেলেও দুই গ্রুপের চলছিলো চাপা উত্তেজনা। এ কারণেই তাৎক্ষনিক ভাবে ইজারা কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত রেখেছে ভূমি অফিস।
এ উত্তেজনাকে কেন্দ্র সোমবার বিকাল ৫টায় উপজেলা সদর চালনা ডাকবাংলো মোড়ে স্থানীয় বিএনপির দুই গ্রুপের দেশীয় তৈরী লাঠি সোটা নিয়ে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ উভয় গ্রুপের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে ইটের আঘাতে দাকোপ থানা পুলিশের (এএসআই) আজাহার উদ্দিনের কপালের বাম পাশের হাড় ভেঙে যায় এবং জ্ঞান হারিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে রক্তাক্ত অবস্থায় নুয়ে পড়েন। এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় থানা পুলিশের মধ্যে অন্যান্য যারা আহত হয়েছেন তারা হলেন পুলিশের (এস,আই) মনোয়ার হোসেন তালুকদার ও পুলিশ সদস্য শুভ চৌধুরী বিশ্বাস।
এ ছাড়া সংঘর্ষে বিএনপির দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে আহত হয়েছে ইব্রাহীম বিশ্বাস, সোহেল সরদার, মিজানুর রহমান, বাচ্চু ফকির, মাহাবুর শেখ।
এদিকে সোমবার দাকোপের পৃথক পাঁচটি কলেজ ছাত্রদলের কমিটি গঠনের জন্য বাজুয়া ইউনিয়নের বাজুয়া এসএন কলেজে সভাপতি/সম্পাদক পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচন কেন্দ্র করেও উভয় পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। নির্বাচনের ফলাফল শেষে দুপুরের দিকে চালনায় ফিরে আসার পথিমধ্যে পশ্চিম বাজুয়ার সড়ক পথে সংঘর্ষে জড়ায় দুই গ্রুপ। আর এ পৃথক দুইটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তী বিকালে বড় ধরণের সঘর্ষের দিকে দুইটি গ্রুপের নেতাকর্মীরা জড়িয়ে পড়েন।
সংঘর্ষের বিষয় নিয়ে চালনা পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ মোজাফফর হোসেন বলেন, শেখ শাকিল আহম্মেদ দিলু এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসিত করছেন। তাঁর ভাই পানখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা। আওয়ামী লীগের কিছু লোক আমাদের মধ্যে ঝামেলা বাঁধানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।’
জেলা বিএনপির সদস্য শেখ শাকিল আহমেদ দিলু বলেন, সোমবার দুপুরের দিকে ডাকবাংলা মোড়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনেই এক দফা মারামারি হয়, আমরা যতটুক সম্ভব ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলাম। বিকেলে বাজুয়া এসএন কলেজ থেকে যখন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা চালনায় ফিরছিলেন, তখন মোজাফফর হোসেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই দলবল নিয়ে ব্যারিকেড দেন। তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগের খোরশেদ মেম্বরের (ইউপি সদস্য) নিজের দলবল ছিল। সেখানে মারামারি শুর হয়।
থানা পুলিশ সুত্র জানাগেছে, সংঘর্ষের ঘটনায় থানা পুলিশ ঘটনার দিন আবু সাইদ শেখ এবং মোঃ বদিয়ার শেখ নামে দুইজনকে আটক করে আজ মঙ্গলবার জেল হাজতে প্রেরণ করছেন বলে জানাগেছে। এ ঘটনায় সোমবার রাতে বিএপির দুই গ্রুপের ৩১ নেতাকমী ও অজ্ঞাত ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের।
এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সি সার্কেল) মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আজাহার উদ্দিনকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। বর্তমানে এলাকাটির পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। সেখানে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button