কেসিসির সঠিক পরিকল্পনার অভাবে খুলনায় জলাবদ্ধতা

# সাবেক মেয়র ও পরিকল্পনা বিভাগের অদক্ষতাকে দায়ী করছেন নগরবাসী, দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে না # কেসিসির জলাবদ্ধতা নিরসনের
উদ্যোগেও সুফল মিলছেনা # সিটি কর্পোরশনের রাস্তাসমূহ বার বার উচু করা হলেও সঠিকভাবে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা রাখা হয়নি
স্টাফ রিপোর্টার ঃ কেসিসি’র পরিকল্পনা বিভাগের অদক্ষতায় শুধু ড্রেন নির্মান করেই কোটি কোটি টাকা গচ্চা দেওয়া হয়েছে। মেলেনি জলাবদ্ধতা নিরসনের কার্যকরি সুফল। নগরবাসী বলছে, জলাবদ্ধতার জন্য কেসিসির পরিকল্পনা বিভাগের অদক্ষতায় ভুল নির্দেশনা চলে আসছে সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের সময়কাল পর্যন্ত। যারা অপরিকল্পিত নির্দেশনা দিয়ে শত শত কোটি জলে ঢেলেছে। তারা কেসিসি পরিকল্পনা বিভাগের অদক্ষতাকেও দায়ি করেছেন।
আকাশ থেকে বৃষ্টির ফোঁটা পড়া মাত্রই খুলনা শহরের প্রধান প্রধান সড়কে জলাবদ্ধতা যেন অনিবার্য। বিশেষ করে সমুেদ্র লঘুচাপ, নি¤œচাপসহ বৈরী আবহাওয়াতে এ শঙ্কা আরো বাড়ে, আর বর্ষাকাল তো আছেই। মাঝারী হতে ভারী বৃষ্টি হলেই খুলনার প্রধান প্রধান সড়কে হাঁটুপানি, কোথাও কোথাও তলিয়ে যায়। সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে ও ২০২৩ সালে নির্বাচিত সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের মূল প্রতিশ্রুতি ছিল জলাবদ্ধতা নিরসন। জলাবদ্ধতা নিরসনে ৮২৩ কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প হাতে নেন তিনি। গত সাড়ে পাঁচ বছরে এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬’শ কোটি টাকা খরচ করে নগরীর বিভিন্ন ড্রেন নির্মাণ ও সাতটি খাল খনন করা হয়েছে। এরপরও নগরবাসী সুফল না পাওয়ায় প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুধী সমাজের ব্যক্তিবর্গ?
নগরবাসীর অভিযোগ, খুলনা নগরীর পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম ২২টি খাল দখলমুক্ত ও সংস্কার না করা, নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করা এবং জলাধার ভরাট হয়ে যাওয়াতেই মাঝারী বা ভারী বৃষ্টিপাতে তলিয়ে যাচ্ছে খুলনা নগরী, পিছু ছাড়ছেনা দূর্ভোগ। এছাড়া উন্নয়ন কাজ সঠিকভাবে ও দ্রুত সম্পন্ন না হওয়ার দরুন বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগ আরো বাড়ছে। নগরবাসীর দাবি, জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থার পাশাপাশি দ্রুত উন্নয়নকাজ করতে হবে, নতুবা সামনে দিনে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন তারা। বিশেষজ্ঞ ও নাগরিকেরা বলছেন, শত শত কোটি টাকা খরচ করে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও অপরিকল্পিত উন্নয়ন, খাল দখল ও নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করায় এই দুর্ভোগের পুনরাবৃত্তি ঘটছে। একই সাথে ভৈরব ও রূপসা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর পানিধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে বৃষ্টির পানি নদীতে নামতে পারছে না, বরং জোয়ারের সময় শহরের পানি আরও বাড়ছে। এছাড়া নগরীর পশ্চিমাঞ্চলের বিল পাবলা ও রায়ের মহলের মতো প্রাকৃতিক জলাধারগুলো আবাসন ব্যবসায়ীরা ভরাট করে ফেলায় বৃষ্টির পানি জমার আর জায়গা নেই, যে কারণে এই খুলনার এই জলাবদ্ধতার নিরসন হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।
শিক্ষার্থী আরিক বলেন, কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি। পরীক্ষা চলছে, বৃষ্টির কারণে রাস্তায় পানি জমে যেখানে যেখানে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। পরীক্ষা না হলে বৃষ্টির মধ্যে বাইরে যেতাম। চারিদিকে স্যাঁত স্যাঁতে কাদা।
প্রাইভেট চাকুরিজীবি সুমন বলেন, সকালে রেইন কোর্ট পড়ে মোটরসাইকলে নিয়ে অফিসরে কাজে বের হয়। সামান্য একটু বৃষ্টি হলেই খুলনা গুরুত্বপূর্ন সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। খুলনা জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যর্থ কেসিসির প্রকৌশলীরা। তাদের অদক্ষতার কারণে খুলনায় সামান্য বৃষ্টিতে যেখানে সেখানে জলাবদ্ধতা। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ড্রেনের কাজে ধীরগতি এ দূর্ভোগের অন্যতম কারণ।
এ বিষয়ে সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনা মহানগর সাঃ সম্পাদক এড. কুদরত-ই খুদা বলেন, ভৈরব ও রূপসা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর পানিধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে বৃষ্টির পানি নদীতে নামতে পারছে না, বরং জোয়ারের সময় শহরের পানি আরও বাড়ছে। এ ছাড়া, নগরীর পশ্চিমাঞ্চলের বিল পাবলা ও রায়ের মহলের মতো প্রাকৃতিক জলাধারগুলো আবাসন ব্যবসায়ীরা ভরাট করে ফেলায় বৃষ্টির পানি জমার আর জায়গা নেই। খুলনার জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের জন্য সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে উদ্যোগ গ্রহন করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।
এ বিষয়ে কেসিসির সংশ্লিস্টরা জানান, জলাবদ্ধতা নিরসন একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রকল্পের আওতায় পাম্প স্টেশন ও স্লইসগেট সংস্কারের মতো কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। এগুলো শেষ হলে নগরবাসী সুফল পাবে।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোঃ মিজানুর রহমান জানান, গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি এবং দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ূ সক্রীয় থাকার উপকূলীয় এলাকা তথা দক্ষিণাঞ্চলে মাঝারী হতে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যহত রয়েছে।