স্থানীয় সংবাদ

খুলনা জেলখানা ফেরিঘাট’র ইজারা দরপত্র ২য় দফায় নিষেধাঞ্জার কারনে থমকে গেছে

স্টাফ রিপোর্টার : খুলনার আওতাধীন শ্রীফলতলা-সেনেরবাজার (জেড-৭০৪২) জেলা মহাসড়কের ১ম কিলোমিটারে অবস্থিত জেলখানা ফেরিঘাটের ইজারা দরপত্র ২য় দফায় নিষেধাঞ্জার কারনে সড়ক ও জনপথের সকল প্রক্রিয়া থমকে গেছে। বিগত ৩ বছরে ধ্রব এন্টারপ্রাইজ বিগত সরকারের ক্ষমতার প্রভাবে ৫৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ঘাটটি ইজারা নিয়ে ছিল। গত মার্চ মাসে অধিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে সড়ক বিভাগ দরপত্র আহ্বান করেন। চতুর্থতম দরপত্র আহ্বানে ৮৪ লাখ ৪১ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা ছিল জহুরুন এন্ড সন্স।এ সময়ে ১৫ বছর ধরে সড়ক বিভাগের কাছ থেকে ঘাট গ্রহণকারী ধ্রুব এন্টারপ্রাইজ নতুন দরদাতাকে ইজারা না দেওয়ার জন্য আদালতে মামলা করেন। এসময়ে খুলনা জেলা যুগ্ম জজ আদালত সড়ক ও জনপথ বিভাগকে নতুন ইজারা না দেওয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা দেয়। মামলায় জেলখানা ফেরী ঘাটটির মালিকানা দাবি করছেন জেলা পরিষদ ও বাংলাদেশ আভ্যন্তরিন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) উল্লেখ করা হয়। সড়ক বিভাগ গত ৩০ বছর ধরে ইজারা দিচ্ছেন সেসব প্রমানাদি জমা দিলে আদালত আবারও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। সড়ক বিভাগ পুনরায় ৫ম বার দরপত্র আহবান করে। সেই দরপত্রে ৯৬ লাখ ১০ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হয় জহুরুন এন্ড সন্স ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা আরজু ইঞ্জিনিয়ারিং ৯৫ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা। সড়ক বিভাগ ৬ষ্ঠ বার দরপত্র আহবান করে। এবার ৪র্থ ও ৫ম বার সর্বোচ্চ দরদাতা তাদের অনুকূলে ইজারা দেওয়ার দাবিতে এবং পুনরায় দরপত্র আহবান বন্ধ চেয়ে আদালতে মামলা করে।
সড়ক বিভাগ সুত্রে জানা যায়,খুলনার আওতাধীন শ্রীফলতলা-সেনেরবাজার জেলখানা ফেরিঘাটের ইজারা কার্যক্রম সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক বৈধভাবে সরকারি বিধি-বিধান মোতাবেক টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইজারা প্রদান করে রাস্ট্রীয় কোষাগারে রাজস্ব প্রদান করছে। বর্তমানে নতুন ইজারাদার নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে উক্ত ফেরিঘাটের (৫ম) আহবান বিজ্ঞপ্তি সম্পন্ন হয়েছে ও (৬ষ্ঠ) তম আহবান প্রক্রিয়া চলমান আছে। টেন্ডার আহবানে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের সাথে উক্ত মামলার বাদী মেসার্স জহুরুন এন্ড সন্স টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন। ইজারাদার নিয়োগ টেন্ডার প্রক্রিয়ার নিয়ম অনুযায়ী (৫ম) আহবানে ৪ জন দরদাতা অংশগ্রহণ করেন। তারা সকলেই তাদের উদ্ধৃত দরের সাথে (আয়কর ১০%) এবং (ভ্যাট ১৫%) হারে টাকা প্রে-অর্ডার এর মাধ্যমে দপ্তরে জমা প্রদান করেন। এটা টেন্ডার প্রক্রিয়ার নিয়ম। উক্ত মামলার বাদীর প্রে-অর্ডারের মাধ্যমে জমাকৃত টাকা টেন্ডার প্রক্রিয়ার নিয়ম অনুযায়ী জমা প্রদান করেছেন। যাহা উক্ত টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী সকল দরদাতাই অত্র দপ্তরে জমা প্রদান করেছেন। গত ১৭ জুলাই জেলা যুগ্ম জজ আদালত পূনরায় আবারও সড়ক ও জনপথ বিভাগকে ইজারা কার্যক্রম বন্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে এবং ৭ দিনের মধ্যে তাদের স্বপক্ষে ইজারা কার্যক্রম পরিচালনার সকল প্রমানাদি আদালতে উপস্থাপনের নির্দেশ দেয়। ফলে জনগুরুত্বপূর্ণ খুলনা জেলখানা ফেরীঘাটের ইজারা প্রদান কার্যক্রম ২য় দফায় বন্ধ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ তানিমুল হক বলেন, জেলখানা ফেরিঘাটের ইজারা কার্যক্রম সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক বৈধভাবে সরকারি বিধি-বিধান মোতাবেক টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইজারা প্রদান করে রাস্ট্রীয় কোষাগারে রাজস্ব জমা করছে। অন্যান্য ঘাট ইজারায় ১০ম বারও দরপত্র আহবান করা হয়েছে। সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষ বার বার দরপত্র আহবান করবে।সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয় সেটি আমি চাই না। কিন্তু জেলখানা ঘাট নিয়ে আগের দরদাতা অহেতুক মামলা করে ইজারা কার্যক্রমে বিলম্ব করেছে। এবার ৪র্থ ও ৫ম দরপত্রে সর্বোচ্চ দরদাতা মামলা করে আবারও অহেতুক বিলম্বিত করছে। আদালতে ইতিমধ্যে সকল কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জজ কোর্টের সরকারি কৌশুলী (জি পি) এড. ড. মোঃ জাকির হোসেন বলেন, খুলনা জেলখানা ঘাট অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ ফেরিঘাট। সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর জন্য এ ঘাটের ইজারা মূল নির্ধারণে সড়ক বিভাগ একাধিক বার দরপত্র আহবান করতে পারেন। আদালতে সকল কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায় রায় সড়ক বিভাগের পক্ষে আসবে। তবে ৫ম টেন্ডারে সর্বোচ্চ দরদাতা মোল্লা মন্জুর আরফিন বলেন, জুন মাস শেষ হয়েছে। জুলাই মাস থেকে ঘাট নতুন ইজারাদার আদায় করবে। কিন্তু আমরা পর পর দু’বার সর্বোচ্চ দরদাতা হলেও ইজারা আমাদের না দেওয়ায় আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। ৪র্থ ও ৫ম টেন্ডারের অংশগ্রহণকারী কয়েকজন ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিয়ম ও আইন মেনে টেন্ডার দরপত্র অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটিয়ে একটি পক্ষ সামান্য টাকায় জেলখানা ফেরি ঘাট টি দখলে নিতে চায়। আমরা সাধারণ ঠিকাদারা চাই সড়ক ও জনপথ বিভাগ তাদের সঠিক নিয়ম অনুযায়ী সরকারের রাজস্ব যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেভাবেই টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। শ্রীফলতলা এলাকার সচেতন মানুষ মনে করেন জেলখানা ফেরিঘাট টি নিয়ে এভাবে মামলা প্রক্রিয়া ঝুলে থাকলে সরকারের রাজস্ব যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে তেমন এই অঞ্চলের মানুষও ভোগান্তির শিকার হবেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button