ব্যস্ত সড়কে দিনের বেলা কেসিসি’র ময়লার গাড়ি, দূর্গন্ধে অতিষ্ঠ নগরবাসী

# সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ির চালকদের অনেকেরই নেই ভারী যান চালানোর লাইসেন্স
# খোলা ট্রাকে নেয়া হচ্ছে বর্জ্য, ঝাঁকুনিতে বর্জ্য পড়ছে সড়কে
# রাতের বেলা গাড়ি চলাচলের দাবি নগরবাসির
# কেসিসির উদাসিনতা ও সদিচ্ছার অভাব বলছেন পরিবেশ সংশ্লিষ্ঠরা
কামাল মোস্তফা : বিকেল সোয়া তিনটা বাজে। মোটর বাইক যোগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সেমিনারে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন মাহবুব। যথারীতি তীব্র যানজট গল্লামারী ব্রিজের এপার ওপার। ব্রীজে ওঠার আগে তার বাইকের সামনে পড়ে কেসিসির বর্জ্য বোঝাই গাড়ি। গাড়িটির গন্তব্য খুলনা-সাতক্ষীরা হাইওয়ের পশ্চিমে রাজবাঁধ কেসিসির ডাম্পিং স্টেশন। তীব্র দুর্গন্ধে বিব্রতকর পরিস্থিতিরি মুখোমুখি মাহবুব। যানজটের কারণে সামনে পিছনে কোন দিকেই সরতে না পেরে অগত্য ময়লার গাড়ির পেছনেই থাকতে হলো তাঁকে। খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন সড়কে দিনের বেলায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) ময়লার গাড়ি চলাচলের কারণে এমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে পথচারীসহ রাস্তায় চলাচলকারী নগরবাসি। ব্যস্ত সময়ে এসব গাড়ি চলাচল করায় যানজটের পাশাপাশি ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ, যা পথচারী, শিক্ষার্থী ও দোকানিদের জন্য হয়ে উঠেছে সহনীয়তার বাইরে। শহরের শিববাড়ি মোড়, নিউ মার্কেট, গল্লামারী, রূপসা ঘাট, কেসিসি মোড়সহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ময়লার গাড়ি চলাচল দেখা যায়। খোলা অবস্থায় ময়লা পরিবহনের ফলে দুর্গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে নাক-মুখ ঢেকে চলতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। অনেক সময় ময়লার গাড়ি থেকে ময়লা রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুরোটা রাস্তায় দুর্গন্ধযুক্ত ময়লার পানি ছড়াতে ছড়াতে যায় ময়লার ট্রাক। দিনের বেলা এভাবে সড়কে কেসিসির ময়লা পরিবহনের ফলে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পথচারী, গাড়ি চালকসহ সড়কের পাশে থাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা। স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে রাস্তায়। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে জনবহুল সড়কে দিনের বেলা উন্মুক্ত ময়লার গাড়ি চলাচলে নগরবাসির স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। ময়লায় থাকা ব্যকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবি বাতাসে পোকামাকড়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। টাইফয়েড,ডায়রিয়া,কলেরা,আমাশা ইত্যাদি পানিবাহিত ও খাদ্যবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তা ছাড়া পচনশীল বর্জ্য থেকে নির্গত দূর্গন্ধে ক্ষতিকর গ্যাস মিশে শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যথা ও এলার্জি তৈরি করতে পারে। ঝুঁকি রয়েছে মানসিক স্বাস্থ্যর। এ বিষয়ে কয়েকজন পথচারী অভিযোগ করে বলেন, দিনের বেলা ময়লার গাড়ি চালানোতে শুধু দুর্গন্ধ নয়, বরং যানজটও সৃষ্টি হচ্ছে। ময়লা পরিবহনের সময় স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে এই কাজ রাতের বেলা বা ভোরে সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন নগরবাসী। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, “দিনের বেলা যখন রাস্তা ভরা মানুষ আর গাড়িতে, তখন ময়লার গাড়ি চলে। দুর্গন্ধে হাঁটতেই কষ্ট হয়।” একই অভিযোগ জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থীও। তারা জানান, বিদ্যালয়ে বা কোচিংয়ে যাওয়া-আসার পথে রাস্তায় রাখা খোলা ময়লার স্তুপে দুর্গন্ধে অসুস্থ বোধ করেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, শহরের মানুষের ঘুম ভাঙ্গার আগেই মূলত শহর পরিস্কার হওয়ার কথা কথা। কিন্তু দিনের বেলা ময়লা পরিবহনে রাস্তায় চলাচলকারী মানুষ বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ছে। এ বিষয়ে অনেকবার তাদের বলা হয়েছে, কিন্তু সদিচ্ছা ও উদাসীনতার অভাবে তারা এ বিষয়ে আন্তরিক হচ্ছেনা। নিরাপদ সড়ক চাই খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায় সড়ক দিয়ে খোলা ট্রাকে নিয়ে যাচ্ছে বর্জ্য। ট্রাকের ঝাঁকুনিতে মাঝে মাঝে বর্জ্য পড়ছে সড়কে। এ সময় ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। বর্জ্য পড়ে নষ্ট হচ্ছে সড়ক ও আশপাশের পরিবেশ। দুর্গন্ধে নাক চেপে ধরে চলতে হচ্ছে পথচারীদের। এভাবে খোলা ট্রাক এবং ভ্যানে করে অপসারণ এবং পরিবহন করা হচ্ছে নগরের বর্জ্য। নিরাপদ সড়ক চাই এর এই নেতা অভিযোগ করেন, সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চালকদের অনেকেরই নেই ভারী যান চালানোর লাইসেন্স। মশককর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ সিটি করপোরেশনের বিভিন্নজনকে দিয়ে চালানো হচ্ছে এসব ভারী যানবাহন। যে কারণে অনেক সময় ঘটে দুর্ঘটনাও। কেসিসি সূত্রে জানা গেছে, শহরে ময়লা ফেলার নির্ধারিত স্থান আছে মোট ৪০টি। এর মধ্যে ওপেন স্টেজ ৩০ টি এবং আধুনিক স্টেজ ১০ টি। ময়লা পরিবহনের গারবেজ ট্রাক রয়েছে ৬০টি। শহর থেকে প্রতিদিন গড় বর্জ্য অপসারণ করা হয় ৮শত টন। সন্ধা থেকে পরদিন সকাল ১০ টার মধ্যে খুলনা-সাতক্ষীরা হাইওয়ের পশ্চিমে রাজবাঁধ কেসিসির ডাম্পিং স্টেশনে ময়লা জমা হয়। অনেক সময় কোন কোন এলাকায় দিনের বেলায় বেশি ময়লা জমা হলে তাৎক্ষণিক অপসারণ করা লাগে। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কোহিনুর জাহান বলেন, অফিসগামী মানুষের যাতে ভোগান্তি না হয় সে জন্য ময়লা পরিবহন যথাসম্ভব সকালে শেষ করার নির্দেশনা দেয়া আছে। অনেক সময় শহরের অনেক এলাকায় দিনের বেলা ময়লা দ্রুত জমে যায়, তাৎক্ষণিক সেটা না সরালে দুর্গন্ধ ছুটতে থাকে। দিনের বেলা নগরবাসির ভোগান্তি এড়াতে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে। নগরবাসীর দাবি, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও যানজট এড়াতে রাতের বেলা বা ভোরে ময়লা পরিবহনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া খোলা ট্রাকে ময়লা অপসারণের বিকল্প ভাবতে হবে।