স্থানীয় সংবাদ

নকশায় মৌলিক তিনটি পরিবর্তনে নির্মাণ হবে ভৈরব সেতু

# নকশায় পরিবর্তন আনছে সড়ক বিভাগ
# চার বছরে প্রকল্পের দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রায় ১৮ শতাংশ
# মূল সেতুর দৈঘ্য ১৬০ মিটার আর্চ টাইপের স্টিল স্প্যান
# মূল সেতুর প্রশস্ততা ১০.৩ মিটার
# ভৈরব নদীর মধ্যে কোন পিয়ার বসবে না #
এম রুহুল আমিন ঃ খুলনার দ্বীপ উপজেলা দিঘলিয়ার সাথে ভৈরব সেতুর কারনে মেলবন্ধন তৈরী হবে শহরের। এ অঞ্চলের জনসাধারণের ভবিষ্যতের সুফল বিবেচনা করে ভৈরব সেতু নির্মাণে নকশায় বিশেষ তিনটি পরিবর্তন আনছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ(সওজ)। বর্তমান যে নকশা রয়েছে তাতে নদীর মূল ষ্টীল এক্সট্রাকচার স্প্যান ১০০ মিটার ডুয়েল লেন। ২০২২ সালের নতুন নকশায় ১৬০ মিটার পর্যন্ত করা সম্ভব। ২০১৭ সালের যে নকশা করা হতো স্লো মোবিং লেন রাখা হতো না। দুই লেন (ডুয়েল লেন) ব্রিজ হতো। নতুন নকশায় স্লো মোবিং থাকবে বড় গাড়ির সাথে ভ্যান,রিক্সা ও ইজিবাইক যাতায়াতের জন্য স্লোট রাখা হবে। ভৈরব সেতুর নকশায় বড় ধরনের পরিবর্তন করে নদীর উপরে মূল সেতুর মাঝখানে বসানো হবে আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) স্টিলের স্প্যান। দেখতে হাতিরঝিল সেতুর মত। নতুন নকশার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঢাকার বুয়েট প্রকৌশলীদের। বর্তমান নকশায় নদীর ওপর ১০০ মিটার স্টিল স্প্যানে সেতু নির্মাণের কথা রয়েছে। পরিবর্তিত নকশায় মূল সেতুর দৈঘ্য ১৬০ মিটার করে আর্চ টাইপের স্টিল স্প্যান বসানো হবে। বর্তমান প্রশস্ততা হবে ৭ দশমিক ৩ মিটার ।পরিবর্তিত নকশায় স্বল্পগতির লেন যুক্ত করা হয়েছে। নতুন নকশায় নদীর উপরে মূল সেতুর প্রশস্ততা ৩ মিটার যুক্ত করে ১০.৩ মিটার। ব্রিজের মধ্যে বাঁক থাকায় ২৮টি পিয়ারের মধ্যে ৭টি পিয়ারের আরসিসি ডিজাইনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে স্টিল গার্ডার ডিজাইন ব্যবহার করা হবে।বিশেষ করে রেল লাইনের উপর ৬টি পিয়ারে স্টিল এক্সট্রাক্সার স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমান নকশায় ভৈরব নদীর উপরে সেতুটি স্টিল স্প্যান ছিল।কিন্তু তাতে স্বল্প গতির লেন সংযোগ ছিল না। দুই লেনের সেতুতে স্বল্পগতির যানবাহন এবং মানুষ চলাচলের জন্য পৃথক কোনো লেন ছিলনা । এতে করে ভবিষ্যতে যানবাহনের চাপ বাড়লে যানজট এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দেবে। বর্তমান নকশায় নদীর দুই প্রান্তে ১৫ ও ১৬ নং পিয়ারে সংশোধন আনা হয়েছে । সংশোধন আনা হয়েছে ১৭ ও ১৮ নং পিয়ারে। সেতু নির্মাণের জন্য ভেঙে ফেলা দুটি মসজিদ ও একটি ঈদগাহ নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। এ জন্য প্রকল্পটি সংশোধন করতে হবে। সংশোধিত প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়বে, তবে টাকার পরিমাণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গত চার বছরে প্রকল্পের দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রায় ১৮ শতাংশ। এদিকে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধির কারণে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির বিবেচনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজেও অনেকটা গাফিলতি দেখা দিয়েছে।ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়েছে ও জায়গা অধিগ্রহণের অজুহাত দিয়ে কাজের গতি বাড়াচ্ছেন না। মূল সেতু ছাড়াও এই প্রকল্পে অ্যাপ্রচ সড়ক, সার্ভিস সড়ক,আরসিসি বক্স কালভার্ট,ড্রেন,কনক্রিটের ঢাল ও ২ টি ইন্টার সেকশেনর কাজ রয়েছে। শুধু সেতুর পিয়ার কলাম ও কলামের ক্যাপ ঢালাই নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। দিঘলিয়া ও রেলিগেট অংশে জমি বুঝিয়ে দিলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজের কোন গতিআনছেন না।কোন রকম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সেতু প্রকল্পের কাজ। এরপর নকশায় পরিবর্তনের কথা বলে পুরোপুরি ঝিমিয়ে পড়েছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাজ।২৮টি পিয়ার ক্যাপের মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে ১০ টির।সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড,সার্ভিস রোড,আরসিসি বক্স কালভার্ট,ড্রেন,কংক্রিটের ঢাল ও দুটি ইন্টারসেকশনের কাজ শুরুই করেনি। সেতুর দিঘলিয়া অংশের বেশির ভাগ পিয়ারের কাজ শেষ হলেও খুলনা শহরের দৌলতপুর অংশে গতি সামান্য। গত কয়েকদিন আগে রেলিগেট অংশে ঢাকা ট্রেডিং এর মধ্যে ১০,১১ ও ১২ নং পিয়ারের পাইলিং এর কাজ করেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী ও ভৈরব সেতু প্রকল্পের পিএম মোঃ তানিমুল হক বলেন, পূর্বের নকশায় নদীর মধ্যে দুটি পিয়ার ছিল,নতুন নকশায় নদীর মধ্যে কোন পিয়ার বসবে না। নদীর মধ্যে পিয়ার দেয়া হলে তাতে পলি পড়ে নদীর নাব্যতা হারাবে। ফলে সরকারের ড্রেজিং করতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হবে। সেই দিকটা চিন্তা করে নতুন ডিজাইনে ১৬০ মিটার স্টিল এক্সট্রাকচার স্প্যান বসবে। যাতে করে নদীর প্রবাহ ঠিক থাকবে। নদীর ক্ষতি ও সরকারের ভবিষ্যৎ ব্যয় বাড়িয়ে আমি এখানে ব্রীজ করতে রাজি নই। আমরা চাই দ্রত সময়ের মধ্যে সেতু নির্মাণ শেষ করে জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করতে। সেতুর প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী এস এম নাজমুল জানান, সেতুর পাইলিং’র কাজ চলমান রয়েছে।নতুন নকশা অনুমোদন হয়ে এলে দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারবো।
সচেতন মহল মনে করেন, ভৈরব সেতুর কাজ এভাবে চলতে থাকলে সরকারের খরচের পাল্লা আরো ভারী হবে। ২ দফা সময় বাড়িয়েও সেতু নির্মাণ কাজে গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। নতুন করে ভৈরব সেতু প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। সবমিলিয়ে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। নির্মাণকাজ নিয়ে হতাশ এ অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৪ মে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে সরকারি খাস জমির উপর ২৪ নং পিলারের টেস্ট পাইলিংয়ের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কর্মযজ্ঞ। বর্তমান নকশা অনুযায়ী ভৈরব সেতুর পিয়ার বসবে মোট ২৮টি। এর মাধ্যমে সেতুর শহরাংশে কুলিবাগান হতে রেলিগেট ভৈরব নদীর তীর পর্যন্ত ১ থেকে ১৪ নং পিয়ার এবং সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে ১৭ থেকে ২৮ নং পিয়ার বসবে। ভৈরব সেতুর মোট দৈর্ঘ্য হবে ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button