ভিসি-রেজিস্ট্রারের দপ্তরে তালা শিক্ষার্থীদের অচলাবস্থা সৃষ্টি নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির

স্টাফ রিপোর্টার ঃ ট্রাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান সংক্রান্ত জটিলতা, বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের উপর কথিত ট্রাস্ট্রিদের অনৈতিক চাপ সৃষ্ট্রি, অপারগতায় স্বেচ্ছায় ছুটি নিতে বাধ্য করা নিয়ে এমনিতেই অস্থিরতার শেষ নেই। তার ওপর ভিসি ও রেজিস্ট্রারের দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে দেয়ার মাধ্যমে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির। রেজিস্ট্রার পদত্যাগ না করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রসঙ্গত, অনিয়মের প্রতিবাদে রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সন্ধ্যায় সোনাডাঙ্গাস্থ প্রধান ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভের মুখে ক্যাম্পাসের সামনের সড়কে নিজ গাড়িতে প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকেন রেজিস্ট্রার। যৌথবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে রাত ১১টা নাগাদ রেজিস্ট্রারকে মুক্ত করেন। এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রার ও ভিসির দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে দেন এবং রেজিস্ট্রারের স্বামীর বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ তুলে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় জিডি করেন। জানা গেছে, ট্রাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন প্রসঙ্গে শিক্ষা সচিব ও ইউজিসি চেয়ারম্যানের কাছে গত ১৭ জুন পৃথক চিঠি পাঠান রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) ড. সাহিদা খানম। সেখানে বলা হয়, ট্রাস্ট্রি বোর্ডের কতিপয় সদস্য গত ২১ মে ৬৬তম পর্ষদ সভায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সিরাজুল হক চৌধুরীর মেয়াদ থাকা স্বত্ত্বেও মো: মিজানুর রহমানকে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করে গত ২৪ মে ২০২৫ তারিখ ৭৩তম পর্ষদ সভার কার্যবিবরণী রেজিস্ট্রার বরাবর প্রেরণ করেন। উপরুন্ত ২৫ মে ২০২৫ তারিখ প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সিরাজুল হক চৌধুরী ট্রাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে ৭৩তম পর্ষদ সভার করে কার্যবিবরণী রেজিস্ট্রার বরাবর প্রেরণ করেন। এমতাবস্থায় দুইজন চেয়ারম্যান দাবি করায় বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে এবং প্রশাসনিক ও আর্থিক কাজে বিভিন্ন প্রকার জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। আরও জানা গেছে, ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ তুলে জীবনের নিরাপত্তার এবং খুলনায় বিশ^বিদ্যালয়ে প্রবেশের সহযোগিতা প্রদানের সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার করার আবেদন জানিয়ে ১৮ জুন কেএমপি’র সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় সাধারণ ডাইরী (নং ১০৯০) করেছেন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সিরাজুল হক চৌধুরী। জিডিতে উল্লেখ, গত ২২ আগস্ট’২৪ হতে বৈধ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বিদেশে থাকার সুযোগে মো: মিজানুর রহমান ও সৈয়দ হাফিজুর রহমান কৌশলে বিশ^বিদ্যালয়টি দখল করে নেয়। কিন্ত তারা বৈধ ট্রাস্ট্রি নন। জিডিতে ড. সিরাজ আরও বলেন, তার স্বাক্ষর জাল করে মিজানুর রহমান সভা আহবান করে নিজেই চেয়ারম্যান হন। সহস্রাধিক শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের স্বার্থে বিশ^বিদ্যালয়টি সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য খুলনায় আসা প্রয়োজন। তবে নানাভাবে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু অনিয়ম, দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদে আন্দোলন করে আসছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ভিসি ও রেজিস্ট্রার সম্মিলিতভাবে এ সকল অনিয়ম, দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকা- করে আসছেন। কিন্তু এসবের প্রতিবাদ করায় উল্টো শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। এতে তারা ক্ষিপ্ত হন। যা আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। অবশ্য রেজিস্ট্রারের দাবি, অবৈধভাবে থাকার ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের পক্ষে প্রক্টর শাকিল আহমেদ ও ডিরেকটর লিয়াজো শেখ মারুফুর রহমানের উস্কানিতে কিছু শিক্ষার্থী মব সৃষ্টি করছে। ড. সাহিদা খানম তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ভিসি ঢাকায় ট্রাস্টি বোর্ডের মিটিং এ থাকায় তার নির্দেশ অনুযায়ী সিন্ডিকেটসহ সকল সভা স্থগিত করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, তিনজন ট্রাস্ট্রির বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন আসলে তারা দোষমুক্ত হন। তবে সেখানে তাকে দোষী সাজিয়ে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির কাছে চিঠি পাঠাতে বলেন মিজানুর ও হাফিজুর। তবে তা করা হয়নি। বরং ভিসি স্যারের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সঠিক তথ্যই প্রেরণ করা হয়। এছাড়া বিশ^বিদ্যালয় ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. সিরাজ বলেছিলেন, বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থাপনের পর সর্বসম্মতি নিয়ে নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য ওপেন টেন্ডার আহবান করতে হবে। তবে মিজানুর রহমান, হাফিজুর রহমান ও ডিরেকটর শেখ মারুফুর রহমানসহ কয়েকজন তাদের পছন্দসই প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করতে চাপ প্রয়োগ করেন। তবে শর্তাদি পূরণ করতে না পারায় চুক্তি হয়নি। বরং সংশোধনপূর্বক নতুন বিজ্ঞপ্তি আহবান করা হয়। এতেই ভিসি ও তার উপর ক্ষুদ্ধ হন তারা। এ বিষয়ে ব্যাপারে ভিসি ড. শেখ মো: এনায়েতুল বাবর জানান, ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়ের বাধ্যবাধকতার কারণে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের জবাবদিহিতা আছে। সুতরাং নিয়মের বাইরে যাবার সুযোগ নেই। সেখানে দুইজন চেয়ারম্যান দাবি করায় বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে এবং প্রশাসনিক ও আর্থিক কাজে বিভিন্ন প্রকার জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ বিষয়ে সৈয়দ হাফিজুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে শেখ মারুফুর রহমান বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত রেজিস্ট্রারের অভিযোগ ভিত্তিহীন। এটা তাকে হতবাক করেছে। উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর খুলনার প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অনুমোদন পায় নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি। ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্য ছিলেন ১৮ জন।