খুলনা জুড়ে অপরাধ জগতের শীর্ষে গ্রেনেড বাবু

# গ্রেনেড বাবু অনুসারি মধ্যে গোলাগুলিতে একজন নিহতসহ গুলিবিদ্ধ ৪
# গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মিরাজ ওরফে কাউয়া মিরাজসহ দুই জন পলাতক
# নগরীতে ব্যবসায়ীকে জবাই করে হত্যা, মামলা দায়ের
কামরুল হোসেন মনি ঃ খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)র তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবুর সা¤্রাজ্যে দিনকে দিন বিস্তার লাভ করছে। যার কারণে গ্রেনেড বাবুর দলের নামকরণ করা হয় ‘বি’ কোম্পানী। এই দলের সদস্যরা খুন, আধিপত্য বিস্তার, মাদক বিক্রি ও জমি দখলসহ নানা অপরাধের সাথে জড়িত। মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্রে করে বাবুর অনুসারিদের মধ্যে গোলগুলির ঘটনায় কাউয়া মিরাজ, সাব্বির, সাদ্দামহ মোট ৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়। এর মধ্যে বাবুৃর একান্ত সহযোগি সাব্বির ও কাউয়া মিরাজ। এর মধ্যে সাব্বির মারা যায়। গুলিবিদ্ধ সাদ্দামকে খুমেক হাসপাতাল থেকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। তার অবস্থা আশংকাজনক। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে রূপসা থানাধীন আইচঘাতী ইউনিয়নের রাজাপুর এলাকায় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী সোহাগের বাড়িতে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে ছয়টি খালি কার্টিজ, চারটি লাইভ কার্টিজ, ইয়াবা এবং মাদক সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুুলিশ।
অপরদিকে একই রাতে খুলনা মহানগরী হরিণটানা এলাকায় বালু ও জমির ব্যবসায়ী বাবুল দত্ত (৫০) নামের এক ব্যক্তিকে জবাই করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। নিহত বাবুল দত্ত দক্ষিণপাড়া এলাকার বসিন্দা অমূল্য দত্তের ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে দিপু দত্ত বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেএমপির সহকারি পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া ও সিপি) খোন্দকার হোসেন আহমদ।
পুলিশ জানায়, জেলার রূপসা উপজেলায় সন্ত্রাসীর গুলিতে এক যুবক নিহত এবং দুই জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত ৮ টার দিকে উপজেলার রাজাপুর গ্রামের পপুলার এলাকায় সাব্বির (২৭) নামের এক যুবক গুলিতে নিহত হন। এ সময় সাদ্দাম ও মিরাজ ওরফে কাউয়া মিরাজ নামে আরো দুজন গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ সাদ্দামকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই রাতেই ঢাকায় রেফার্ড করা হয় । গুলিবিদ্ধ মিরাজসহ আরেকহ খুলনা নার্গিস মেমোরিয়াল হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে পুলিশ আসার আগে পালিয়ে যান বলে পুলিশ জানায়।
শনিবার রাতে রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ‘বি কোম্পানি’ গ্রুপের প্রধান গ্রেনেড বাবুর প্রধান দুই সহযোগী কাউয়া মিরাজ এবং সাব্বির। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে মাদককে কেন্দ্রে করে আইচঘাতী ইউনিয়নের রাজাপুর এলাকায় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী সোহাগের বাড়িতে গোলাগুলি করে। ঘটনাস্থলে গুলিতে সাব্বির মারা যায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আহত কাওয়া মিরাজ খুলনার নার্গিস মেমোরিয়াল ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের অপর সহযোগী সাদ্দাম মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হলে সেখান থেকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে মরদেহের পাশে ছয়টি খালি কার্টিজ, চারটি লাইভ কার্টিজ, কিছু ইয়াবা ট্যাবলেট এবং মাদক সেবনের সরঞ্জাম পাওয়া যায়। মরদেহের পাশে গ্রেনেড বোমা সদৃশ একটি বস্ত পাওয়া যায়। এ ঘঁনার পর থেকে সোহাগও পলাতক রয়েছে।
নগরীতে নার্গিত মেমোরিয়াল হাসপাতালের সহকারি ম্যানেজার মো: শহিদুল্লাহ শাহিদ শনিবার বিকেলে জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার দিকে দুইজন ব্যক্তি ইনজুরি অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে আসেন। তাদের শরীর থেকে রক্ত ঝড়ছিলো। যেহেতু পুলিশ কেস জার কারণে আমরা তাদেরকে রাখেনি। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর র্পই তারা দ্রুত চলে যায়। এর কিছুক্ষনের পরই হাসপাতালে পুলিশ আসে। তারা বিস্তারিত জানতে চাই। আমরা তাদেরকে বিষয়টি অবহিত করেছি। সিসি ফুটেজ সব ধারণ করা আছে। হাসপাতালের এমডি না থাকায় সিসি ফুটেজ দেখানো সম্ভব হচ্ছে না। তার এই তথ্য মতে অনুযায়ী গুলিবিদ্ধ হয়েছে মোট ৪ জন। এর মধ্যে একজন খুমেক হাসপাতালে অপরটি ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। সাদ্দামের ভাই জুয়েল জানায়, তার ভাইয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এখনো তার জ্ঞান ফেরেনি।
অপরদিকে, একই রাতে নগরীর হরিণটানা এলাকায় বালু এবং জমির ব্যবসায়ী বাবুল দত্ত (৫০) নামের এক ব্যক্তিকে জবাই করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাত ১০ টার দিকে নগরীর হরিণটানা থানাধীন রাজবাঁধ এলাকার দক্ষিণ পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত বাবুল দত্ত দক্ষিণপাড়া এলাকার বসিন্দা অমূল্য দত্তের ছেলে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বাইরের কাজ শেষ করে বাবুল দত্ত মোটরসাইকেলে বাড়িতে ফিরছিলেন। এ সময়ে কয়েকজন দুর্বৃত্ত গতিরোধ করে ফাঁকা একটি প্লটের মধ্যে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়। পরবর্তীতে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে পুলিশ খবর পেয়ে ঘঁটনাস্থলে পৌছায়।
হরিণটানা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ খায়য়ল বাসার বলেন, ধারালো ছুরি দিয়ে বাবলু দত্তকে হত্যা করা হয়েছে। কি কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা এখন বলা সম্ভব হচ্ছেনা। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে দিপু দত্ত বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তিনি বলেন, হত্যাকা-ের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলমান রয়েছে।
মামলায় এজাহারে উল্লেখ করা হয়, দিপু দত্তের বাবা বাবলু দত্ত খুলনা রাজমিস্ত্রী কাজের পাশাপাশি ধর্ম মামা সুমন শেখ (৪০) এর সাথে যৌথ ভাবে জমিজমা, ইট বালুর, সিমেন্ট ও কাপড়ের ব্যবসা করতেন। ২৬ জনু রাত ১১টায় প্রতিবেশি বৃত্তান্ত (২৮) দিপুর কাছে ফোন করে জানায় যে, দেবাশীষ এর মেহগুনি বাগানের পাশে রাস্তর উপর তার বাবার মটর সাইকেলটি প্রায় একঘন্টা যাবৎ রাখা আছে। তখন দিপু বাবার মোবাইল নম্বরে ফোন করে, কিন্তু ডায়াল হলেও রিসিভ না করায় দিপু ও তার ধর্ম মামা সুমন শেখ সহ দেবাশীষ এর মেহগুনি বাগানের সামনে গিয়ে বাদীর বাবার মটর সাইকেলটি রাস্তার উপর দেখতে পায়। তখন দিপু মোবাইল এর লাইট জালিয়ে তার বাবাকে আশ পাশে খোঁজা-খুজি করাকালে হরিণটানা থানাধীন রাজবাঁধ দক্ষিণপাড়াস্থ কাচা রাস্তার পশ্চিম পাশে দেবাশীষ এর মেহগুনি বাগানের ২০/২৫ গজ ভিতরে তার বাবার গলা কাটা রক্তাক্ত লাশ দেখতে পায়। পরবর্তীতে থানা পুলিশ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। বাদীর ধারনা ২৬ জুন রাত ৮টা ৩৫ মিনিট হতে রাত ১১টার মধ্যে যে কোন সময় অজ্ঞাতনামা আসামীরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী উল্লেখিত ঘটনাস্থলে বাদীর বাবার মটর সাইকেল থামিয়ে পরষ্পর যোগসাজসে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার বাবাকে জবাই করে হত্যা করে ফেলে রেখে যায়।