খুলনা শিশু হাসপাতালে ফ্যাসিবাদের দোসর পুর্নবহালের সিদ্ধান্ত

# ক্ষোভে ফুঁসছেন কর্মীরা
# প্রতিবাদে বিক্ষোভ মানববন্ধন
# সোমবারও কর্মসূচি ঘোষণা
স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনা শিশু হাসপাতাল থেকে স্থায়ী ভাবে বরখাস্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: আল আমিন রাকিব ও সহকারি প্রশাসনিক কর্মকর্তা শীলা হালদারকে চাকরিতে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যাডহক কমিটি। বিষয়টি জানাজানি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গতকাল রোববার ( ১০ আগষ্ট) দুপুরে হাসপাতালের মেইন গেট অবরুদ্ধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন তারা।
শিশু হাসপাতালের ল্যাব ইনচার্জ এস এম ইমরান বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে দলীয় কোটায় শিশু হাসপাতালে চাকরি পান সিটি কলেজ শাখা ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন রাকিব। সাবেক এমপি আলহাজ মিজানুর রহমান মিজানের আস্থাভাজন হিসেবে তিনি নিয়োগ পেয়েই একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। ক্ষমতার অপব্যবহার, অসদাচারণ, আর্থিক অনিয়ম সহ নানা দুর্নীতিতে জড়িত হন। ৫ আগস্টের পর দীর্ঘদিন নির্যাতন ও জুলুমের শিকার ডাক্তার, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুঁসে ওঠে। তাদের তীব্র ক্ষোভ ও লাগাতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ১৪ আগস্ট এ দুজনকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয়। কর্তৃপক্ষ আমাদের নিশ্চিত করেছিল যে তারা আর চাকরিতে নেই। হঠাৎ করে শনিবার রাতের অন্ধকারে একটা নীল নকশা আকা হয়েছে।
হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেনীর স্টাফ এম ডি আলী আসগর বলেন, আওয়ামী দোসর সাবেক প্রশাসনিক র্কমর্কতা ও সহকারী কর্মকর্তাকে গত বছর স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয়েছিলো। তাদেরকেই আবার কেন ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছেন? এসময় আরও বক্তব্য রাখেন মো: আলী আকবর, মো: মামুন, মো: আশারাফুর রহমান তুফান, মো: আলমগীর গাজী, মো: মনিরুল ইসলাম, দেবদাস বিশ^াস প্রমুখ। আজ (সোমবার) সকাল থেকে পুনরায় বিক্ষোভ কর্মসূচি চলবে বলে সভা থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়।
জানা গেছে, গত ২৪ মে শিশু হাসপাতালের অ্যাডহক কমিটি সভায় এই দুজনের বরখাস্তের বিষয়টি চূড়ান্ত নিস্পত্তির জন্য ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে মতামত ও সুপারিশ প্রদান করবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। কমিটির সদস্যরা সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে তাদের পূর্ববর্তী কর্মদক্ষতা বিবেচনায় নিয়ে কর্মস্থলে যোগদানের সুপারিশ করেন।
যোগাযোগ করা হলে কমিটির সদস্য মুনীর আহমেদ বলেন, হাসপাতালে কর্মীদের কাজে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দূর করার জন্য রাকিবের মতো দক্ষ লোকের দরকার। যে প্রক্রিয়ায় তাদেরকে বরখাস্ত করা হয়েছিল তা বিধিসম্মত ছিলনা। মিটিংয়ে ৫জন সদস্য সর্বসম্মতভাবে দুইজনকে কাজে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
শিশু হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক (চলতি দায়িত্ব) ডা. অনুপ কুমার দে বলেন, তারা দুজন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে চলে গিয়েছিল। অ্যাডহক কমিটি তাদেরকে আবারও ফিরিয়ে আনবে- এ খবর শুনে হাসপাতালের সবাই ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। আমরা ডাক্তার সহ অন্য কেউ চাইনা তারা ফিরে আসুক। অ্যাডহক কমিটির সিদ্ধান্তের বিষয়ে আপনার সম্মতি রয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি তা অস্বীকার করেন।
তবে আল আমিন রাকিব বলেন, হাসপাতালে ফেরার বিষয়ে আমার আগ্রহ নেই। আমি ভিন্ন পেশায় যোগ দিয়েছি। চেয়েছিলাম হাসপাতালের কাছে আমার পাওনা টাকা গুলো দিয়ে দেওয়া হবে। কমিটি আমাকে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানতাম না।
একটি সূত্র জানায়, শিশু হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক (চলতি দায়িত্ব) ডা. অনুপ কুমার দে এর সম্মতি থাকায় অ্যাডহক কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন। যে কারণে হাসপাতালের স্টাফ, নার্স-কর্মকর্তা-কর্মচারিরা এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে না যেতে পারে সে কারণে রোববার সকাল থেকে হাসপাতালের তত্ত্ববধায়কের রুমে দফায় দফায় আলোচনা সভা হয়। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, স্টাফ ও কর্মকর্তা-কর্মচারিরা অ্যাডহক কমিটির ওই সিদ্ধান্তকে প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিলে তত্ত্ববধায়ক ডা: অনুপ কুমার দে তাদের সাথে একাত্বতা ঘোষনা করতে বাধ্য হন। ওই সূত্র মতে, ইতিমধ্যে ওই তত্ত্ববধায়কের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। যার সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।
উল্লেখ্য. ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে ফ্যাসিস্ট সরকার শেখ হাসিনার পতনের পর ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর সাবেক খুলনা শিশু হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আল-আমিন রাকিবের বিরুদ্ধে জাল সনদ ব্যবহার করে চাকুরি গ্রহন এবং নিজ নামে হাসপাতালের সিট সংরক্ষন করে তা পরবর্তীতে অর্থের বিনিময়ে রোগীদের নিকট সিট বিক্রিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছিলো। ওই সময় তার বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। তখন শিশু হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আল-আমিন রাকিবকে পদত্যাগের দাবিতে হাসপাতালের স্টাফরা তদন্তকারি কর্মকর্তাদের সামনে বিক্ষুব্ধ স্টাফরা বিক্ষোভ করেছেন। গঠিত তদন্ত কমিটির মধ্যে সহকারি পরিচালক, পরিচালক ( স্বাস্থ্য) ডা: অপর্না বিশ্বাস, পরিচালক (স্বাস্থ্য) এর দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস এম জাহাতাব হোসেন এবং প্রধানসহকারি মাসুম বিল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে খুলনা মেডিকেল সাব-ডিপো এর সহকারি পরিচালক ডা: মো: রফিকুল ইসলাম গাজী কে ( বর্তমানে খুলনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্ববাধায়ক) তদন্ত কমিটির সভাপতি করে ৫ সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন অবহিত করলেও তাতে কাজ হয়নি। পরে সেনাবিহীনর একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পরবর্তীতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা আল-আমিন রাকিব ও সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা শীলা হালদার পদ থেকে পদত্যাগ করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
খুলনা শিশু হাসপাতালের স্টাফরা জানিয়েছেন রাকিব হাসপাতালে যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালের স্টাফদের জিম্মি করে ও চাকুরি খেয়ে ফেলার ভয়-ভীতি দেখিয়ে অনৈতিকভাবে টাকা আদায় করত। এছাড়া তার বিরুদ্ধে হাসপাতালের বিভিন্ন টেন্ডারের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। গত ২০১০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজানের অনুসারি ছিলো। তার সুপারিশে ভিত্তিতে রাকিবের চাকুরিতে যোগদান করেন। হাসপাতালের যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্ণীতি করে টাকার মেশিন বানিয়ে ফেলেন। সে নগরীর পূর্ববানিয়া খামার লোহারগেট এলাকায় প্রায় ৮০ লাখ টাকারও বেশি একটি দ্বিতলা বাড়ি ক্রয় করেন। এছাড়া অবৈধভাবে টাকা আয় করে বিভিন্ন জায়গায় জমিও কিনেছেন বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছেন। কিন্তু গঠিত তদন্ত কমিটির তাদের তদন্ত রিপোর্ট এখানো আলোর মুখ দেখেনি।