ঈদে বেতন-বোনাস হয়নি ১২শ’ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর

# ভিসি নেই খুলনার দুই পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে #
স্টাফ রিপোর্টার ঃ এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) নেই খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় (কুয়েট) এবং খুলনা মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে। ভিসি না থাকায় এ দুই পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন-বোনাস শিট স্বাক্ষর হয়নি। ফলে আসন্ন ঈদুল আযহা নিরানন্দের হয়ে ধরা দিয়েছে তাদের জন্য।
জানা গেছে, কুয়েট যাত্রা শুরু করেছিল ২২ বছর আগে। বিশ^বিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বেতন-বোনাসবিহীন ঈদ পালন করতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। এতে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের চাপে পড়তে না হলেও হতাশা বিরাজ করছে কর্মচারীদের পরিবারে। সামান্য বেতনে চাকরী করা কুয়েটের প্রায় সাড়ে চারশ’ কর্মচারীকে চলতে হয় বেতনের অর্থ দিয়ে। এক মাস বেতন না হলে পরের মাসে চলতে হয় ধারদেনা করে। মে মাস গিয়ে জুন পড়লেও গতমাসের বেতন হয়নি। গত ১৯ মে থেকে ভিসিহীন চলছে কুয়েট। ২২ মে থেকে পদত্যাগ করেন অন্তর্বর্তীকালীন ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ হযরত আলী। আজ বৃহস্পতিবার থেকে ঈদ-উল-আযহার বন্ধ হচ্ছে কুয়েট। এখনও বেতন-বোনাস হয়নি ১২শ’ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর। বেতন-বোনাস না পাওয়ায় এবারের ঈদ আনন্দ ম্লান হতে যাচ্ছে কর্মচারীদের।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ফরম বিতরণকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ওই হামলায় অন্তত: দেড়শ’ শিক্ষার্থী আহত হয়। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন একদফায় রূপ নিলে ২৫ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভিসি ও প্রোভিসিকে অব্যাহতি দেয়। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে না পেরে কুয়েট শিক্ষক সমিতির ব্যানারে পাল্টা আন্দোলন শুরু হয়। যে কারণে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেমে গেলেও শিক্ষক লাঞ্ছিতের বিচারের দাবিতে শিক্ষক সমিতি ক্লাস বর্জনের ডাক দেয়। শিক্ষকরা ক্লাস বর্জন শুরু করার এক পর্যায়ে খুলনা ছাড়েন ও পদত্যাগ করেন চুয়েট থেকে আগত অধ্যাপক ও কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ হযরত আলী।
এ প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য কুয়েটের ট্রেজারার প্রকৌশলী মো: আনিসুর রহমান ভূঁইয়াকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
কুয়েট কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাসিব সরদার বলেন, ‘ইতিহাসে প্রথমবার বেতন-বোনাসবিহীন ঈদ করতে হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করেছিলাম অন্তত: কর্মচারীদের বেতন-বোনাস হয়। কিন্তু হয়নি।’
এদিকে ৩০ এপ্রিল চাকরি মেয়াদের শেষ অফিস করেছেন খুলনা মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. মাহবুবুর রহমান। চলে যাওয়ার আগে রেজিস্টারকে অফিশিয়াল কাজ সম্পাদনের দায়িত্ব দিয়ে যান। কিন্ত এই বিশ^বিদ্যালয় পরিচালনা আইন অনুযায়ী বিধিসম্মত না হওয়ায় এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন না থাকায় তিনি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা শিটে স্বাক্ষর করতে পারছেন না। যে কারণে এই প্রতিষ্ঠানের ৪৪ জনকে এবার ঈদ করতে হচ্ছে বেতন-বোনাস ছাড়াই।
জানা গেছে, ২০২১ সালে বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনোই প্রোভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ভিসির মেয়াদ শেষে নতুন করে কেউ আসেননি। সুত্র দাবি করছে, পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে শীর্ষ তিনটি পদে সরাসরি রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন- ভিসি, প্রোভিসি ও ট্রেজারার। ক্ষমতার ক্রমানুসারে তাদের ওপর দায়িত্ব অর্পিত হওয়ার কথা থাকলেও খুলনা মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি দায়িত্ব দিয়ে যান রেজিস্টারকে। এতে জটিলতা চরম আকার ধারণ করেছে।
জানতে চাইলে বিশ^বিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ডা. কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, দুদিন আগে প্রতিষ্ঠান ছুটি হয়ে গেছে। আমরা বেতন বোনাস দিতে পারিনি। দেশে ৫টি মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় আছে, যারা নিজস্ব আইন দ্বারা চালিত হয়। আমাদের আইনে অস্পষ্টতার কারণে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।