স্থানীয় সংবাদ

রূপসায় গুলিবিদ্ধ সাব্বির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বি-কোম্পানির কাউয়া মিরাজ সহ আসামী ১৮

# রূপসা থানার হত্যা মামলা :
# সন্ত্রাসী আজিজ আটক

স্টাফ রিপোর্টার : খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)’র তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবুর অনুসারীদের মধ্যে মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি রূপসার আইচগাতির রাজাপুর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে সাব্বির (৩২) নিহত হয়। এ ঘটনায় নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন বি-কোম্পানির অন্যতম সদস্য নগরীর কাস্টম ঘাট এলাকার সন্ত্রাসী কাউয়া মিরাজ, রূপসার রহিমনগর এলাকার সন্ত্রাসী আব্দুল আজিজ ও সন্ত্রাসী সোহাগ হাওলাদার সহ ১৮ জনের নামে রূপসা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে সন্ত্রাসী আজিজকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
নিহতের মা মোসাঃ খাদিজা বেগম (২৯ জুন) বাদী হয়ে রূপসা থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন। যার মামলা নং, ১৭। ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড-১৮-৬০। মামলার অপর আসামীরা হলেন, খুলনার নগরীর সোনাডাঙ্গা শেখপাড়া আবুল সড়ক এলাকার কালা ফারুকের ছেলে সৌরভ গাজী (২৬), রূপসার রামনগর এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুস সালামের ছেলে মো. সাকিব শেখ (২৫), সোনাডাঙ্গা গোবরচাকা (টিনা মসজিদের পাশ) এলাকার সুলতান হোসেনের ছেলে চিংড়ি পলাশ (২৬), আইচগাতি এলাকার হাফিজ ছোট হাফিজ (৩০), শামছুর রহমান রোড মন্দিরের পিছন এলাকার সোহাগ সাহা (৩৫), রাজাপুর রশিদ হাওলাদারের ছেলে নজরুল হাওলাদার (৪০), সোনাডাঙ্গা নবীনগর এলাকার সাদ্দাম (৩২), নগরীর চানমারি মৃত মশিউর রহমানের ছেলে আশিক (২৭), দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা পশ্চিম পাড়া এলাকার আব্দুল আউয়ালের ছেলে আব্দুল বাছেদ বিকুল (২৮), রূপসার রামনগর সোহরাব মোল্লা’র ছেলে সাগর (২৮), নগরীর খালিশপুর বাস্তহারা এলাকার কবিরের ছেলে অমিত ওরফে টুকাই অমিত (৩২), বয়রা আজিজের মোড় এলাকার শাহাজাহানের ছেলে শাওন ওরফে ট্যাংকি শাওন (৩৮), বয়রা রায়ের মহল আড়ংঘাটা এলাকার খালেকের ছেলে সুফিয়ান, নগরীর কাষ্টমঘাট এলাকার সুজন ও বয়রা আজিজের মোড় এলাকার সুরুজ সহ অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন।
উল্লেখ্য : বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাত আনুমানিক ৯ টা ৪৫ মিনিটে রূপসা থানাধীন আইচঘাতী ইউনিয়নের রাজাপুর এলাকায় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী সোহাগের বাড়িতে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। গোলগুলির ঘটনায় সন্ত্রাসী কাউয়া মিরাজ, সাব্বির, সাদ্দামসহ মোট ৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়। এর মধ্যে সাব্বির ও কাউয়া মিরাজ গ্রেনেড বাবুৃর একান্ত সহযোগি। তবে সাব্বির মারা যায়। গুলিবিদ্ধ সাদ্দামকে খুমেক হাসপাতাল থেকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয় এবং কাউয়া মিরাজ গুলিবিদ্ধ হয়ে নার্গিস ক্লিনিকে চিকিৎসকদের ভয় দেখিয়ে চিকিৎসা নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে ছয়টি খালি কার্টিজ, চারটি লাইভ কার্টিজ, ইয়াবা এবং মাদক সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুুলিশ। এদিকে : খুলনা মহানগরীর শীর্ষ সন্ত্রাসী রনি চৌধুরী বাবু ওরফে গ্রেনেড বাবুর তৈরী এই সন্ত্রাসী সংগঠন বি-কোম্পানির মাদক ব্যবসার প্রতিদ্বন্দীতা নিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে খুন-জখম ও গোলাগুলির মত ঘটনা। (২৬ জুন) রাতে উপজেলার রাজাপুর গ্রামের পপুলার এলাকার গোলাগুলির ও খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজিজকে পুলিশ গ্রেফতার করে। আজিজ শেখ রহিমনগর এলাকার মহিদুল শেখের ছেলে। এই আজিজ রূপসায় মাদক সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য। বর্তমানে যুবদলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করে আসছিল এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আবার ৫ আগষ্টের আগে সক্রিয় ভাবে যুবলীগ করে অপকর্মে লিপ্ত ছিলো। যেমন অবৈধ কয়লার চুল্লি ও মাদকের রমরমা ব্যবসা করে আসছিল। এমনকি রূপসায় যুবক রিয়াজুল হত্যার সাথে যুক্ত ছিলো এই আজিজ ও কাউয়া মিরাজ। রিয়াজুলকে হত্যার পর ওইদিন তার তালিমপুরের বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয় তারা। এছাড়া বি-কোম্পানির মিরাজ ওরফে (কাউয়া মিরাজ) এর অন্যতম সহযোগী এবং প্রশ্রয়দাতা হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে আজিজ। বিভিন্ন ব্যবসার আড়ালে মাদক ব্যবসা তার আয়ের প্রধান উৎস ছিলো। রাজনৈতিক ভাবে পদ-পদবি না থাকলেও হাত রয়েছে বিএনপির উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কয়েকজন নেতাদের সাথে। জানা যায়, রূপসার রামনগর-রহিমনগর, মোসাব্বারপুর, চর-মোসাব্বারপুর, তালিমপুর এলাকায় মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনা করেন আজিজ। আর তার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে কাজ করে আপন ছোট ভাই জহির। গত বছরের ২৪ মে রাতে মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয় জহিরকে। পরে চলতি বছরে সরকার পতনের পর ৬ আগষ্ট জহিরকে হামলাকারী গ্রুপের অন্যতম সদস্য রিয়াজুল খুন হয়। এই ঘটনার পর থেকে রূপসা উপজেলার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নেয় বি-কোম্পানির সদস্য কাউয়া মিরাজ। আর মিরাজের সাথে সখ্যতা থাকায় বর্তমানে রামনগর-রহিমনগর, চর-মোসাব্বারপুর, তালিমপুর এলাকায় একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেছেন সন্ত্রাসী আজিজ ও জহির। আজিজ ও জহিরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, লুটপাট, আধিপত্য বিস্তার, সাধারণ মানুষের ওপরে অত্যাচার ও কিশোরগ্যাং পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। ৫ আগষ্টের পূর্বে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে এসব অপকর্ম চালিয়ে গিয়েছে তারা। বর্তমানে বিএনপির কিছু কালারিং কয়েকজন নেতার সাথে যুক্ত হয়ে এখনো রয়েছে বহাল তবিয়তে। আজিজ ও জহিরকে বিভিন্ন সময় অস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখেছে এলাকার সাধারণ মানুষ। আজিজ-জহিরের অপকর্ম নিয়ে মুখ খুলতে কেউ ভয়ে সাহস পর্যন্ত পাইনি। রূপসা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, রূপসায় সাব্বির হত্যার ঘটনায় বি-কোম্পানির অন্যতম সদস্য ও সন্ত্রাসী কাউয়া মিরাজের সহযোগী আজিজকে রহিমনগর এলাকা থেকে সেনাবাহিনী, ডিবি পুলিশ ও রূপসা থানা পুলিশের যৌথ অভিযান পরিচালনা করে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করে তাকে জেলা হাজতে প্রেরণ করা হয়।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button