বেনাপোল স্থলবন্দরে আমদানি রপ্তানি ধস

বন্দর ব্যবহারকারী সি এন্ড এফ এজেন্ট ও শ্রমিকরা বিপাকে
ওহিদুল ইসলাম , বেনাপোল প্রতিনিধি:-
দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতেই আমদানি-রপ্তানির পরিমাণে ব্যাপক হ্রাস ঘটেছে। পণ্যে সরকারি নিষেধাজ্ঞা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ট্রাক চলাচলের সীমাবদ্ধতার কারণে বেনাপোল দিয়ে আমদানি কমেছে প্রায় ৩২ হাজার মেট্রিক টন এবং রপ্তানি কমেছে ২১ হাজার মেট্রিক টন। এর ফলে বন্দরের সঙ্গে জড়িত ব্যবসা, শ্রমিক ও পরিবহন খাতে পড়েছে মারাত্মক প্রভাব। বেনাপোল স্থলবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ২১ লাখ ৩০ হাজার ২২৮ মেট্রিক টন পণ্য।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা নেমে দাঁড়ায় ২০ লাখ ৫৬ হাজার ২৮১ মেট্রিক টনে। অর্থাৎ, এক বছরে আমদানি কমেছে ৭৩ হাজার ৯৪৭ মেট্রিক টন।একই সময়ে রপ্তানি হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৬৭২ মেট্রিক টন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৭৫০.১৪ মেট্রিক টনে।এখানে রপ্তানি হ্রাসের পরিমাণ ৩৫ হাজার ৯২১.৮৬ মেট্রিক টন।
চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসেও এই নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। জুন মাসে আমদানি হয় ১ লাখ ৪ হাজার ৬৭৫ মেট্রিক টন, যা জুলাইতে কমে দাঁড়ায় লাখের নিচে। রপ্তানিও কমে হয়েছে মাত্র ২০ হাজার ৩৫১.১৮ মেট্রিক টন।ব্যবসায়ীদের জানা মতে, প্রতিদিন যেখানে আগে গড়ে ৫শ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো, এখন তা কমে ৩শ-এর নিচে নেমে এসেছে। একই অবস্থা রপ্তানিতে বানিজ্যে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানি পণ্যের মধ্যে ছিল শিল্প কারখানার কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, শিশু খাদ্য, মাছ, কেমিক্যাল, মোটরপার্টস, কসমেটিকসসহ নানা পণ্য। উচ্চ শুল্ক আরোপিত পণ্যগুলোর আমদানি বেশি কমেছে।
রপ্তানি পণ্যের মধ্যে ছিলÍপাট ও পাটজাত পণ্য, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল, বসুন্ধরা টিস্যু, মেলামাইন ও মাছ।
এরই মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্য, স্থলবন্দরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। তবে ভারতের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব পণ্যের রপ্তানি প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে।
উল্লেখ্য, গত ৮ এপ্রিল থেকে ভারত তাদের আকাশপথ ব্যবহার করে বাইরের দেশে বাংলাদেশি পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দেয়। এরপর ১৭ মে আরেকটি নিষেধাজ্ঞায় গার্মেন্টস, তৈরি পোশাক, তুলা, সুতির বর্জ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব ও ফলজাত পণ্য রপ্তানিও নিষিদ্ধ করে। এতে দুই দেশের বাণিজ্যে বড় ধস নামে।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন জানান, ‘এ বন্দর দিয়েই ভারত-বাংলাদেশের সিংহভাগ বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ট্রাক চলাচল হ্রাস পেয়েছে। সরকারের কিছু পণ্যে নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্যবসা কমেছে। এর প্রভাব পড়ছে শ্রমিক, পরিবহন খাত এবং সরকারের রাজস্বে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতি আরও বাড়বে।’
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না ফিরলে এবং নিষেধাজ্ঞা শিথিল না হলে বন্দরের বাণিজ্য আরও নাজুক হবে। সরকার ও বেসরকারি খাতের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।’বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক মো. শামীম হোসেন জানান, সরকার বেশ কিছু পণ্যে আমদানি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এসব পণ্য দেশের অভ্যন্তরেই উৎপাদিত হয়। এতে করে ওই পণ্যগুলো বন্দর দিয়ে আর আসছে না। এই বন্দর দিয়ে আগে ভারত থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ ট্রাক পণ্য আসত, রপ্তানি হতো ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাক পণ্য। এখন তা কমে ৩০০ ট্রাকে নেমেছে আমদানি এবং রপ্তানি নেমেছে ১০০ ট্রাকের নিচে।ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আরোপিত বিধিনিষেধ শিথিল না হলে বেনাপোল বন্দরের বাণিজ্য আরও কমে যেতে পারে।