স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় ২ আগস্ট শুরু হয় চূড়ান্ত লড়াই, পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষে বহু আহত

# জুলাই গণঅভ্যুত্থান #

স্টাফ রিপোর্টার : কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে খুলনায় চূড়ান্ত পর্যায়ের লড়াই শুরু হয় চব্বিশের ২ আগস্ট। মূলত এ দিন ছাত্র-জনতার গণ মিছিলকে বাধাগ্রস্ত করতে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার লাঠিয়াল বাহিনী পুলিশ নিরীহ ছাত্র ও সাধারণ জনতার উপর হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়ে। রাবার বুলেট, টিয়ারশেল, সাউন্ড ও লাঠিচার্জে বহু সংখ্যক ছাত্র-জনতা আহত হয়। ক্ষুব্ধ জনতার রোষানলে পড়ে পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব হামলা-পাল্টা হামলা, ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পুলিশের একজন কনস্টেবল মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
২ আগস্ট শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে দুপুর ২টার দিকে খুলনার নিউ মার্কেট এলাকা থেকে বৃষ্টি ও পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা গণমিছিল শুরু হয়। মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে গল্লামারী মোড়ে পৌঁছায়। এরপরই জিরোপয়েন্টের দিকে থেকে পুলিশ মিছিল লক্ষ্য করে টিয়ারসেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের যোগ দেয়। পরে বিপুল সংখ্যক আন্দোলনকারী মিছিল নিয়ে এগিয়ে গেলে পুলিশ ধীরে ধীরে পিছু হটে যায়। পরে তারা জিরোপয়েন্টে অবস্থান নেয়। তবে,
সেখানে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেওয়া নিয়ে বিকাল ৪টার দিকে দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষ শুরু হয়। জিরোপয়েন্ট মোড়ে অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীদের দুই পাশ দিয়ে ঘিরে রাখে পুলিশ। পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে পুলিশ একের পর এক টিয়ালসেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের একটি অংশ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। তাদেরও সাজোয়া যান নিয়ে ঘিরে রাখে পুলিশ। সেখানেও টান টান উত্তেজনা বিরাজ করে।
এদিকে, ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচিকে কেন্দ্র শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চলা পুলিশের প্রায় ঘণ্টা ব্যাপী সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আসে। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করবে এমন আশ্বাসে-পুলিশ পিছু হটে যায়। পরে আন্দোলনকারীরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সমাবেশ শুরু করে। সমাবেশ শেষে বিকেলে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শিববাড়ি মোড়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাঁধা দেয়। এ সময় আবার সংঘর্ষ শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তৃতীয় দফায় সংঘর্ষে জড়ায় পুলিশ। এ সময় মুর্হুমূর্হু টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। এতে পুরো গল্লামারী এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে এক পথচারীসহ কমপক্ষে ৬ জন গুলিবিদ্ধ হন। গল্লামারী ব্রিজের এক পাশে শিক্ষার্থী ও অপর পাশে অবস্থান নেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে অসংখ্য টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকল ছোড়ে করে। বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা পুলিশের একটি পিকআপে আগুন ধরিয়ে দেয়।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ (রাবার বুলেট ও শটগানের ছররা) অবস্থায় ৭ জনসহ ১৬ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সন্ধা সাড়ে ৬টার দিকে পুলিশ পিছু হটলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ওইদিন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংঘর্ষের পর সিরাজুল ইসলাম, আবির, নীরব, নাবিল, মিজান, সৌরভ, আবদুল্লাহ, রায়েব সুলতানা রাইবা এবং রুবিনা ইয়াসমিনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের শরীরে রাবার বুলেট ও শটগানের ছররা গুলি লেগেছে। এছাড়া আরো কয়েকজন ব্যক্তিগতভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
চিকিৎসকরা জানান, আহতের অনেকের দেহে গুলি লেগেছে। এদের মধ্যে সিরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির কপালে রবার বুলেটবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আসেন। জরুরীভাবে অপারেশনের মাধ্যমে তাঁর বুলেট বের করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া কমপক্ষে ৭/৮জনের শরীবের গুলি রয়েছে। বাকীরা টিয়ারসেল, রাবার বুলেট ও ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশ শান্তিপূর্ণ মিছিলের পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। বিভিন্নস্থানে বাধা সৃষ্টি করছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নির্বিচারে টিয়ারসেল, গুলি ছুঁড়েছে। এতে অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে আল শাহরিয়ার ওই সময় বলেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে নিরস্ত্র শিক্ষার্থী ওপর পুলিশ অহেতুক টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। এতে অনেকে আহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ কয়েকজনকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে সুমন ঘরামী (৩৩) নামে এক পুলিশ সদস্য নিহত হন। তিনি পুলিশ লাইন্সে কর্মরত ছিলেন। শুক্রবার (২ আগস্ট) রাত পৌনে ৯টার দিকে ওই সময়কার খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সংঘর্ষে আমাদের ২০-২৫ জন গুরুতর আহত এবং কনস্টেবল সুমন কুমার ঘরামী নিহত হয়েছে।
এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা মহানগর আহবায়ক আল শাহরিয়ার বলেন, জেলের দেয়াল কখনো কোনো আন্দোলন থামাতে পারেনি, পারবেও না। ইতিহাস সাক্ষী, কারাগারেই জন্ম নিয়েছে মুক্তির জয়গান।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এ্যারেস্ট হয়েও খুলনার শেখ শহিদুল ইসলাম জিহাদ এক অকুতোভয় সৈনিক। যে হাত উচিয়ে বলেছিলো আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। আল আমিন বলেছিলো, আমরা সবাই ছাত্র। এজন্য হয়তো সবার মনে আলাদা একটা অনুভূতি কাজ করেছিলো। মহরম হাসান মাহিম স্লোগানে বলেছিলো “জ্বালো রে জ্বালো” এটা শুনে হয়তো সবার হৃদয়ে আগুন ধরে গিয়েছিলো দেশকে সৈরাচার মুক্ত করার জন্য।
তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, শাম্মি ইসলামের প্রতি। যে এ্যারেস্টের দ্বার থেকে বুদ্ধি খাঁটিয়ে চলে এসে আবার নেতৃত্ব দিয়েছিলো ও আপসরি হাসান অপরুপা, হাফসা স্নিগ্ধা মুন্নিসহ আরো কিছু ছাত্রীদের প্রতি যারা এ্যারেস্ট হয়েও হাসিমুখে থানায় গিয়েছিলো, এজন্য যে আমরা ছাড়িয়ে আনবো।
তিনি আরো কৃতজ্ঞতা ও সম্মান প্রদান করেন তাদের প্রতি, যারা সাথে থেকে অবদান রেখেছেন। বিশেষ করে আল আমিন বাপ্পু ভাই, নেওয়াজ মোর্শেদ দোলন ভাই, বেলাল হোসেন মুন্না ভাই ও আকাশ রহমান ভাই এর প্রতি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button