স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত অব্যহত

# সোমবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত খুলনায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৭ মিলিমিটার #
# এমন অবস্থা আরো ২/১ দিন থাকতে পারে, বিপাকে নি¤œ আয়ের মানুষ #
# সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে নগরবাসীর স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত #

মো. আশিকুর রহমান : উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে খুলনায় মুষলধারার বৃষ্টিপাত ও দমকা বাতাস অব্যহত রয়েছে। বিরতিহীন বৃষ্টিপাতের কারণে কর্মব্যস্ত নগরবাসীর দুর্ভোগ বেড়েছে। বিশেষ শহরমুখি কর্মজীবি মানুষসহ পথচারী, শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের স্বাভাবিক চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে, বৃষ্টির কবলে পড়ে অনেকেই দৌড়ে গিয়ে টিনের সেড, চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন ছাউনিযুক্ত স্থানে গিয়ে সাময়িক অবস্থান নেয়। বিশেষ কর্মজীবি দিনমুজুর, রিক্সা-ভ্যান চালকসহ শ্রমজীবি মানুষেরা আরো বেশি বিপাকে পড়েছে। খুলনা আবহাওয়া অফিসের তথ্যনুসারে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসলগ্ন বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়াই গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি এবং মৌসুমি বায়ূ সক্রিয় থাকার উপকূলীয় এলাকা তথা দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ জায়গায় হালকা হতে মাঝারী হতে অব্যহত থাকতে পারে, সেই সাথে দমকা বাতাসও অব্যহত রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় সোমবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত খুলনায় ২৭ মিলিমিটার এবং সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, এ অবস্থা আরো ২/১ দিন অব্যহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার (১৪ জুলাই) নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে বিরতিহীন বৃষ্টিপাতের দরুন নগরবাসীর স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়েছে, শহরমুখি কর্মব্যস্ত নগরবাসীকে কর্মস্থলে যেতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন পেশাজীবি, কর্মজীবি মানুষসহ পথচারী, শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের স্বাভাবিক চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এমন বৈরী আবহওয়ার কবলে পড়ে দিনমুজুর, রিক্সা-ভ্যান চালকসহ শ্রমজীবি মানুষেরা কর্মে না নামায় আরো বেশি বিপাকে পড়েছেন তারা। দিনজুড়ে এমন বৃষ্টিপাত অব্যহত থাকায় অনেকেই ঘর হতে বের হতে পারেনি। যদি কেউ বাইরে বের হয়েছে, তবে হাতে ছাতা বা রেইনকোর্ট পড়ে বাইরে বেড়িয়েছে। লাগাতার বৃষ্টিপাতের কারণে নগরীর নিচু এলাকাগুলোর খানাখন্দে সাময়িক জলাদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাইভেট কোম্পনীর বিক্রয় প্রতিনিধি আবু আসলাম জানান, মর আর বাঁচো, সকাল ৮টার মধ্যে অফিসে ঢুকতে হবে। অবশেষে গতকাল সকালে ভিজতে ভিজতে সাইকেল চালিয়ে তড়িঘড়ি করে অফিসে গেলাম, এরপর অর্ডার কাটতে মার্কেটে নেমেও ফল পাইনি। বর্ষায় কারণে অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের দোকানপাট বন্ধ ছিল। তেমন অর্ডার হয়নি। এমন আবহাওয়ার মধ্যে আমারও ইচ্ছে করছিলো না ডিউটিতে যেতে। প্রাইভেট চাকুরী, না গেলে হাজিরা কেটে দেবে। তাই ইচ্ছার বিরুদ্ধেও যেতে হয়েছে।
রিক্সা চালক পলাশ দাস জানান, রিক্সা চালিয়ে সংসার চালায়। রিক্সার প্যাডেলের উপর আমার জীবন-জীবিকা। বর্ষা শুরু হয়েছে, আর থামার নাম নেই। কত আর বর্ষায় ভিজে পারা যায়। একটু বেশি ভিজলে গায়ে জ¦র চলে আসবে। আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমার পরিবারকে দেখবে কে? তাই যতক্ষন পারি রিক্সা চালাই। বৃষ্টির এমন অবস্থা আরো ২/১ দিন থাকলে না খেয়ে অনাহারে থাকতে হবে।
দিনমজুর (মুঠে) মো. শহিদুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন দৌলতপুর বাজার হতে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস লোকেরা মেইন রাস্তা পর্যন্ত নিয়ে যায়। গিয়ে ১০ টাকা দেয়। প্রতিদিন চালের বস্তাসহ অন্যান্য মালামাল টেনে ৪/৫’শ টাকা আয় করি। কিন্তু এই দু’দিন টানা বর্ষণের কারনে বাজারে তেমন ক্রেতা-সাধারন সমাগম কম, যে কারণে আয়ও কম। খুবই কষ্টে এই দুটি দিন যাচ্ছে। ইজিবাইক চালক আতিকুল ইসলাম লাভলু জানান, টানা দুই দিন বৃষ্টি লেগেই আছে। এই দু’দিন বাইরে গাড়ী নিয়ে বের হতে পারি নাই, ঘরে বসে আছি। বের হলেও লাভ ছিল না, কারণ রাস্তায় তেমন যাত্রী নেই। কাজ ছাড়া বিনা প্রয়োজনে তেমন কেউ বাইরে বের হয়নি। সমিতির কিস্তি আছে, সংসার খরচ আছে, গ্যারেজ ভাড়া আছে। সবমিলিয়ে বর্ষার কারনে দুটি দিন পিছিয়ে পড়লাম।
পথচারী শেখ আরাফাত হোসেন জানান, দেয়ানা এলাকার বাসিন্দা আমি। কাজের সুবাদে এবং
শুভাকাংক্ষিদের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য কল্পতরু সংলগ্ন মাঠে প্রায় প্রতিদিনই আসি। দুঃখের বিষয় কল্পতরু সংলগ্ন পুরাতন সাতক্ষীরা সড়কের যে বেহাল দশা, এ ব্যাপারে আমার বলার ভাষা নাই। পত্র-পত্রিকায় কয়েকবার নিউজ হওয়ার পরও কর্তৃপক্ষ এখনো নিরব। এ বেহাল সড়ক দিয়ে মানুষ যাতায়াতে খুব কষ্ট পাচ্ছে। বিশেষ করে এ দুর্ভোগ আরো বেড়েছে সম্প্রতি দু’দিন বিরতিহীন বর্ষার কারণে। রাস্তার মাঝে মাঝে বিরাট গর্তে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মরণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে। বড় কোনো দূর্ঘটনা ঘটলে দায়ভার কে নেবে?
রাজমিস্ত্রি ইদ্রিস বলেন, বর্ষার ফোটা পড়লে আর রেহাই নেয়। কারন বৃষ্টি হলে ইট গাথা, প্লাস্টারসহ নানা কাজে ব্যাঘাত ঘটে। তাছাড়া হেলপার খুজে পাওয়া যায় না। পাশাপাশি বর্ষা হলে বাড়ীর মালিকগনও কাজ করাতে চান না, কারন স্যাঁত স্যাঁতে কাদা হয়ে যায়। সব মিলিয়ে বর্ষা হলে দূর্ভোগের শেষ থাকে না। কাজ না থাকায় বাড়ীতে শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছি।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোঃ মিজানুর রহমান জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসলগ্ন বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার দরুন গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি এবং মৌসুমি বায়ূ সক্রীয় থাকার উপকূলীয় এলাকা তথা দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ জায়গায় হালকা হতে মাঝারী হতে অব্যহত থাকতে পারে, সেই সাথে দমকা বাতাসও অব্যহত রয়েছে । এ অবস্থা আরো ২/১ দিন অব্যহত থাকতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button