বয়রা সড়ক সংলগ্নে ময়লার ভাগাড়ে দুর্ভোগ চরমে

# নিক্ষিপ্ত আবর্জনায় নোংরা হচ্ছে পরিবেশ, ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক চলাচল #
# স্থায়ী এসটিএস থাকলেও নেই ব্যবহার, সৃষ্ট সমস্যা স্থায়ী সমাধানের দাবি সর্বমহলের #
এস এম মোশায়েক, বয়রা প্রতিনিধি : খুলনা নগরীর ১৬নং ওয়ার্ডস্থ বয়রা জলিল স্মরনী সড়ক সংলগ্নে ময়লার ভাগাড়ের সৃষ্ট দুর্গন্ধে পথচারীসহ সর্বস্তরের মানুষের স্বাভাবিক চলাচল চরমে। প্রতিদিনই সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডটির বিভিন্ন বাসা-বাড়ী হতে সংগ্রহ করা গৃহস্থালীর আবর্জনা ওই সড়কের পাশে দীর্ঘদিন ধরে অবাধে ফেলছেন সংশ্লিষ্টরা। বাইপাস সড়ক ধরে মোস্তফার মোড় হয়ে সরাসরি বয়রা হয়ে খুলনা সড়কে প্রবেশে এটা প্রধান সড়ক, যে কারণে এই সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। গুরুত্বপূর্ন এই সড়কের পাশে সরকারী, বে-সরকারী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অনেক গুরুত্বপূর্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাছাড়া সড়কটি ধরে প্রতিদিনই অসংখ্য যানবাহন, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন পেশাজীবি, পথচারীসহ সর্ব সাধারন চলাচল করে থাকেন। ১৬নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাসা-বাড়ী থেকে সংগ্রহ করা ময়লা আর্বজনা ওই সড়ক সংলগ্নে অবাধে ফেলার দরুন সৃষ্ট দুর্গন্ধে সর্বস্তরের মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে, পাশাপাশি সৃষ্ট ময়লার ভাগাড় পরিবেশও চরমভাবে দূষিত করছে। ময়লার ভাগাড়ের পাশর্^ দিয়ে চলাচলের সময় পথচারী মুখ চেপে বা মুখে কাপড় দিয়ে চলাচল করেও দুর্গন্ধ হতে রেহাই পাচ্ছে না। স্থানীয়সহ পথচারীরা দ্রুত সময়ে মধ্যে, এই ময়লা ভাগাড় অন্যত্র অপসারণ নতুবা স্থায়ীভাবে সেকেন্ডারী ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) ফেলার ব্যবস্থা গ্রহণ করে সড়কের পাশে এই ভাগাড় বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রবিবার (১০ আগষ্ট) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ১৬নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাসা-বাড়ী থেকে সংগ্রহ করা ময়লা আর্বজনা কুকুর টেনে নিয়ে সড়কে বিভিন্ন অংশ নোংরা করছে, পাশাপাশি পরিবেশও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পাশাপাশি ওই সমস্যা ও সমাধান নিয়ে বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ ও পথচারী তাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। প্রবাসী মো. মাসুদ জানান, আমরা বিদেশে থাকি। বাইরের দেশের রাস্তা দেখলে মন ভরে যায়। রাস্তায় ময়লা আর্বজনা তো দূরের কথা সামান্য থুথু ফেললেও জরিমানা গুনতে হয়। দুঃখের বিষয় বয়রা জলিল স্মরণীর সামনে যে বিশাল ময়লার ভাগাড়, এর পাশ থেকে যাওয়ার সময় বমি হয়ে গেছে। এত গুরুত্বপূর্ন সড়কে পাশে এমন নোংরা, ময়লা আবর্জনা মেনে নেওয়া যায় না। সংশ্লিস্টদের প্রতি আহ্বান, দ্রুত এই ময়লা স্থায়ীভাবে অপসারণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করি। পথচারী সাব্বির হাসান জানান, প্রতিদিন এই সড়ক ধরে খুলনায় যাতায়াত করি। এই ভাগাড়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মুখে ট্যিসু পেঁচিয়ে যাই। এতো দুর্গন্ধ মুখে রোমাল বা ট্যিসু দিয়েও রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা এর একটা স্থায়ী সমাধান প্রত্যাশা করি। কলেজ শিক্ষার্থী রাবেয়া খাতুন জানান, প্রতিদিন এই সড়ক ধরে কলেজে যেতে হয়। এ কি অবস্থা, সড়কের পাশে এমন আর্বজনা, এমন ময়লার ভাগাড়, আমরা কোন দেশে বসবাস করি। আমি একাদশ শ্রেণী পড়াকালীন সময় হতে আজ মাষ্টার্স শেষ করা সময় হয়ে গেল, ওই স্থানে একই অবস্থা দেখছি। আমাদের চোখে এই দুর্ভোগ দৃশ্যমান হচ্ছে, আর যারা চেয়ারে বসে বসে জনগনের টাকায় বেতন গ্রহন করেন, তাদের কি চোখে সাধারন মানুষের দুর্ভোগ দৃশ্যমান হয় না। এ ব্যাপারে আমার আর কিছু বলার নাই।
ভ্যান চালক মো. হাফিজ জানান, বয়রা মোড় হতে মোস্তফার মোড় পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করি। যাত্রীরা ভ্যানে ওঠার আগে বলে ওই ময়লা জায়গা কিন্তু ঘুরে যাবা, তবেই তোমার ভ্যানে যাবো। অবশেষে যাত্রীদের কথা মেনে নিয়ে চলাচল করতে হয়। দীর্ঘদিন ওই জায়গায় ময়লা ফেলা হচ্ছে, দুর্গন্ধে চলাচল করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। দেখার কেউ নাই। ময়লা ভাগাড়ের নিকটের ক্লিনিক ম্যানেজার মো. শামিম জানান, ক্লিনিকে বিভিন্ন রোগাক্রান্ত রোগী অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি হয়ে থাকেন। অনেক রোগী ডেকে বলে, এমনিতেই আমি অসুস্থ মানুষ, আর আপনার ক্লিনিক সম্মুখে থাকা ময়লার দুর্গন্ধে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছি। তাদের কি উত্তর দিবো, জানা নাই। স্থায়ীভাবে ওই ময়লার ভাগাড় অপসারণ বা এসটিএস নির্মাণের আহ্বান জানাচ্ছি। এ বিষয়ে ১৬নং ওয়ার্ডের কঞ্জারভেন্সী সুপারভাইজার মো. মনিরুল ইসলাম জানান, ওই স্থানটিতে যেন যত্রতত্র ময়লা আর্বজনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে না থাকে, তা অপসারণ করে অস্থায়ীভাবে এসটিএস সাদৃশ্য নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এটি শেষ হলে অনেকাংশে দুর্ভোগ ও দুর্গন্ধ কমবে বলে আশাবাদি। এ ব্যাপারে ১৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. শেখ মোস্তাফ কামাল জানান, ১৬নং ওয়ার্ডস্থ বয়রা জলিল স্মরনী সড়ক সংলগ্নে ময়লার যে ভাগাড়ের সৃষ্ট দুর্গন্ধে পথচারীসহ সর্বস্তরের মানুষের স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, এটা দুঃখ জনক। কোমলমতী শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের দুগন্ধে চলাচল করতে অস্বস্তিবোধ করছে। সাধারন মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে ১৬নং ওয়ার্ডের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কেসিসি’র চিফ প্লানিং কর্মকর্তা আব্বিরুল জব্বার জানান, ১৪ ও ১৬নং ওয়ার্ডের ময়লা স্থায়ীভাবে ফেলার জন্য মহিলা কলেজ অভ্যন্তরে এসটিএস নির্মাণ করা হয়েছে। ওই সময়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ ময়লা ফেলার অনুমতি দিলেও বর্তমানে তারা ময়লা ফেলার অনুমতি দিচ্ছে না। যে কারণে ১৬নং ওয়ার্ডস্থ বয়রা জলিল স্মরনী সড়ক সংলগ্নে ময়লা-আর্বজনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে না থাকে, তার জন্য অস্থায়ীভাবে এসটিএস সাদৃশ্য নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এটি শেষ হলে অনেকাংশে দুর্ভোগ ও দুগন্ধ কমবে বলে আশাবাদি।