স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় তদন্তেই ঝুলে আছে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ৬ মামলা

ফ্যাসিস্ট আসামিরা বহাল তবিয়তে
পুলিশের ভূমিকায় হতাশা

খলিলুর রহমান সুমন ঃ গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী খুলনা নগরীতে ৬টি মামলা দায়ের করা হয়। গত বছরের ১৪ আগস্ট থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ মামলাগুলো রেকর্ড হয়। এ মামলাগুলোয় এজাহারভূক্ত আসামি ৪৩৭ জন। অজ্ঞাতনামা ৮৪৫ জন। এর মধ্যে ১৩১জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে এজাহারভূক্ত আসামি ৫৮ জন। এর মধ্যে একটি মামলা জুলাই বিপ্লবীদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা হয়। কিন্তু এক বছরেও মামলাগুলোর তদন্ত শেষ হয়নি। তবে, মামলাগুলোর তদন্ত কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন কেএমপি’র এসি (মিডিয়া) খোন্দকার হোসেন আহম্মদ।
অপরদিকে, ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট আ’লীগের দায়েরকৃত ৯টি মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। যা আদালত ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছেন। এ মামলাগুলো দায়ের করা হয় গত বছরের ১৮ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত। নগরীর খালিশপুর নিউজপ্রিন্টগেটস্থ খালিশপুর থানা বিএনপি অফিস গত ৪ আগস্ট’২৪ বিকেলে ফ্যাসিস্ট আ’লীগ ও তাদের নেতা-কর্মীরা ভাংচুর করে। এ ঘটনায় ১৫৪ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়। তার মধ্যে ১৮৪ জন এজহার নামীয়। মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই আঃ হালিম। তিনি বলেন, এ মামলায় মোট ২৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ জন এজাহার নামীয়। তবে মামলার তদন্ত কতদূর অগ্রগতি সে ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করতে নারাজ।
দৌলতপুর থানা বিএনপির কার্যালয়টি বিএল কলেজ গেটে। গত বছর ৪ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ অফিসটি ভাংচুর করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় নিহত যুবদল নেতা মাহবুব মোল্লা বাদী হয়ে গত ২১ আগস্ট’২৪ দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আড়াইশ’ জনকে আসামী করা হয়। তার মধ্যে ৫২ জন এজাহার নামীয় আর বাকী ১৫০ থেকে ২০০ জন অজ্ঞাতনামা। মামলাটি প্রথম তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই সাজ্জাদুল আজিম। তিনি বদলী হয়ে গেছেন। কিন্তু তদন্ত শেষ করতে পারেননি। নতুন করে তদন্তকারী কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন এসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, এ যাবৎ মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মধ্যে ৮ জন এজাহার নামীয় আসামী। পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। কবে নাগাদ তদন্ত শেষ হবে তা তিনি নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও খুলনা ৩নং আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী আলহাজ্ব রকিবুল ইসলাম বকুলের গোয়ালখালি কবরস্থান মোড়ে করা বাড়ি, গাড়ি ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। ৪ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আওয়ামীলীগের গুন্ডা বাহিনী এ বাড়িতে তান্ডব চালায়। এ ঘটনায় নগর বিএনপির সাঃ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন বাদী হয়ে ১৪ আগস্ট খালিশপুর থাানয় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২০০/৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই শেখ রায়হানুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ যাবৎ মোট ৫৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মধ্যে ১৪ জনকে শ্যোন এ্যারেষ্ট দেখানো হয়। বাকী আসামীদের গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চলছে। তবে কবে নাগাদ তদন্ত শেষ করতে পারবেন তার কোন আশারবাণী তিনি শুনাতে পারেননি।
খুলনা মহানগর বিএনপির কার্যালয়টি ৬ কেডি ঘোষ রোড। গত ৫ আগস্ট’২৪ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা দলীয় কার্যালয়টি ভাংচুর করেন। অফিসের নীচে রাখা চেয়ার ভাংচুর করে। এ ঘটনায় বিএনপি নেতা আলতাপ হোসেন বাদী হয়ে গত ৮ অক্টোবর সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। ২শ’জনকে আসামী করে এ মামলা দায়ের করা হয়। তার মধ্যে ১৫১জন এজাহারনামীয়। মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই মোল্লা জুয়েল রানা। তিনি বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ মোট ৫৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। তার মধ্যে এজাহার নামীয় রয়েছে ৪০ জন। এজাহার নামীয় ২নং আসামী মাহমুম শামীমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন। যেহেতু এটি পলিটিক্যাল মামলা তাই কবে নাগাদ তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারেননি।
জুলাই যোদ্ধা রাফসানের ওপর সন্ত্রাসীরা হামলা করে। গত ৪ আগস্ট’২৪ বিকেল ৪টায় নগরীর গণণ বাবুরোডস্থ ফাতেমা স্কুলের সামনে দুর্বৃত্তরা আন্দোলনকারী এ ছাত্র নেতার ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় ভিকটিমের পিতা রফিকুজ্জামান বাদী হয়ে সদর থানায় ২৯ আগস্ট মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৩২ জনকে আসামী করা হয়। এর মধ্যে ৭জন এজাহার নামীয়। মামলাটি তদন্ত করছেন নগর গোয়েন্দা শাখার এসআই বিধান চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, এ ঘটনায় মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তারা একজনও এজাহারনামীয় আসামী নয়। মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায় বলে তিনি জানান।
আড়ংঘাটা ইউনিয়ন বিএনপি অফিস রয়েছে আড়ংঘাটা বাজারে। গত ৪ আগস্ট’২৪ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অফিসটি ভাংচুর করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় ২৬ সেপ্টেম্বর যুবদল নেতা নারায়ন মিশ্র বাদী হয়ে আড়ংঘাটা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামী করা হয় আড়াইশ’জনকে। এর মধ্যে এজাহার নামীয় আসামী করা হয় ৪৩ জনকে। মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই দীপক মন্ডল। তিনি জানান, এ যাবৎ ওই মামলায় গ্রেফতার করেছেন ১৯ জনকে। এর মধ্যে ৭ জন এজাহার নামীয়। তার মধ্যে ১২ জন জামিনে বের হয়েছে। বাকীরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান। মামলার বাদী নারায়ন মিশ্র হতাশা প্রকাশ করে বলেন, মামলা করার পর পুলিশের তৎপরতা থাকলেও এখন ঝিমিয়ে পড়েছে। আসামীরা এলাকায় ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ ধরছে না। আসামী গ্রেফতারের বিষয়টি খুবই হতাশাজনক বলে অভিমত ব্যক্ত করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি এড. শফিকুল আলম মনা। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে আওয়ামী সন্ত্রাসী দ্বারা দলীয় কার্যালয় ভাংচুর হলেও আসামী গ্রেফতারের তেমন কোন সফলতা নেই। পুলিশ এ মামলাগুলো নিয়ে সিরিয়াস নয় বলে তিনি মনে করেন।
খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সচিব এড. নুরুল হাসান রুবা বলেন, গত এক বছর হয়ে গেলেও একটি মামলারও তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ দিতে পারলো না-এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। আসামীদের গ্রেফতারে তাদের তেমন কোন সফলতা নেই। জুলাই বিপ্লবকে কেন্দ্র করে দায়েরকৃত মামলাগুলো পুলিশের পক্ষ থেকে গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button