খুলনায় ৪ দিনে ৩ খুন : দুইজনকে হত্যা চেষ্টা

# জুন-জুলাই পর্যন্ত ৬ থানা এলাকায় ১৬টি হত্যাকা- সংঘটিত : আটক ৬৯
কামরুল হোসেন মনি ঃ খুলনায় গত ৪ দিনের ব্যবধানে ৩ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময়ের মধ্যে আরও দুইজনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা চেষ্টা করা হয়। নিহতরা হলেন ঘের ব্যবসায়ী আল আমিন, টগর ও ভ্যান চালক আলআমিন। এছাড়া পৃথক ঘটনায় সোহেল ও তোয়েব নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা করেন প্রতিপক্ষরা। পুলিশ ও স্থাণীয়দের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ সব ঘটনায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেননি।
এদিকে ২০২৫ সালের আগষ্ট মাস বাদে জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)’র ৬ থানাধীন এলাকায় মোট ১৬টি হত্যাকা- ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ের মধ্যে হত্যাকান্ডে সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বিভিন্ন থানায় মোট ৬৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। কেএমপির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে। ওই সূত্র মতে, গত ৭ মাসে কেএমপির থানাধীন এলাকায় হত্যাকা-ে ঘটনা ঘটেছে ১৬টি। এ সময় হত্যাকা-ের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে খুলনা সদর থানায় ৫টি. সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় ৪টি, লবনচরা থানায় ২টি, হরিণটানা থানায় ৩টি, খালিশপুর ও দৌলতপুর থানায় একটি করে হত্যা মামলা দায়ের হয়। এ সময়ের মধ্যে মোট ৬৯ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর আতাহার আলী সোমবার (৪ আগষ্ট) সসকাল ১১টায় জানান, রোববার (৩ আগষ্ট) রাত ৯ টার দিকে আল আমিন নামে এক যুবককে গলাকেটে হত্যা করে মহেশ্বরপাশা বণিকপাড়া খানাবাড়ি রাস্তর ওপর ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। নিহত আল আমিন বিভিন্ন পেশায় ছিলেন। মাঝে মধ্যে সিএনজি ও ইজিবাইক চালাতো। সম্প্রতি তিনি একটি ঘের লিজ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন বলে তার মেঝ ভাই আমাদেরকে জানায়। নিহত আল আমিন দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা দিঘীর পূর্বপাড় এলাকার সাহেদ আলীর ছেলে। কালো রংয়ের একটি পালসার মোটরসাইকেল সহ গলাকাটা অবস্থায় একটি যুবকের লাশ মহেশ্বরপাশা বণিকপাড়া খানাবাড়ির সামনে পড়ে আছে, এমন সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। নিহতের মেঝো ভাই আওলাদ হোসেন মামলার করার প্রস্তুািত নিচ্ছেন। লাশ পোস্ট মর্ডামের শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। লাশ এখনো মর্গে রয়েছে। এদিকে একই দিনে রাত পৌনে ৮টার দিকে দুর্বৃত্তরা সোহেল নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা চেষ্টা করে। খুলনা মহানগরীর ২ নং কাষ্টমঘাট এলাকার একটি সেলুনের সামনে ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মো: আবু তারেক (দক্ষিণ) বলেন, আহত স্থানীয় সন্ত্রাসী কাউয়া মিরাজের গ্রুপের সদস্য ছিলো। ঘটনার সময়ে আহত ওই যুবক ২ নং কাষ্টমঘাট নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটি সেলুনের সামনে অবস্থান করছিল। এ সময়ে ৪-৫ মোটরসাইকেলযোগে কয়েকজন সন্ত্রাসী যাদের সকলের মুখ বাঁধা এবং হেলমেট দিকে ঢাকা ছিল। সোহেলকে লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা গুলি ছুড়লে একটি তার পেটে বিদ্ধ হয়। এ সময়ে ওই যুবক মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার বিরুদ্ধে খুলনা সদর থানায় মাদক আইনে ৪ টি মামলা রয়েছে। মাদক এবং টাকার লেনদেন নিয়ে ঘটনাটি ঘটতে পারে বলে তিনি জানান। এর আগে গত শুক্রবার (১লা আগস্ট) শক্রবার (১ আগস্ট) রাতে নিজ বাসায় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হয় মনোয়ার হোসেন টগর। হত্যাকারীরা নিহত টগরের পূর্ব পরিচিত। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো: আবু তারেক বলেন, হত্যা মিশনে মোট ৭ জন অংশ নেয়। ওই তিনজন প্রথমে দরজা নক করে নিহতের বাবাকে জানায় তারা তার পূর্ব পরিচিত। টগর এবং হত্যাকারীরা প্রায় ৫ মিনিট কথা বলে। এর মধ্যে একজন যুবক টগরের কাছে পূর্বের পাওনা টাকা ফেরত চায়। তাদের মধ্যে কালো শার্ট পরা একজন যুবক হাতে থাকা ছুরি দিয়ে টগরের বুকের ডান পাশে আঘাত করে। ছুরি দিয়ে আঘাত করে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে। পরবর্তীতে টগরকে নিয়ে হাসপাতালে গেলে উপস্থিত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কেএমপির সহকারি কমিশনার (মিডিয়া) খোন্দকার হোসেন আহম্মদ বলেন, মনোয়ার হোসেন টগর হত্যাকা-ের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। রোববার ( ৩ আগষ্ট) নিহতের বাবা জামাল হাওলাদার বাদী হয়ে খুলনা খুলনা সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং ৩, তারিখ-০৩.০৮.২৫। মামলায় ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞতনামা আরও ৫-৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এরা হচ্ছেন মাছুম, আশিক, হৃদয় শরীফ, সাঈদী, নয়ন ও ইয়াসিন। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। এছাড়া গত শনিবার (২ আগষ্ট) খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়নের নন্দনপ্রতাপ গ্রামে ভোর সাড়ে ৫ টা দিকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে দা দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভ্যানচালক আলামিনকে। এ ঘটনায় রোববার (৩ আগস্ট) নিহত আলামিনের ভাই ফারুক সিকদার বাদি হয়ে একজনের নাম উল্লেখসহ ২/৩ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করে এ মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামী হলেন নিহত আলামিনের স্ত্রীর প্রথম স্বামী আসাদুল। দিঘলিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ এইচ এম শাহীন জানান, নিহতের বড় ভাই থানায় হাজির হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার মূল আসামি একজন, বাকী ২/৩ জন অজ্ঞাতনামা। নিহত ভ্যানচালক আলামিনের স্ত্রী’র প্রথম স্বামী আসাদুলকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। অপরদিকে খুলনার রূপসা উপজেলায় বিএনপির সদস্য ফরম বিতরণকে কেন্দ্রে করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৫ জন আহত হয়। গত শনিবার ( ২ আগষ্ট) রাতে উপজেলার আইচগাতীর যুগীহাটি কবিরের মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। কবিরের মোড়ে বিএনপির অফিসের ভেতরে ওয়ার্ড কমিটি ফরম বিতরণ নিয়ে আজিজুল গ্রুপ ও মাসুদ গ্রুপের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ধারালো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এক পক্ষ হামলা করলে তোয়েব, মাসুদ, অয়ন, শামসু ও ধলা মিয়া আহত হন। আহতদের মধ্যে তোয়েবকে আশংঙ্কা অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তোয়েব জানান, এলাকায় যারা আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থেকে মাদক ব্যবসা, জমি দখল, চোরাই তেলের কারবার করতেন, তাদের সবাই এখন মৎস্যজীবি দলের নেতা আজিজুলের ছত্রছায়ায়। আমি বিরোধিতা করতাম বলে আমার ওপর কয়েক দফা হামলা হয়।
রূপসা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান সোমবার সকালে বলেন, রোববার রাতে দুই গ্রুপের সদস্যরা থানায় মামলা দায়ের করেন। যেহেতু রাজনৈতিক মামলা। সে কারণে নিরীহ কোন ব্যক্তি হয়রানীর শিকার না হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই বিষয়টি যাচাই-বাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ##