স্থানীয় সংবাদ

নানা সমস্যায় জর্জরিত দেয়ানা ‘কবরখানা’

# কবরখানা সম্মুখের ঢালু স্লভে লাশ নিয়ে ওঠার সময় প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা
# প্রাচীর নির্মাণ, মাটি ভরাট, আলো সল্পতাসহ বিবিধ সমস্যা সমাধানের দাবি এলাকাবাসীর #

মোঃ আশিকুর রহমান ঃ খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি)’র আওতাধীন দৌলতপুরস্থ দেয়ানা উত্তরপাড়া কৃষি কলেজ সংলগ্ন কবরখানাটি এতদাঞ্চলের একটি মাত্র সরকারী কবরখানা। প্রায় প্রতিদিনই আশপাশের স্থানীয় অঞ্চল হতে মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করার জন্য কবরখানার সম্মুখে তাদের স্বজনা উপস্থিত হন। দুঃখের বিষয়, এই কবরখানাটি এতাঞ্চলের মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফর জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে আসলেও, কিছু গুরুত্বপূর্ন উদ্যোগ ও সংস্কারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে সুদৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী ও দাফন করতে আসা একাধীক ব্যক্তিবর্গ। সূত্রে জানা গেছে, কেসিসির বিগত মেয়রের আমলে ওই কবরখানাতে রেজিষ্টারের কক্ষ, ওজুখানা, টয়লেটসহ সংযুক্ত করে একটি নতুন স্থাপণা নির্মাণ করে কেসিসি। ওই স্থাপণা নির্মাণে সংযুক্ত করে কবরখানা সম্মুখে স্লভ (উঠার জায়গা) দেওয়া হয়। কিন্তু ওই স্লভটি মূল সড়ক থেকে উঁচু ও ঢালু হওয়ার দরুন লাশ ওঠানোর সময় প্রতিনিয়ত দেখা দিচ্ছে দূর্ঘটনা। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, পূর্বে ২/৩ বার লাশ বহণকারীরা ওই স্থানে ধরে লাশ ওঠানোর সময় পড়ে যান। এছাড়াও কবরখানার চারিপাশে বর্তমানে যে প্রাচীর দৃশ্যমান তার অবস্থা অনেকটা নাজুক, অনেক জায়গাতে ফাটল ধরেছে। কবরখানার মাটির গভীরতা কমে যাওয়ার কারণে কবর খুঁড়তে গেলে সহসা পানি উঠে যাচ্ছে। নেই পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, পানির পাইপ লাইনের সমস্যা, উত্তর-পূর্ব পাশে একটি পকেট গেটের অভাব, কবরখানা পরিষ্কার করণের জন্য সরঞ্জামাদির ঘটতি রয়েছে। নতুন স্থাপণাটিতে ফ্যান, লাইট, চেয়ার, টেবিলসহ বিবিধ সমস্যা রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাসহ লাশ দাফন করতে আসা স্বজনেরা দ্রুত সময়ের মধ্যে রেম্প (ওঠার স্থান) সংস্কার, নতুন করে প্রাচীর নির্মাণ, মাটি ভরাটসহ বিবিধ বিষয়ে নির্মাণ/সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহন করার জন্য সংশ্লিদের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন, একই সাথে কবরখানা সম্মুখ হতে বাসা-বাড়ীর বর্জ্য-আর্বজনা স্থায়ীভাবে অবসারণের অনুরোধও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের প্রতি।
এ বিষয়ে ওই এলাকার বাসিন্দা প্রকৌশলী পারভেজ বখতিয়ার বাবু জানান, দেয়ানা কবরখানা এই অঞ্চলের মানুষের শেষ ঠিকানা। আমরা মা মারা গিয়েছে কয়েক মাস হলো। দুঃখ জনক বিষয়, সংশ্লিষ্টরা কবরখানা সম্মুখে যে রেম্প নির্মাণ করেছে, এটি অত্যন্ত ঢালু। লাশ বহন করার সময় অনেকেই এখানে দূর্ঘটনার কবলে পড়ছেন। আমার মায়ের দাফন কার্যের সময় এমনটি হয়েছে। যেহেতু কবরখানা একটি স্পর্শকাতর জায়গা, এখানে জনগণের সুবিধা-অসুবিধার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।
আড়ংঘাটা বকুল তলা নিবাসি আজিজুল জানান, বাবার কবর দাফন করতে যাওয়ার সময় খাটিয়া নিয়ে উপরে উঠতেই লাশ নিয়ে পড়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল। লাশ নিয়ে ওঠার স্থানটা এতোই ঢালু করা হয়েছে, যে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা ঘটছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। ওই এলাকার বাসিন্দা মো. আক্তারুজ্জামান জানান, কৃষি কলেজ কবরখানা এই অঞ্চলের একটি প্রাচীন কবরখানা। আমার আব্বাসহ বহু আত্বীয়-স্বজন এই কবরখানায় শায়িত আছেন। আব্বার কবর জিয়ারত করার জন্য প্রায় কবরখানাতে যাই। কবর সম্মুখে লাশ নিয়ে ওঠার জায়গাটি সংস্কার, নতুন করে প্রাচীর নির্মাণ, মাটি ভরাটসহ কয়েকটি কাজ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। যেহেতু কবরখানা একটি স্পর্শকাতর জায়গায় সংস্কারে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত উদ্যোগ গ্রহন করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।
ওই এলাকার বাসিন্দা আনিছুর রহমান জানান, বাবা মারা গেছেন কয়েক বছর হলো। মাঝে মাঝে বাবার কবর জিয়ারত করতে যাই। দুঃখ জনক বিষয় হলো, মানুষ এতোটাই বিবেকহীন হয়ে পড়েছে যে, স্পর্শকাতর এমন একটি স্থান সম্মুখে বাসা-বাড়ীর ময়লা আবর্জনা ফেলে কবরখানার পবিত্রা নষ্ট করছে। কবরখানা সম্মুখ হতে স্থায়ীভাবে ময়লা অপসারণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
উপসহকারী প্রকৌশলী আবু সালেহ পাটোয়ারী জানান, দেয়ানা কবরখানা সম্মুখের স্লভ, মাটি ভরাট, নতুন করে প্রাচীর নির্মাণসহ বিবিধ বিষয়ে সংস্কারের জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করার পাশাপাশি আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদন হলে কাজ শুরু করা হবে।
এ ব্যাপারে ৪ নং ওয়ার্ডের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর কবির বিশ^াস বলেন, দেয়ানা কবরখানার মাটি ভরাট, নতুন করে প্রাচীর নির্মাণ, স্লভ (গেট সম্মুখে ওঠার স্থানটি) নতুন করে সংস্কারসহ বিবিধ সমস্যার বিষয়ে সমাধানের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাসহ লাশ দাফন করতে আসা একাধীক ব্যক্তিরা। তাদের দাবির সমূহ উল্লেখ করে ইতোমধ্যে উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের নিকট আবেদন করা হয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওই সকল সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button