২৯ জুলাই খুবিতে দেয়াল-লিখন ও গ্রাফিতি এঁকে প্রতিবাদ : কারফিউ শিথিল

# জুলাই গণঅভ্যুত্থান #
স্টাফ রিপোর্টার : কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের নির্বিচার হত্যার প্রতিবাদ, মামলা প্রত্যাহার, গুম-আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি ও হল-ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার দাবিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতি অঙ্কন কর্মসূচি শুরু করে শিক্ষার্থীরা। রোববার (২৯ জুলাই) দুপুর দুইটা থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের খানজাহান আলী হল গেটে কর্মসূচি শুরু করা হয়।
উক্ত কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার জন্য দুপুর একটা থেকেই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল রোড এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। নিজেদের সংগৃহিত টাকা দিয়ে রং-তুলি কিনে তাঁরা গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখন লিখছেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দেয়াল লিখনের মধ্যে ছিল ‘পানি লাগবে পানি?’, ‘ঐক্যবদ্ধ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়’, প্রভৃতি।
দেওয়াল লিখন ও গ্রাফিতির বেশিরভাগজুড়েই ছিলো ১৮ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পানি বিতরণের সময় ঢাকায় পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়া প্রাক্তন খুবি শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের স্মৃতি। এছাড়া মীর মুগ্ধের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত প্রধান ফটকের নাম ‘মীর মুগ্ধ তোরণ’ রাখার দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। যদিও বর্তমানে খুবির প্রধান ফটকের নাম ‘মীর মুগ্ধ তোরণ’ রাখা হয়েছে।
কোটা আন্দোলনে প্রথম থেকে সোচ্চার এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, ‘দমনপীড়ন চালিয়ে শিক্ষার্থীদের দমিয়ে দেওয়া যাবে না। আমরা আমাদের ভাই হত্যার বিচার চাই। আমরা দেয়ালে, সড়কে গ্রাফিতির মাধ্যমে চব্বিশকে পৃথিবীব্যাপী জানিয়ে দিতে চাই। এটিও আমাদের প্রতিবাদের ভাষা।’
গ্রেফতার ১৩০ :
এদিকে, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে নাশকতামূলক কর্মকা-ের অভিযোগে নগরীর সোনাডাঙ্গা, হরিণটানা, দৌলতপুর ও খালিশপুর থানায় পুলিশ পৃথক চারটি মামলা দায়ের করে। এর মধ্যে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় ২’শ জন থেকে ২৫০ জনকে, দৌলতপুর থানায় ২’শ জন থেকে ২৫০ জনকে ও হরিণটানা থানায় ৪০ জন থেকে ৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া খালিশপুর থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ চারটি নাশকতার মামলায় ২৯ জুলাই পর্যন্ত ১০৩ জনকে গ্রেফতার করে।
কারফিউ শিথিল:
বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪ এর ২৪ (১) ধারা অনুযায়ী তৎকালীন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক দেশে কোটা আন্দোলনের ফলে উদ্ভুত চলমান সহিংস পরিস্থিতি থেকে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান, সরকারি সম্পত্তি ও স্থাপনার নিরাপত্তা বিধান এবং শান্তি শৃঙ্খলা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে খুলনা মেট্রোপলিটন এলাকায় কারফিউ জারি করেন। এই কারফিউ ২৯ জুলাই সকাল ছয়টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শিথিল করা হয়। ২৯ জুলাই রাত ১০টা থেকে পুণরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকারও ঘোষণা দেওয়া হয়। এ আদেশ লঙ্ঘনকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১ নির্ধারিত আইনে প্রয়োগযোগ্য শাস্তি প্রযোজ্য হবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংলিশ ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ও সদ্য স্থগিত হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা মহানগরের মুখপাত্র মো. আহাদ হোসেন (আয়মান আহাদ) বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধ করে দেওয়ার পর ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক ‘অদম্য বাংলা’র চোখ-মুখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে দিই। এটি ছিল আমাদের একটি প্রতীকী প্রতিবাদ। পরবর্তীতে ম্যাজিস্ট্রেট এসে আমাদের গেট থেকে না বেরোনোর নির্দেশ দেয়। বলে যে, বের হলে গুলি করার নির্দেশ দেবে। সেখানে প্রায়ই এ ধরনের ভয় ও শংকার মধ্যে দিয়ে আন্দোলন চলমান থাকে।