স্থানীয় সংবাদ

খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবু ধরা-ছোঁয়ার বাইরে

# বাড়িতে যৌথ বাহিনীর দুই দফা অভিযান
# অস্ত্র-গুলি, বিপুল টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধার
# বাবাসহ গ্রেপ্তার ৩

স্টাফ রিপোর্টার ঃ ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে খুলনার অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী বাবু ওরফে গ্রেনেড বাবু। কিন্তু তারপরও তার অবৈধ অস্ত্র, গুলি, চাঁদাবাজি, মাদক ও বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন অব্যাহত রয়েছে। খোদ নিজের বাড়িতেই এসব অপকর্ম চলছে অব্যাহতভাবে। ইতিপূর্বে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অবৈধ অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ চাঁদাবাজির অর্থ উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় তার বাবা, ছোট ভাই ও তার কথিত ম্যানেজার কাম ক্যাশিয়ারের মাকে। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে এসে তারা ফের লিপ্ত হয় অপরাধ কা-ে। সর্বশেষ রোববার (৮ জুন) ভোর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দ্বিতীয় দফার অভিযানেও তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অস্ত্র, গুলি ও বৈদেশিক মুদ্রাসহ বিভিন্ন মালামাল। আবারো গ্রেফতার করা হয়েছে বাবুর বাবা জুনায়েদ চৌধুরী মিন্টুসহ তিনজনকে।
পুলিশ জানিয়েছে, যৌথ বাহিনীর সদস্যরা শনিবার রাত ২ টা থেকে নগরীর শামসুর রহমান রোডস্থ খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবুর বাড়িতে অভিযান শুরু করে। যা রোববার সকাল ৭ টা পর্যন্ত অব্যহত ছিল। যৌথবাহিনীর সদস্যরা সেখান থেকে বৈদেশিক মুদ্রা এবং পাইপগানসহ কয়েক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। এ সময়ে সেখান থেকে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, শামসুর রহমান রোডের বাসিন্দা গগন দত্তের ছেলে আব্দুর রহমান (নও মুসলিম), একই এলাকার বাসিন্দা বাবু গাজীর ছেলে মো. ইদ্রিস গাজী এবং গ্রেনেড বাবুর বাবা জোনায়েদ চৌধুরী মিন্টু।
খুলনা থানার অফিসার ইনচার্জ হাওলাদার সানওয়ার হুসাইন মাসুম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সেনাবাহিনী এবং নৌ-বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গ্রেনেড বাবুর বাড়িতে রাত ২ টার দিকে অভিযান চালায়। রাতে তারা ওই বাড়িতে তল্লাশি চালায়। এ সময়ে তারা সেখান থেকে একটি পাইপগান, ৩ রাউন্ড গুলি, ২৫ টি ক্রেডিট কার্ড, ২৬৮ মালয়েশিয়ান রিংগিত, ৫০ দিহরাম, ৩৩০ ভারতীয় রুপি, ৪৮১ ইউএস ডলার, ২ টি স্মার্ট ও ৩ টি বাটন ফোন এবং দু’টি ব্যাংকের স্বাক্ষর করা চেক বই উদ্ধার করা হয়। অভিযান শেষ হলে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা আটক ওই তিনজনকে খুলনা থানায় হস্তান্তর করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৩ এপ্রিল যৌথ বাহিনী শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘গ্রেনেড বাবু’কে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালায়। অভিযানে তার বাড়ি থেকে অস্ত্র, গুলি ও বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়। ওই সময় গ্রেনেড বাবুর বাবা মিন্টু চৌধুরী, ছোট ভাই রাব্বি চৌধুরী এবং সহযোগী সৌরভ ও সোহাগের মা সুষমা রানী সাহাকে আটক করা হয়। প্রথম দফা অভিযানে বাবুর ঘর থেকে একটি ৯ এমএম পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, চার রাউন্ড গুলি এবং নগদ ১২ লাখ ১২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে বাড়ির পাশের একটি মন্দির সংলগ্ন স্থানে সৌরভ ও সোহাগের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মাদক বিক্রির ২৬ লাখ টাকা ও ভারতীয় ৪ হাজার ২৪০ রুপি উদ্ধার করা হয়।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) বিশেষ শাখার প্রতিবেদনে জানা যায়, গ্রেনেড বাবুর প্রকৃত নাম রনি চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা রয়েছে এবং তার গঠিত সন্ত্রাসী গ্রুপের অস্ত্রধারী সদস্যদের বিরুদ্ধে রয়েছে মোট ৩৩টি মামলা। ওই সদস্যরা হলেন মো. শাকিল, মো. সাব্বির শেখ, আসাদুজ্জামান ওরফে বিল রাজু ও বিকুল।
এই সূত্র জানান, ২০১০ সালের ১০ জুন মাদক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জেরে মাদক কারবারি জাহাঙ্গীর হোসেন কচিকে হত্যা করে গ্রেনেড বাবু। এ ঘটনায় পরদিন কচির বাবা ইলিয়াস বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর বাবু আদালতে দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। ২০২৩ সালের ২৮ মার্চ ওই মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেন আদালত। রায় ঘোষণার আগেই সে আত্মগোপনে চলে যায়। তবে বিভিন্ন সময় তার সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যদের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button