খুলনায় করোনার জন্য বেড প্রস্তুত : কীট সঙ্কট

# দেশে ফের করোনার সংক্রমন ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে #
# খুমেক হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরীক্ষার কিট নেই
# কীট ধার করে পরীক্ষার প্রস্তুতি
# করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ১১ নির্দেশনা
কামরুল হোসেন মনি ঃ
দেশে ফের বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আপাতত আশংকাজনক না হলেও দেশে এ রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীর জন্য ৪০ শয্যা বেড প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। করোনা পরীক্ষার কিট না থাকলেও অন্য সরকারি হাসপাতাল থেকে ৬০-৭০টি কিট ধার করে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৩ হাজার কিট চাহিদা চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত খুলনায় নতুন করে কোন করোনা রোগী সনাক্তের খবর পাওয়া যায়নি। তবে এতে আতংঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ মোহাসীন আলী ফরাজি বুধবার দুপুরে এ প্রতিবেদককে বলেন, হাসপাতালে এখন পর্যন্ত কেউ করোনা পরীক্ষার জন্য কোন ব্যক্তি আসেননি। আমরা প্রস্তুতি আছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনা রোগীদের জন্য ইতিমধ্যে ৪০ শয্যা বেড প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ শয্যা আইসিইউ বেড রয়েছে। তিনি বলেন, আপাতত হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার কিট নেই। খুলনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল থেকে ৬০-৭০ পিস কিট ধার করে আনা হয়েছে। যাতে কোন ব্যক্তি পরীক্ষা করতে এসে ফিরে যেতে না হয়। তবে এখন পর্যন্ত কেউ পরীক্ষার জন্য আসেননি। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ৩ হাজার কিট চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে চাহিদাপত্র অনুযায়ী কিটগুলো পাওযা যাবে। তাদের সাথে করোনা বিষয়বস্তু নিয়ে জুম মিটিং করছি। এছাড়া হাসপাতালে করোনা রোগী আসলে চিকিৎসকদের করণীয় কি তা নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
খুলনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্ববধায়ক ডা: মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, তার হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য কোন শয্যা প্রস্তুতি নেই। তিনি বলেন, আপাতত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা বেড প্রস্তুতি রয়েছে। তার এখানেও পর্যাপ্ত পরিমান কিট নেই উল্লেখ করে বলেন, যা আছে তা আপাতত চলে যাবে। বর্তমানে ৪০০ কিট মওজুদ আছে। এই মওজুদ থাকতে থাকতে আরও ৩ হাজার পিস কিটের চাহিদাপত্র প্রেরণ করা হয়েছে। তবে হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা সেই ভাবে চালু করা হয়নি। যদি কেউ আসে তাহলে পরীক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খুলনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: সৈকত মো: রেজওয়ানুল হক বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মকর্তাদের সাথে আমাদের দুই বার জুম মিটিং হয়েছে করোনা দিকনির্দেশনা নিয়ে। গত ২ বছর করোনা কোন রোগী না থাকায় মওুজদ থাকা করোনা পরীক্ষা কিটগুলো মেয়াদউত্তীর্ণ হয়ে গেছে। যার ফলে কতো মওজুদ আছে তা এখন হিসাব করে বলা যাচ্ছে না। আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো পূর্বের ন্যায়ের মতো স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানগুলোকে করোনা রোগীদের সেবার জন্য প্রস্তুতি থাকার নির্দেশনা দিয়েছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলো কত পরিমান কিটের চাহিদা আছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যেহেতু ঈদের ছুটি এখনও আছে। তাই আমরা জুম মিটিং স্ব স্ব প্রতিষ্টানকে সরাসরি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অনলাইনের মাধ্যমে তাদের চাহিদাপত্র দিতে বলেছি। যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। যদি কোন সংকট থেকে থাকে আগামী দুই-একদিনের মধ্যে তা পূরন হয়ে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। অপরদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশেও নতুন একটি উপধরনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে করোনা প্রতিরোধে ১১ দফা করণীয় নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল বুধবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর এক সংবাদ সম্মেলনে এ নির্দেশনাগুলো তুলে ধরেন। লিখিত বক্তব্যে মো. আবু জাফর বলেন, ভাইরাসজনিত সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনাভাইরাসের কয়েকটি নতুন সাব- ভ্যারিয়েন্ট এরই মধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার প্রতিরোধে দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের আইএইচআর ডেস্কগুলোয় নজরদারি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো জোরদার করার বিষয়ে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ সময় স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর করণীয় নির্দেশ দিয়েছে। জনসাধারণের জন্য করণীয়Ñ
১. জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার।
২. শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে নিয়মিত মাস্ক পরা।
৩. হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখা।
৪. ব্যবহৃত টিস্যু নিরাপদভাবে ফেলা।
৫. নিয়মিত ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান-পানি বা স্যানিটাইজারে হাত ধোয়া।
৬. অপরিষ্কার হাতে চোখ-নাক-মুখ স্পর্শ না করা।
৭. আক্রান্তদের থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা।
সন্দেহভাজন রোগীদের জন্য পরামর্শÑ
১. উপসর্গ থাকলে বাড়িতে বিশ্রামে থাকা।
২. রোগীকে মাস্ক পরতে উৎসাহ দেওয়া।
৩. সেবাদানকারীদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৪. প্রয়োজনে আইইডিসিআর (০১৪০১-১৯৬২৯৩) বা স্বাস্থ্য বাতায়ন (১৬২৬৩)-এ যোগাযোগ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক জানান, সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আরটি-পিসিআর ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা, টিকা সরবরাহ, চিকিৎসা নির্দেশিকা, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও অক্সিজেন, আইসিইউ সুবিধাসহ বিশেষায়িত কোভিড হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় পিপিই, কেএন৯৫ মাস্ক, ফেস শিল্ডসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও মজুত রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সমন্বয়ে এসব প্রস্তুতি অব্যাহত রয়েছে।