স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় এসআই সুকান্তকে ক্ষুব্ধ জনতার গণধোলাই : পুলিশে সোপর্দ

বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ওপর সীমাহীন নির্যাতনের অভিযোগ
নারী কেলেংকারী, চাঁদাবাজি ও প্রতারণাসহ একাধিক মামলার আসামি হয়েও ছিলেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামি এসআই সুকান্ত দাশকে মারধর করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে ক্ষুব্ধ জনতা। মঙ্গলবার বিকেলে খুলনা নগরীর ইস্টার্ন গেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তাকে খানজাহান আলী থানা পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। গত বছর গণঅভ্যুত্থানের পর সুকান্তের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে।
এদিকে, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ছত্র-ছাঁয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ওপর সীমাহীন নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে সুকান্তের বিরুদ্ধে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অবৈধ প্রক্রিয়ায় অঢেল অর্থ-সম্পদ গড়ে তোলার অভিযোগও রয়েছে। রয়েছে নারী কেলেংকারী, চাঁদাবাজি ও প্রতারণাসহ একাধিক মামলাও। কিন্তু আসামি হয়েও ছিলেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তবে, উত্তেজিত ও ক্ষুব্ধ জনতার রোষানল থেকে রক্ষা পাননি তিনি।
কেএমপি থেকে জানা গেছে, এসআই সুকান্ত দীর্ঘদিন সোনাডাঙ্গা থানায় কর্মরত ছিলেন। ২০২৩ সালে তাঁকে খুলনা সদর থানায় বদলি করা হয়। গণঅভ্যুত্থানের পর প্রথমে তাঁকে ঢাকায় ও পরে চুয়াডাঙ্গায় বদলি করা হয়। একটি মামলার সাক্ষ্য দিতে মঙ্গলবার তিনি খুলনায় আসেন। সাক্ষ্য দিয়ে ফেরার পথে তাঁকে মারধর করা হয়।
স্থানীয়রা সূত্রে জানা গেছে, ইস্টার্ন গেট এলাকায় বিএনপির একটি কর্মসূচি ছিল। এ সময় সিএনজি চালিত অটোরিকশায় যাচ্ছিলেন সুকান্ত। অটোরিকশা ইস্টার্ন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আরও যাত্রী ওঠানোর সময় বিএনপির কিছু নেতাকর্মী সুকান্তকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করে। পরে দলের সিনিয়র নেতারা তাঁকে ছাড়িয়ে নিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
তবে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত খুলনা মহানগর বিএনপির দপ্তর সেলের শরিফুল ইসলাম টিপু বলেন, উত্তেজিত লোকজন এসআই সুকান্তকে মারধর করে। নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁকে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে। বিএনপির কেউ মারধরে জড়িত নয়। তিনি বলেন, খুলনায় কর্মরত অবস্থায় বিএনপি নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ওপর সীমাহীন নির্যাতন করেছেন সুকান্ত।
খানজাহান আলী থানার ওসি কবির হোসেন বলেন, নিরাপত্তার জন্য এসআই সুকান্তকে হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাঁর শরীরে তেমন আঘাত লাগেনি, শুধু গায়ের টি-শার্ট ছিঁড়ে গেছে।
অপরদিকে, এক কাতার প্রবাসীকে থানায় ডেকে নিয়ে ৬লাখ ৩০ হাজার টাকা জোরপুর্বক আদায় করে দু’নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানোর অভিযোগে খুলনা সদর থানার এসআই সুকান্ত কুমার দাস ও দু’নারীসহ ৫জনের বিরুদ্ধে আদালতে চাঁদাবাজি ও প্রতারণা মামলা রয়েছে। গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন খালিশপুর হাউজিং এস্টেট মানষি বিল্ডিং মোড় এলাকার মো. বিল্লাল।
মামলার বিবরণে জানা যায়, কাতারে থাকা অবস্থায় ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর বাদীর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় নুসরাত জাহান অর্ণার। দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এসুযোগে অর্ণা বিভিন্ন বাহানায় ২১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর বাদী দেশে ফিরে ্এসে অর্ণা, রিনাসহ অন্যদের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে তারা প্রতারণার মাধ্যমে তার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অর্ণার কাছে টাকা ফেরত চাইলে সে গালিগারঅজ করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। ১ডিসেম্বর এসআই সুকান্ত বাদীকে ফোন দিয়ে কথা আছে বলে হোটেল ক্যাসল সালামে নিয়ে যায়। টাকা দিতে অস্বীকার করলে এসআই সুকান্ত থানায় নিয়ে যায় এবং অর্ণার অশ্লীল ছবি দিয়ে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠায়। এর আগে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে বাদীর কাছ থেকে ৬লাখ ৩০ হাজার টাকা জোরপুর্বক আদায় করে নেয় এসআই সুকান্ত ও আসামিরা।
এসআই সুকান্তের হাতে নির্যাতিতরা তার কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button