স্থানীয় সংবাদ

লাশের নগরী খুলনা : থামছে না খুন!

# খুলনায় আবারো দৃর্বত্তদের গুলিতে সাবেক যুবদল নেতা মাববুব মোল্লা খুন #
# # ধারালো অস্ত্র দিয়ে দু’পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়েছে #
# ঘটনাস্থল থেকে ৭ টি পিস্তলের গুলির খোসাসহ অন্যান্য আলামত জব্দ #
# খুনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে কাজ করছে আইন-শৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা #
# ওই ঘটনায় শোকাহত গোটা এলাকা ও পবিবার, প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের সড়ক অবরোধ ও সমাবেশ #

স্টাফ রিপোর্টার/খানজাহান আলী থানা প্রতিনিধি ঃ খুলনা মহানগরী যেন এখন এক লাশের নগরী। কোন ক্রমেই খুন খারাবি থামানো যাচ্ছে না এখানে। গতকাল আবারো দুর্বৃত্তের ছোঁড়া গুলিতে খুন হয়েছেন সাবেক যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান মোল্লা (৪০)। শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে দৌলতপুর থানাধীন মহেশ^রপাশা পশ্চিম পাড়া এলাকায় ওই খুনের ঘটনা ঘটে। নিহত মাহবুবুর রহমান মোল্লা ওই এলাকার আব্দুল করিম মোল্লার জ্যেষ্ঠ পুত্র। পূর্ব শক্রতার জের ধরে সু-পরিকল্পিতভাবে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশের প্রাথমিক ধারনা, সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (১১ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে সাবেক যুবদল নেতা মাহবুব মোল্লা তার মহেশ^রপাশা পশ্চিমপাড়া নিজ বাসার গেট সংলগ্নে বসে প্রাইভেটকার ধোঁয়ামোছার কাজ করছিলেন, ওই কাজে তাকে সাহায্য করছিলেন একই এলাকার ভ্যানচালক গাজী সোলায়মান নামের এক যুবক। এসময় মহেশ^রপাশা পশ্চিমপাড়া সড়কের দক্ষিণ দিক হতে মোটর সাইকেলযোগে অজ্ঞাতনামা ৩ দুর্বত্ত মাহবুবকে লক্ষ্যে করে ৬/৭ রাউন্ড পিস্তলের গুলি ছোঁড়ে। দুর্বত্তদের ছোঁড়া গুলি মাহবুবের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে লাগে বলে জানা গেছে। গুলির শব্দ শুনে মাহবুবের সাথে থাকা ভ্যানচালক পালিয়ে গেটের ভেতর প্রবেশকালে তাকে ও লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে দৃর্বত্তরা, সে প্রাণে বেঁচে গেলেও মাহবুব গুলিবৃদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটে পড়লে দৃর্বত্তরা তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে পায়ের দুই রগ কেটে দেয়। দুর্বত্তদের ছোড়া গুলি তার বাড়ীর প্রাচীর, মূল প্রবেশদ্বারসহ আশপাশের ভবণে গিয়ে লাগে। অতঃপর ভ্যানচালক সোলায়মানের চিৎকার ও গুলির শব্দ শুনে তার পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থল হতে মাহবুবকে উদ্ধার করে খুমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষনা করে। ওই ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সিআইডি ক্রাইমসীন ইউনিটের কর্মকর্তাবৃন্দ, পিবিআই’র কর্মকর্তাবৃন্দ সেখানে উপস্থিত হয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন। ঘটনাস্থল হতে ৭ টি পিস্তলের গুলির খোসাসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করেছে তদন্তের সংশ্লিষ্টরা। পুলিশ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ভ্যানচালক সোলায়মানকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বর্তমানে নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য খুমেক হাসপাতালে ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়ার রয়েছে। প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে তার লাশ হস্তান্তর করা হবে। পাশাপাশি ওই খুনের ঘটনার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সদ্য খুন হওয়া সাবেক যুবদল নেতা মো. মাহবুব মোল্লার বিরুদ্ধে দৌলতপুরসহ বিভিন্ন থানায় মাদক, মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধে ৮টি মামলা রয়েছে। নিহত মো. মাহবুব মোল্লা দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন বলে জানা গেছে এবং সর্বশেষ গত ১৮ ফেব্রুয়ারী খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় তাকে যুবদল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এদিকে সাবেক যুবদল নেতা মাহবুবের খুনের ঘটনায় গোটা এলাকা ও পরিবার ও দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সাবেক যুবদল নেতা মাহবুবের হত্যার প্রতিবাদ ও খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা শুক্রবার বিকালে খুলনা-যশোর মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে টায়ারে আগুন জ¦ালিয়ে ও সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানায়, এসময় তারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে যুবদল নেতা মাহবুব হত্যাকা-ের প্রকৃত রহস্য উৎঘটনসহ খুনিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারসহ সর্ব্বোচ শাস্তির দাবিও জানান।
নিহতের বোন জানান, আমার দুই ভাইয়ের মধ্যে মাহবুবুর রহমান বড়। মাহবুবের স্ত্রী এবং দুটি অবুঝ কন্যা সন্তান রয়েছে। এই মুহুর্তে মানসিক অবস্থা দেখছেন, আমরা এখন কিছুই বলতে পারবো না। তবে আমরা আপনাদেরকে ডেকে নিয়ে সব কিছু বলবো, এর শেষ দেখে নিবো। প্রতিবেশী মোঃ রেজাউল করিম জানান, গুলির শব্দ পেয়ে আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। এসে দেখতে পাই মাহবুবের রক্তাক্ত নিথর দেহ রাস্তার পাশে পড়ে আছে। নিহত মাহবুবের মাথায়, কানে, মুখে সহ শরিরের বিভিন্ন স্থানে গুলি করা হয়েছে। তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার পায়ের রগ কেটে দেয় দুর্বত্তরা। কৃষিজীবী শেখ রহমত উল্লাহ বলেন, মসজিদে নামাজ চলছিল। এসময় গুলির শব্দ শুনতে পায়। কে বা কারা যেন মাহবুবের উপর গুলি ছুঁড়ে তাকে গুলি করে ফেলে রেখে গেছে। তাৎক্ষনিক তাকে দ্রুত উদ্ধার করে খুমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার ডাক্তাররা বলে সে মারা গেছে।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর আতাহার আলী জানান, ঘটনাটি দুপুর দেড়টার দিকের। মোটরসাইকেল যোগে আসা অজ্ঞাতনামা ৩ দুর্বত্ত সাবেক যুবদল নেতা মাহবুবকে লক্ষ্য করে ৭ রাউন্ড পিস্তলের গুলি ছোঁড়ে। দুর্বত্তদের ছোঁড়া গুলি তার মাথাসহ শরীরের কয়েকটি অংশে লাগে, ধারনা করা হচ্ছে পূর্ব শক্রতার জের ধরেই এই খুনের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থল হতে ৭ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত মাহবুবের বিরুদ্ধে দৌলতপুরসহ বিভিন্ন থানায় মাদক, মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে। আমরা তদন্ত শুরু করেছি, আসামী গ্রেফতারে আমাদের কয়েকটি টিম কাজ করছে। আশাকরি, দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামী গ্রেফতারে সক্ষম হবো।
এ ব্যাপারে উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. তাজুল ইসলাম জানান, যুবদল নেতার খুনের ঘটনায় ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ তদন্তের কার্যক্রম শুরু করেছি। আমরা একটি ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি, ওই ফুটেজ ধরেই তদন্ত চলছে। খুনের কার্যক্রমে ৩ জন দুর্বত্ত অংশ নেয়। প্রাথমিক ধারনা করা হচ্ছে, পূর্ব শক্রতার জের ধরে এই হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটতে পারে। আসামী শণাক্ত ও গ্রেফতারের ব্যাপারে আমাদের অভিযান চলমান আছে। আশাবাদি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এ খুনের ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবো।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button