স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় ফের চোখ রাঙাচ্ছে করোনা

৪৮ ঘন্টায় সনাক্ত দুই নারী

# সরকারি হাসপাতালে করোনা অ্যান্টিজেন টেস্টের কিট সংকট
# খুমেক হাসপাতালে কিট আছে ৪০, সদর হাসপাতালে ১৮৭
# স্বাস্থ্যবিধি না মানলে করোনা ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে : স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

কামরুল হোসেন মনি ঃ খুলনায় ফের চোখ রাঙাচ্ছে মহামারি করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট। গত ৪৮ ঘন্টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও খুলনা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে পৃথক অ্যান্টিজেন র‌্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে দুই নারী রোগীর শরীরে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে করোনার পরীক্ষার পর্যাপ্ত কিট নেই। এমন পরিস্থিতির মধ্যে কেউ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সামনে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর রূপে পরিনত হতে পারে এমনটি আশংকা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

দীর্ঘ দেড় বছর মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অ্যান্টিজেন র‌্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে তানিয়া (৪২) নামে এক গৃহবধুর শরীরে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে। সে নগরীর বয়রা বাজার এলাকার বাসিন্দা মো: আসাদুজ্জামানে স্ত্রী।
এর আগে খুলনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে গত সোমবার ( ১৬ জুন) নতুন করে আরও এক নারী করোনা সনাক্ত হয়। তার নাম নুসরাত জাহান সুমাইয়া (১৮)। ওই দিন হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। মঙ্গলবার সকালে খুমেক হাসপাতালে করোনা ইউনিটে ইয়োলো জোনে ভর্তি হলে বিষয়টি প্রথম জানাজানি হয়। সে নগরীর নিরালা প্রান্তিকা এলাকার বাসিন্দা মিরাজ মোল্লার স্ত্রী। এদিকে খুমেক হাসপাতালে করোনা অ্যান্টিজেন র‌্যাপিড টেস্টের কীট সংকট রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এ হাসপাতালে মাত্র ৪০টি কিট ছিলো। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই ৫ হাজার কিটের চাহিদা চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পত্র প্রেরণ করেছেন। অপরদিকে খুলনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ১৮৭ কিট মওজুদ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা: মিজানুর রহমান বলেন, দুপুর ২টা পর্যন্ত ১৩ জন রোগীর অ্যান্টিজেন র‌্যাপিড টেস্টেও মাধ্যমে একজন নারী করোনা সনাক্ত হয়। দীর্ঘ দেড় বছর পর এ হাসপাতালে নতুন করে করোনা রোগী সনাক্ত হলো। করোনার কীট সংকট রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৭৫টি কিট মওজুদ ছিলো। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সর্বশেষ কিট ছিলো ৪০টি। ৫ হাজার কিট চাহিদা চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। করোনা এই মহামারি থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, তা না হলে সামনে করোনা ভয়ঙ্কর রূপে দেখা দিতে পারে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরএমও এবং করোনা ও ডেঙ্গুর ফোকাল পার্সন ডা: খান আহমেদ ইশতিয়াক বলেন, মঙ্গলবার সকালে তানিয়া নামে এক নারী অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে। তাকে বাড়ি থেকে চিকিৎসার নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। এর আগে একই দিনে সকালে সুমাইয়া নামে এক নারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে খুমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শ^াসকষ্টো থাকায় তাকে এখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, গত ১২ জুন থেকে হাসপাতালে অ্যান্টজেন এর মাধ্যমে করোনা পরীক্ষা শুরু হয়। এর মধ্যে গত ১৪ জুন থেকে ১৭ জুন দুপুর ২টা পর্যন্ত অ্যান্টিজেন র‌্যাপিড টেস্টেও মাধ্যমে ৩৭ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে নতুন করে এক নারী শরীরে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়। তিনি বলেন, খুমেক হাসপাতালে ২০২৩ সালের পর খুলনায় করোনার তেমন প্রভাব ছিলো না। যার কারণে ২০২৪ সালে ডিসেম্বরে পরীক্ষাটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর এবছরেই এই প্রথম নতুন করে কেনো করোনা রোগী সনাক্ত হলো।
আরএমও বলেন, ‘নতুন ভ্যারিয়েন্টটির উপসর্গগুলো কিছুটা পরিবর্তিত। আগের মতো কাশি ও হঠাৎ জ্বর প্রধান নয়; বরং এখন দেখা যাচ্ছে গলাব্যথা, মাথা ঘোরা, দুর্বলতা এবং হালকা কাশি। কেউ কেউ অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন স্বাদ-গন্ধ চলে যাওয়া, আবার কারো ক্ষেত্রে শুধু সামান্য ঠান্ডাজনিত অনুভূতি, বুকে ব্যাথা ও শ্বাসকষ্টে সমস্যা। শিশুদের মধ্যে জ্বর-খুসখুসে কাশি ও পাতলা পায়খানা লক্ষণীয়। একটি উদ্বেগজনক দিক হচ্ছে-অনেকেই উপসর্গহীন থেকেও ভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছে’।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে সবারই। সেক্ষেত্রে কয়েক বার প্রয়োজনমতো সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাষ্ক ব্যবহার করা, আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দুরে থাকা, অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ না করা এবং হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু বা কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখার পরামর্শ দেন। হাসপাতালে ৫০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার মওজুদ রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে পাইপ লাইনের মাধ্যমে অক্সিজেন প্লান্ট । কিন্তু করোনা পরীক্ষার জন্য কিট সংকট রয়েছে। তার দেওয়া তথ্য মতে, এ হাসপাতালে ২০২০ সালের ২০ মার্চ থেকে ২০২৫ সালের ১৬ জুন পর্যন্ত মোট ১০ হাজার ৯৩ জনকে করোনা রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ইয়োলো জোনে ভর্তি ছিলো ৭ হাজার ১২১ জন এবং রেড জোনে ছিলো ২ হাজার ৯৭২ জন। এ সময়ে ইয়োলো জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা রোগী মারা যায় ৭৪২ জন। মারা যাওয়ার মধ্যে পুরুষ ছিলো ৪৭১ জন। এছাড়া ওই সময়ের মধ্যে রেড জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা রোগী মারা যায় ৬৯৬ জন। এর মধ্যে ৪৬৭ জন পুরষের মৃত্যু।
খুলনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডা: মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, গত সোমবার (১৬ জুন) ৬ জনের করোনা অ্যান্টিজেন র‌্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে ১ জন নারী করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে। তাকে ওই দিনই খুমেক হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার ৭ জনের পরীক্ষার মধ্যে সবারই নেগিটিভ আসে। তিনি বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে ১৮৭টি কিট মওজুদ রয়েছে। ৩ হাজার কিট চাহিদাপত্র দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। আগামী ৭ জুলাইয়ের মধ্যে চাহিদা অনুযায়ি কিট পাওয়া যাবে।
খুমেক হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগী নুসরাত জাহান সুমাইয়ার মা সোনিয়া বেগম জানান, ঈদের সময় তার মেয়ে ও জামাই আমাদের বাড়িতে আসে। এর দুই দিন পর মেয়ের জ¦র ও গা ব্যাথা হয়। পাশাপাশি হাত-পা খিচুনি দিয়ে উঠতো। স্থাণীয় এক ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ানো হলেও কোন পরিবর্তন হয়নি। এরপর গত ১৫ জুন মেয়েকে নিয়ে খুলনা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে। হাসপাতালে চিকিৎসকরা ভর্তি করাতে বলে। পরের দিন (১৬ জুন) এ হাসপাতালে মেয়ের করোনা পরীক্ষা করা হলে পজিটিভ আসে। ওই দিন হাসপাতাল থেকে আমাদেরকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করান। বৃষ্টির কারণে ওই দিন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেননি। একদিন পর আজ সকালে খুমেক হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি করানো হয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button