স্থানীয় সংবাদ

খুলনা নাগরিক সমাজের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

খবর বিজ্ঞপ্তি ঃ নিউজপ্রিন্ট মিলস-সহ সকল শিল্প-কারখানার সম্পদ পাচার, লুটপাট, দুর্নীতি ও অবৈধ টেন্ডার প্রক্রিয়া বন্ধ, বন্ধ সকল শিল্প-কারখানা চালু, শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ এবং শ্রমিক হয়রাণি বন্ধের দাবীতে খুলনা নাগরিক সমাজের সংবাদ সম্মেলন ১২ জুন বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাড. মোঃ বাবুল হাওলাদার। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো লোকসানের অজুহাতে করোনার মতো স্মরণকালের ইতিহাসের দুনিয়াব্যাপী সর্ববৃহৎ দুর্যোগের মধ্যে ২০২০ সালের ২ জুলাই রাতের অন্ধকারে তৎকালীন সরকার রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে, গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাদের পেটোয়াবাহিনী দ্বারা একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ২৬টি পাটকল বন্ধ করে দেয়। যার মধ্যে খুলনাঞ্চলের ৯টি পাটকল রয়েছে। ফলশ্রুতিতে, চাকরি হারান ২৬ হাজার স্থায়ী-অস্থায়ী শ্রমিক। বেকার হয়ে যান এবং নিদারুণ অর্থ সংকটে পড়েন এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট কয়েকগুণ মানুষ। রাষ্ট্র হারায় প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী একটি শিল্প তথা বুনিয়াদি উৎপাদন খাত। তৎকালীন সরকার শ্রমিকদের সকল বকেয়া পাওনা পরিশোধ করে লীজের মাধ্যমে এ খাতটি আধুনিকায়ন করে পরবর্তীতে ৩ মাসের মধ্যে পুনরায় চালুর ঘোষণা দেয়। মূলত এটি ছিলো শ্রমিক অসন্তোষ এবং কারখানা চালুর দাবীতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন বন্ধের একটি অপকৌশলমাত্র। যা তৎপরবর্তী অদ্যাবধি কার্যক্রম দ্বারা স্পষ্ট প্রতীয়মান। তারও পূর্বে লোকসানের অজুহাতে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর খুলনা নিউজ প্রিন্ট মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একই অজুহাতে ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর খুলনা হার্ডবোর্ড মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একইভাবে সরকারের ভুলনীতির কারণে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বন্ধ হয়ে যায় ব্যক্তিমালিকানাধীন সোনালী জুট মিল, ২০১৩ সালে এজাক্স জুট মিল, ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আফিল জুট মিল, ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই মহসেন জুট মিল, ২০১৬ সালে জুট স্পীনার্স বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়াও ১৯৯৩ সালের ১৯ জুন খুলনা টেক্সটাইলস মিলস্, ২০১০ সালের ১৮ আগস্ট বন্ধ করে দেয়া হয় দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরী। এর পূর্বে বিএমসি, বাংলাদেশ অক্সিজেন কোম্পানি, কোরাইশী স্টীল মিল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও এ অঞ্চলের চিংড়ি রপ্তানিকারক কারখানা ও লবণ শিল্পের দশা করুণ।
তিনি বলেন, পতিত হয়ে আছে বিপুল পরিমাণ জমি, ভৌত অবকাঠামো। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ যন্ত্রপাতি। এহেন ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে জাতীয় সম্পদের উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে কায়েমী স্বার্থবাদী একশ্রেণির লুটেরাগোষ্ঠীর। শুরু হয় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বনি¤œ লুটেরা পর্যন্ত সর্বমহলে লুটত্বরাজের এক হরিলুটের খেলা। কখনও লীজের নামে কখনও টেন্ডারের নামে এভাবে বিভিন্ন নামে-বেনামে শুরু হয় এখানকার মূল্যবান সম্পদ পাচার-লুটপাট। মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে পূর্বেকার চলমান দুর্নীতি আরো ক্ষিপ্রগতিতে। যার অপদৃষ্টির শিকার বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রায় সকল কারখানাগুলো। ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর খুলনা নিউজ প্রিন্ট মিলের যন্ত্রপাতি স্ক্র্যাপ দেখিয়ে তৎকালীন রাজনৈতিক অপশক্তির প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে নাটকীয় ও ষড়যন্ত্রমূলক টেন্ডারের মাধ্যমে ন্যূনতম ৫০০ কোটি টাকার সম্পদ ৬৮,৭৩,০০,০০০ টাকায় বিক্রী করে দেয়া হয়, যা অপসারণ বা পাচারের কাজ চলমান। টেন্ডার প্রাপ্ত ঠিকাদার বিগত সরকারের আমলে সব যন্ত্রপাতি পাচার করতে না পারায় ক্ষমতার পট পরিবর্তনে পরোক্ষভাবে ক্ষমতায়িতদের ম্যানেজ করে অব্যাহত রেখেছেন এই পাচার কর্মকা-। এছাড়াও যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ (জেজেআই), খালিশপুর-ক্রিসেন্ট জুট মিলের সম্পদও পাচার প্রক্রিয়া চলমান। যার প্রতিবাদ করতে যেয়ে ইতোপূর্বে অতীতের ন্যায় যশোরের বর্তমান প্রশাসন দ্বারা মারাত্মক হয়রাণির শিকার হয়েছেন স্থানীয় শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, শিল্প-কারখানার জাতীয় তথা জনগণের এই মহামূল্যবান সম্পদ, শুধু সম্পদই নয় এর সাথে জড়িয়ে আছে জাতীয় ঐতিহ্য, অজ¯্র মানুষের আবেগ-অনুভূতি। এর সাথে আরও জড়িত আবেগময় সংস্কৃতি, কৃষি, উৎপাদন আরো অনেক কিছু। যার আর্থিক মূল্যও নির্ধারণ করা অসম্ভব। আমাদের দাবী (১) নিউজ প্রিন্ট মিলের অবৈধ টেন্ডার বাতিল, লুটপাটকারী, নাটকীয়, ষড়যন্ত্রমূলক এ টেন্ডারের সাথে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনা এবং টেন্ডারের নামে ইতোপূর্বে পাচার হয়ে যাওয়া সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে ফেরৎ প্রদান; (২) বন্ধ সকল কারখানা আধুনিকায়ন করে চালু এবং স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ; (৩) শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ;(৪) লুটপাটের প্রতিবাদকারী শ্রমিকদের হয়রাণি বন্ধ; এবং (৫) পাটকল রক্ষা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের ব্যাপারে সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য ও রূপরেখা প্রদান। পরবর্তী ১০ দিনে মধ্যে নিউজ প্রিন্ট মিলসহ অন্যান্য মিলের লুটপাট চূড়ান্তভাবে বন্ধ না হলে তথা উপরোল্লিখিত ৫ দফা দাবী সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না পেলে আমরা রাজপথে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
সংগঠনের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব অ্যাড. আ ফ ম মহসীন এর সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের অন্যতম সদস্য গণসংহতি আন্দোলনের খুলনা জেলা আহ্বায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও নিউজ প্রিন্ট মিল এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের সভাপতি নিজামউর রহমান লালু, সিপিবি নেতা মিজানুর রহমান বাবু, সংগঠনের সদস্য যথাক্রমে আইন ও অধিকার বাস্তবায়ন ফোরামের খুলনা বিভাগীয় সভাপতি এস এম দেলোয়ার হোসেন, আমরা বৃহত্তর খুলনাবাসীর সাধারণ সম্পাদক সরদার আবু তাহের, খুলনা ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (কেডিএস)এর চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম শিমুল, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’র খুলনা মহনগর সভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিন, খুলনা উন্নয়ন ফোরামের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা. সৈয়দ মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু, নতুনতারা সমাজকল্যাণ ও সাহিত্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সাইফুর মিনা, খুলনা নিউজ প্রিন্ট মিলের শ্রমিকনেতা এস এম রফিকুল ইসলাম, অ্যাড. মেহেদী হাসান, কবি ও সাংবাদিক মোঃ রহমত আলী, আমরা বৃহত্তর খুলনাবাসীর সহ-সভাপতি শেখ ওমর ফারুক (কচি), এস এম মিজানুর রহমান, দৈনিক শিরোনাম এর সম্পাদক ও প্রকাশক, বিশিষ্ট উপস্থাপক ইফফাত সানিয়া ন্যান্সি, খুলনাঞ্চল পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক মো. মোসলেহউদ্দিন তুহিন, দৈনিক চৌকস এর বিভাগীয় সম্পাদক মো. শাহীন হাওলাদার, খুলনা হার্ডবোর্ড মিলস বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব মো. জহুরুল ইসলাম (জব্বার), সম্প্রীতি সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাঈদা পারভীন, মানবাধিকার উন্নয়ন প্রকল্প (এইচআরডিপি) এর সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল মোড়ল, শিরোমনি যুব উন্নয়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক প্রমি আক্তার লিজা, খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য, মোস্তফা সাব্বির হাসান বাপ্পী প্রমুখ।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button