শেষ রক্ষা হলো না দুর্নীতিবাজ মাহবুবের

# খুলনা জেলা পরিষদ #
প্রকল্প দেওয়ার নামে অর্থ লুটের অভিযোগ
পাওনাদারদের ভয়ে শেষ কর্মদিবসে অফিসে আসেননি
স্টাফ রিপোর্টার : খুলনা জেলা পরিষদ অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবুর রহমানকে অবশেষে অবমুক্ত করা হয়েছে। বুধবার খুলনা জেলা পরিষদ থেকে তাকে অবমুক্ত করা হয়েছে। এখন আর তিনি এখানকার কর্মকর্তা নন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা।
এর আগে ১২ আগস্ট মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রলাণয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব খোন্দকার ফরহাদ আহমদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাকে নেত্রকোনা জেলা পরিষদে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। একই সঙ্গে বুধবার ১৩ আগস্টের মধ্যে বদলিকৃত স্থানে যোগদান না করলে তাৎক্ষনিক অবমুক্ত হবেন বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে, দুর্নীতিবাজ মাহবুবের বদলির খবরে তার কাছে পাওনাদাররা ছুটে আসেন জেলা পরিষদে। বিভিন্ন প্রকল্প পাইয়ে দেওয়ার নামে সংশ্লিস্টদের কাছ থেকে মাহাবুব মোটা অংকের অর্থ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। এ কারণে পাওনাদারদের ভয়ে বুধবার খুলনায় তার শেষ কর্মদিবসে অফিসে হাজিরও হননি তিনি। যদিও তার বাসায় অবমুক্তের আদেশের কপি পাঠিয়ে রিসিভ করিয়ে আনা হয় বলে জানা গেছে।
এর আগে দুর্নীতিবাজ মাহবুবকে বগুড়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদে দুই দফায় বদলি করা হলেও তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যোগদান না করে দুবারই থেকে যান খুলনা জেলা পরিষদে। সূত্র জানায়, হাসিনা-পরবর্তী আমলেও থামেনি মাহাবুবের অপকর্ম। অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। দুর্নীতির শীর্ষে থাকা জেলা পরিষদ ৫ আগস্ট জনতার ক্ষোভের আগুনে পুড়ে ছাই হলেও ধ্বংসস্তূপে বসে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ার চেষ্টায় মরিয়া হন মাহাবুব। অনেক ক্ষেত্রে সফলও হন এই চতুর ও দুর্নীতিবাজ। সূত্র জানায়, খুলনা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ। তিনিসহ দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় মাহবুব হয়ে ওঠেন দুর্দান্ত প্রতাপশালী। পরিষদে গড়ে তোলেন অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হয়েও নিয়েছেন প্রথম শ্রেণির সুযোগ-সুবিধা। মাহবুবের দাপটে অফিসের কর্মচারীরা সবসময়ই থাকেন তটস্থ ও বদলি আতঙ্কে। গণঅভ্যুত্থানের পর ৩০ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়ার অভিযোগে তার নামে মামলাও হয়।
পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় হয়ে ওঠেন দোর্দ- প্রতাপশালী। পরিষদে গড়ে তোলেন অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। অবৈধভাবে উপার্জন করেন কোটি কোটি টাকা। দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হয়েও নিয়েছেন প্রথম শ্রেণির সুযোগ-সুবিধা। সেই ছিলেন জেলা পরিষদের অঘোষিত চেয়ারম্যান। পরিষদে তার কথাই শেষ কথা। তার দাপটে অফিসের কর্মচারীরা সব সময়ই থাকেন তটস্থ ও বদলি আতঙ্কে। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরও গণঅভ্যুত্থানের পরও বিভিন্ন দলের নেতাদের তুষ্ট করে ছিলেন বহাল তবিয়তে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশীদ। বয়সে বৃদ্ধ হওয়ায় তিনি থাকতেন অনেকটা নিষ্ক্রিয়। এ সুযোগে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান ছিলেন ছায়া চেয়ারম্যান। ভৌতিক প্রকল্প তৈরি ও দরপত্রবিহীন উন্নয়নকাজসহ পরিষদের সব ক্ষেত্রেই চলছে চরম নৈরাজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতা।
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে কোটি কোটি টাকা লোপাটই ছিল তার মূল লক্ষ্য। এসব অপকর্ম ঠেকাতে ঢাল হিসাবে অবৈধভাবে বের করেন দৈনিক একটি পত্রিকা। যার সম্পাদক ছিলেন তিনি নিজেই। কোনো সাংবাদিক তার অবৈধ কর্মকা- নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে তাকে নানাভাবে হয়রানি করতেন তিনি।