স্থানীয় সংবাদ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মত্যাগ ও সংগ্রাম জাতির ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায় : অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান

# জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে মহানগরী জামায়াতের দোয়া অনুষ্ঠান #

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান শহীদদের আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের কথা স্মরণ করে বলেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মত্যাগ ও সংগ্রাম জাতির ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়। তিনি বলেন, তাদের রক্তে লেখা এই ইতিহাস চিরকাল বাঙালির প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। আমাদের আজকের দায়িত্ব হলো তাদের স্বপ্ন ও আদর্শকে ধারণ করে একটি ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের শুরু হয়েছিল এই জুলাইয়ে। অকুতোভয় ছাত্র-জনতা, শ্রেণি, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি পেশার ও বয়স সব ভেদাভেদ মুছে দিয়ে এক কাতারে এসে দাঁড়িয়েছিল। জাতির সম্মিলিত প্রতিরোধে গড়ে ওঠে স্বৈরশাসকের ভিত্তিমূল। তাই আজকের এই জুলাই একটি নতুন সূর্য, ভিন্ন এক জুলাইয়ের গল্প। তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান এর পূর্বে এক ভয়াবহ দু:শাসন এদেশের বুকে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসেছিল। আবু সাঈদ, মুগ্ধ ও হাফেজ সিয়াম এর মত শত শত শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা মুক্ত পরিবেশ পেয়েছি। আমরা এই শহীদদের কাছে চির কৃতজ্ঞ। জুলাই অভ্যুত্থানে হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। আমরা তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞ। তিনি জুলাই বিপ্লবের আদর্শকে ধারণ করে দেশ জাতির কল্যাণে একনিষ্ঠ ভূমিকা রাখার আহবান জানান। তিনি বলেন, ইমাম হোসাইন (রা.) এর আদর্শে উজ্জীবীত হয়ে জুলাই অভ্যুত্থান এর শহীদেরা এদেশের মানুষের পক্ষে জালিমের বিপক্ষে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালা জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদানদের শাহাদাতকে ইমাম হোসাইন (রা.) এর সাথে কবুল করে নিন। মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেলে খুলনা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগ নগরীর আল ফারুক সোসাইটি মিলনায়তনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ, আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের জন্য দোয়া অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
দোয়া অনুষ্ঠানে খুলনা মহানগরী নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট শাহ আলম, প্রিন্সিপাল জাহাঙ্গীর আলম, আজিজুল ইসলাম ফারাজী, কর্ম পরিষদ সদস্য অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর, মিম মিরাজ হোসাইন, খুলনা সদর থানা আমীর এস এম হাফিজুর রহমান, সোনাডাঙ্গা থানা আমীর জি এম শহিদুল ইসলাম, খালিশপুর থানা আমীর মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন, দৌলতপুর থানা আমীর মুশাররফ আনসারী, আড়ংঘাটা থানা আমীর মনোয়ার আনসারী, হরিণটানা থানা আমীর আব্দুল গফুর, লবণচরা থানা আমীর মোজাফফর হোসেন, ব্যবসায়ী থানা সেক্রেটারি আজিজুর রহমান স্বপন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শাহাদাৎবরণকারী ছাত্র-জনতার রুহের মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
মহানগরী আমীর আরও বলেন, ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭১, ১৯৯০ সহ আমাদের সকল আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস বিকৃত হয়েছে। ২০২৪ এর ইতিহাস বিকৃত করা যাবে না। এজন্য শহীদদের স্মরণে ২৫০০ পৃষ্ঠার ১০ খন্ডে ডকুমেন্টারী করা হয়েছে। এতে শহীদদের পরিচয়, গণ-অভ্যুত্থানে ভূমিকা ও শহীদ হওয়ার ঘটনা এবং স্থান সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস মুছে যেতে দিবে না জামায়াতে ইসলামী। তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ এ সব শহীদ আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের । তিনি বলেন, যারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করতে গিয়ে আহত-পঙ্গুত্ব বরণ করেছে তারা ইসলামের দৃষ্টিতে গাজী এবং গণহত্যার শিকার সকলে শহীদ। তিনি বলেন, আমাদের শহীদেরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার যেই স্বপ্ন দেখেছে, সেই স্বপ্নের বীজ জামায়াতে ইসলামী তার প্রতিষ্ঠাকালেই বুনেছে। জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘকাল ধরে সেই আন্দোলনই করে আসছে। জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলন সঠিক ছিল এদেশের ছাত্র-জনতা ২০২৪-এ বুঝতে পেরেছে। এজন্য তারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশকে ভালোবেসে ফ্যাসিবাদের হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করেছে। তিনি উপস্থিত সকলকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব রক্ষায় রাজপথ ও আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ ভুমিকা রাখার আহ্বান জানান। বাংলাদেশের জন্য আগামীতে ন্যায়-পরায়ন শাসক কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এসব উপস্থিত সকলে আমীন আমীন কন্ঠে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button