স্থানীয় সংবাদ

সব যুদ্ধ বন্দুক দিয়ে হয়না : কিছু যুদ্ধ ইন্টেলেকচুয়ালি করতে হয়

# খুবিতে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক এ আলোচনায় আমার দেশ সম্পাদক #

স্টাফ রিপোর্টার ঃ দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের তরুণ সমাজের প্রতি আমার অনেক আশা। যে তরুণ সমাজ নিজেরা কোন অস্ত্র ছাড়া, কোন বিদেশি সাহায্য ছাড়া হাসিনার ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদকে পরাজিত করতে পেরেছে, সেই প্রজন্ম ক্যান ডু এনিথিং ইনশাআল্লাহ। বুধবার খুলনায় এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের পরে আমরা কিছুটা মুক্তি পেয়েছি। পুরোপুরি মুক্তি পেয়েছি কিনা তা আগামী নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত বোঝা যাবেনা। আমাদের রাজনীতিবীদরা শেখ হাসিনা থেকে শিক্ষা নিয়েছেন কিনা, তার ওপর নির্ভর করবে আমাদের আগামী। খুলনা বিশ^বিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ও ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তর যৌথভাবে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক এ আলোচনার আয়োজন করে। বিশ^বিদ্যালয়ের ২নং একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে বেলা ১১টায় কর্মসূচি শুরু হয়।
মাহমুদুর রহমান বলেন, তরুণদের কাছ থেকে বিশেষত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পেলে আমি সেখানে যাই। আমি তরুণদের সাথে মিশতে ও তাদের আকাঙ্খা জানার চেষ্টা করি। ১৬ বছর যে তরুণদের ব্রেইন ওয়াশ করা হয়েছে, কি এমন ম্যাজিকে সেই তরুণদের মধ্যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এমন ট্রান্সফরমেশন সম্ভব হলো, আমি তা বোঝার চেষ্টা করি। তরুণদের জ্ঞান চর্চ্চার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, সব যুদ্ধ বন্দুক দিয়ে হয়না। কিছু যুদ্ধ ইন্টেলেকচুয়ালি করতে হয়। সারা বিশে^ দুশ কোটি মুসলমান, অথচ গাঁজায় যে নারকীয়তা চলছে তা তুলে ধরতে পারছিনা। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের ফ্যাসিবাদবিরোধী ভূমিকা জানার আগে ফ্যাসিবাদ সৃষ্টিতে সাংবাদিকদের ভূমিকা জানতে হবে। হাসিনার পতনের মাত্র ১২ দিন আগে এদেশের ব্রাক্ষণ সম্পাদকরা হাসিনার কাছ গিয়ে তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যতোটা কঠোর ভাবেই হোক, ছাত্রদের এই আন্দোলনকে দমন করতে হবে। ফ্যাসিবাদ সৃষ্টিতে ব্যবসায়ী, আমলা, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক সবাই ভূমিকা রেখেছিল। শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট হয়েছিলেন জেনেটিকভাবে উত্তরাধিকার সূত্রে, কারণ তার বাবা ছিলেন একজন বড় ফ্যাসিস্ট। ওয়ান ইলেভেনের সরকার ছিলো ভারতীয় আধিপত্যবাদের চক্রান্তের একটি ফসল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে খুলনায় জিয়া হলে এক সেমিনারে আমিই সর্বপ্রথম একথা বলেছিলাম। সেদিন অনেকে সন্ধেহ পোষণ করলেও পরে প্রমাণিত হয় আমি সঠিক ছিলাম। ২০১৮ সালে একদম ভূয়া মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অ্যারেস্ট করা হলো। সেসময় মির্জা ফখরুল সাহেবের উপস্থিতিতে এক মিটিংয়ে আমি বলেছিলাম, আপনার নির্বাচনের মাধ্যমে হাসিনা সরকারের পতন চাচ্ছেন এটা ভুল। গণঅভ্যূত্থান ছাড়া ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন হয়না। বিশে^র কোথাও এর নজির নেই। আমার সেই কথা ২০২৪ সালে এ দেশের তরুণ সমাজ বুকের রক্ত দিয়ে প্রমাণ করেছে। যে হাসিনা ১৯৮১ সালে ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছিল, সেই হাসিনা ২০২৪ সালে আবারও পালিয়ে সেই ভারতে চলে গেছে।
মাহমুদুর রহমান বলেন, সাংবাদিকদেরকে সব সময় চ্যালেজ্ঞ নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেজ্ঞ হলো স্টাবিলিশমেন্টের ভুল নিয়ে কথা বলা। এই্ চ্যালেঞ্জটা শুরু হয় বিশ^বিদ্যালয় জীবন থেকে, আর বৃদ্ধ হওয়া পর্যন্ত তা মোকাবেলা করতে হয়। নিউজ প্রকাশের ক্ষেত্রে আমার দেশ দুটো জায়গায় ট্যাবু ভেঙ্গেছে বলে দাবি করেন তিনি। বলেন বিচার বিভাগ ও সেনাবাহিনীর বিষয়ে কেউ লিখতেন না। আমার দেশ সেই ধারণা ভেঙ্গে দিয়েছে। আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত মন্তব্য প্রতিবেদনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার সেই সেনাপ্রধান চাই যিনি হবেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মতো।
খুলনা বিশ^বিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আলকামা রমিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপাচার্য প্রফেসর ড. রেজাউল করিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো: নুরুন্নবী, ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. নাজমুস সাদাত, আমার দেশ ব্যুরো প্রধান এহতেশামুল হক শাওন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের যোদ্ধা আয়মান আহাদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন খুবিসাস সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button