স্থানীয় সংবাদ

দেশের পাট উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে ‘খুলনাঞ্চল’

# চলতি অর্থ বছর ২০২৫-২০২৬’র আওতায় খরিপ-১ মৌসুম #
# চলতি মৌসুমে ৪ জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৩৯,৮৫৭ হেক্টর জমি #
# সর্বশেষ তথ্যনুসারে পাট চাষাবাদের অগ্রগতি ৩৮০৭৮ হেক্টর জমি #
# গত বছরের তুলনায় এবছর বাড়তি ১৪৭১ হেক্টর জমিতে আবাদের টার্গেট নেওয়া হয়েছে #

মোঃ আশিকুর রহমান ঃ পাট বাংলাদেশের একটি অর্থকরী ফসল, যা ‘সোনালী আঁশ’ নামে খ্যাত। বাংলাদেশের জলাবায়ূ ও মাটি পাট চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এপ্রিল মাসে প্রথম সপ্তাহ হতে লক্ষ্যমাত্রানুসারে পাটের বপণ শুরু হয়। খুলনাঞ্চলে পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলতি ২০২৫-২৬ খরিপ- ১ মৌসুমে পাটের বপণ শেষে এখন সঠিক পরিচর্চা, সার ও কীটনাশক প্রয়োগসহ নিবিড় পরিচর্চার চলমান রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী জুলাই মাসের মাঝামাঝি হতে শুরু করে সপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে কর্তন করা সম্ভব হবে এবং গৃহিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই অঞ্চল সক্ষম হবে, যা পাট উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনাঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, খুলনাঞ্চলে পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলতি ২০২৫-২৬ খরিপ- ১ মৌসুমে পাটের আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চল। ওই লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে চলতি বছরে খুলনাঞ্চলের ৪ জেলায় (দেশি, তোষা ও মেস্তা জাতের পাট) খুলনা জেলায় ১ হাজার ৪৪৭ হেক্টর, বাগেরহাট জেলায় ১ হাজার ৯৬০ হেক্টর, সাতক্ষীরা জেলায় ১২ হাজার ৫৫০ হেক্টর ও নড়াইল জেলায় ২৩ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সোমবার (২০ মে) সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সর্বশেষ তথ্যনুসারে পাটের আবাদের অগ্রগতি হয়েছে খুলনা জেলায় ১ হাজার ১৮৭ হেক্টর, বাগেরহাট জেলায় ১ হাজার ৯০৬ হেক্টর, সাতক্ষীরা জেলায় ১১ হাজার ৪৮৭ হেক্টর ও নড়াইল জেলায় ২৩ হাজার ৪৯৮ হেক্টর চাষাবাদ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি ২০২৫-২৬ খরিপ- ১ মৌসুমে খুলনাঞ্চলে পাটের আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সর্বমোট অগ্রগতি হয়েছে ৩৮ হাজার ৭৮ হেক্টর, শতকরার হার ৯৫.৫%। উল্লেখ্য, গত, ২০২৪-২০২৫ খরিপ- ১ মৌসুমে সংশ্লিষ্টরা পাটের আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করে ৩৮ হাজার ৩৮৬ হেক্টর, অর্জিত হয়ে ছিল ৩৯,৩৪৪ হেক্টর। চলতি খরিপ-১ মৌসুমে খুলনাঞ্চলে গত বছরের তুলনায় আরো ১ হাজার ৪৭১ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যামাত্রা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।
নড়াইল কালিয়া উপজেলার জোকারচর গ্রামের কৃষক তৈয়েবুর কাজী জানান, আমি প্রায় ৪ একর জমিতে তোষা জাতের পাটের চাষ করেছি। প্রতি বছরই পাটের চাষাবাদ করি। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর পাটের চাষ কম করেছি। এপ্রিলের মাঝামাঝি পাটের চাষাবাদ শুরু করি। প্রথমে জমি প্রস্তুতি করি, অতঃপর সার ছিটিয়ে বীজ বপন করি। এপ্রিল মাসে বেশ গরম থাকে, বৃষ্টির আনাগোনা কম। সে জন্যই বৃষ্টির পানির বিকল্প হিসাবে সেচের ক্ষেতে পানি দিয়েছে। জুলাই মাসের মাঝামাঝি পাট কাটা শুরু করি। এ বছর পাট বপণ একটু দেরিতে হওয়ায়, সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে পাট কর্তন শুরু হবে।
দিঘলিয়া উপজেলার গাজিরহাট ইউনিয়নের কৃষক শাহবুদ্দিন জানান, এ বছর ৫ হেক্টর জমিতে পাটের চাষাবাদ সম্পন্ন করেছি। পাটের বপণ শেষে এখন সঠিক পরিচর্চা, সার ও কীটনাশক প্রয়োগসহ নিবিড় পরিচর্চা অব্যহত রেখেছি। বৃষ্টির পানির বিকল্প হিসাবে সেচের ক্ষেতে পানি দিয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস হতে সার্বিক বিষয়ে সহয়তা করে থাকেন।
কালিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আমিরুল ইসলাম জানান, আমার সালামাবাদ ইউনিয়নে ধুসহাটি, বিল বাউচ, বলাডাঙ্গা ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে ১৫০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষাবাদ হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলে মাঝামাঝি পাটের চাষাবাদ শুরু হয়েছে, যা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বপনের পর এখন আগাছা দমন, গাছের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য পাতলাকরণ, রাসায়নিক সার প্রয়োগ, রোগ ও পোকামাকড় দমনসহ বিবিধ কাজ চলমান আেেছ। যেহেতু এপ্রিল মাসে তেমন বৃষ্টির দেখা না পাওয়ার কারণে পানির বিকল্প হিসাবে সেচ প্রয়োগ করা হচ্ছে। ধারাবাহিক এই কার্যক্রম অব্যহত আছে। আগামী জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ হতে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত হতে পাট কর্তন শুরু হবে।
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কিশোর আহম্মেদ জানান, দিঘলিয়া উপজেলায় পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলতি ২০২৫-২৬ খরিপ-১ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৫০ হেক্টর জমি। ওই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে উপজেলায় (তোষা জাতের) পাটের আবাদের অগ্রগতি হয়েছে ৪৫ হেক্টর। ইতোমধ্যে পাটের বপণ শেষে এখন সঠিক পরিচর্চা, সার ও কীটনাশক প্রয়োগসহ নিবিড় পরিচর্চার চলমান রয়েছে। পাট উৎপাদনে উপজেলার কৃষিদের সার্বিক বিষয়ে সহয়তা করা অত্র উপজেলা কৃষি অফিস হতে।
নড়াইল কালিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার ইভা মল্লিক জানান, কালিয়া উপজেলাতে চলতি অর্থবছরে পাটের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৪৪১০ হেক্টর। ইতোমধ্যে আবাদের অগ্রগতি হয়েছে ৪৪০৮ হেক্টর। পাট উৎপাদনে উপজেলার কৃষিদের সার্বিক বিষয়ে সহয়তা করা অত্র উপজেলা কৃষি অফিস হতে।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চল খুলনার অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম জানান, চলতি ২০২৫-২৬ খরিপ-১ মৌসুমে পাট আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ইতোমধ্যে নির্ধারন করা হয়েছে। খুলনাঞ্চলে পাট আবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৩৯৮৫৭ হেক্টর জমি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ইতোমধ্যে এই অঞ্চলে আবাদের অগ্রগতি হয়েছে ৩৮০৭৮ হেক্টর, যার হার ৯৫.৫%। চলতি মৌসুমে খুলনাঞ্চলে গত বছরের তুলনায় আরো ১ হাজার ৪৭১ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। আশাকরি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গৃহিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই অঞ্চল সক্ষম হবে, যা পাট উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button