স্থানীয় সংবাদ

খুলনার আরসি ফুড ও ডিসি ফুড’র একযোগে বদলি : নানা অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার : খুলনার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড) ইকবাল বাহার চোধুরী ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ডিসি ফুড) কাজী সাইফুদ্দীনকে একযোগে বদলি করা হয়েছে। আরসিফুড ইকবাল বাহার চৌধূরীকে খাদ্য অধিদপ্তর, ঢাকার অতিরিক্ত পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) এবং ডিসি ফুড কাজী সাইফুদ্দীনকে বরগুনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। রোববার (১৭ আগস্ট) খাদ্য মন্ত্রণালয়ের (সংস্থা প্রশাসন-১) শাখার উপ-সচিব জয়নাল মোল্লা স্বাক্ষরিত পত্রে বদলি আদেশ প্রদান করা হয়েছে।
একই আদেশে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক এস এম কায়সার আলীকে খুলনার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক এবং বরগুনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ তানভীর হোসেনকে খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।
একাধিক আভিযোগ জানা যায় সূত্র, খুলনা খাদ্য বিভাগের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আরসিফুড ইকবাল বাহার চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৩ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ তুলেছেন খালিশপুরের ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) ডিলার ইমন শেখ। এ বিষয়ে সোমবার (১১ আগস্ট) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন ডিলার ইমন শেখ। বিগত জুন মাসে খাদ্য উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) খুলনা জেলার সদস্য মোঃ রিদোয়ান শেখ তামিমি। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার কাছে গত বছরের ০২ সেপ্টেম্বর দায়ের করা খুলনার খাদ্য পরিদর্শক সেলিম রেজার লিখিত অভিযোগে বেরিয়ে আসে খুলনা খাদ্য বিভাগের চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। আর সেসব অভিযোগের কপি পাঠানো হয় দুদক, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক, প্রেসক্লাব ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন খুলনার সম্বয়কদের কাছে। ইতোমধ্যে তার দুনীর্তি ও অনিয়মের সঠিক তদন্ত করে শাস্তির দাবীতে প্রধান উপদেষ্টা ও খাদ্য উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
সূত্রে জানা গেছে, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইকবাল বাহার চৌধুরী। তিনি ২০২৪ সালের মার্চ মাসে আরসিফুড হিসাবে খুলনাতে যোগদান করেন। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের ছত্রছায়ায় এবং মন্ত্রীর জামাতা নাসের বেগের সহায়তায় দূর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতায় অপ্রতিরোধ্য ইকবাল বাহার চৌধুরী নিশ্চিন্তে গড়ে তোলেন দুর্নীতির বিশাল সম্রাজ্য।
অপরদিকে, খুলনার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ছিল। চলমান বোরো সংগ্রহে সীমাহীন অনৈতিকতার আশ্রয় নিয়ে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেছেন ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর এ অসাধু কর্মকর্তা। অগ্রিম রেট বেঁধে আদায় করেছেন ঘুষের টাকা। ফলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের উদ্ধতন কর্মকর্তা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় । ছাত্র জীবনে তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটি ছাত্রলীগের হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন । ছাত্রলীগের ক্যাডার হিসেবে এমন কোন অপকর্ম নেই যা তিনি করেননি। সেই সুবাদে অতি সহজেই বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের নেতাকর্মীদের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। রাজনীতিক তদবীরে ৩১তম বিসিএস ক্যাডার নির্বাচিত হয়ে খাদ্য কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগদানের সাথে সাথেই নানা অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তিনি রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপটে জুনিয়র হলেও সিনিয়রদের টপকে সুবিধাজনক জায়গায় পোস্টিং নেন। কাজী সাইফুদ্দিন নিজেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ তাপসের চাচাতো ভাই পরিচয় দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে ব্যাপক আধিপত্য বিস্তার করেন। তখন অফিস ফাঁকি দিয়ে বেশিরভাগ সময় শেখ তাপসের অফিসের সময় কাটাতেন।
এদিকে, বর্তমানে হাইকোর্টে চলমান ওএমএস ডিলারদের করা মামলা যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে খুলনা খাদ্য বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের জন্য। বিশেষ করে কাজী সাইফুদ্দিন দুর্নীতিবাজদের জন্য এটি যেন হয়ে উঠেছে আলাদিনের চেরাগ।
সূত্র বলছে, নগরীর প্রতিটি ওএমএস পয়েন্টে নামমাত্র চাল-আটা বিতরণ করা হয়, বাকি অংশ কালোবাজারিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এসব পয়েন্ট থেকে উঠে আসছে এক ভয়ানক অভিযোগ—প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা তুলে তোলা হয় ডিসি ফুডের জন্য।
খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য পরিদর্শক ইকবাল বাহার চৌধুরী ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিন এর বদলী আদেশ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন খুলনা খাদ্য বিভাগের ডিলার ও খাদ্য পরিদর্শকেরা।
বদলী আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইকবাল বাহার চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন, অফিসিয়াল সিস্টেম অনুযায়ী তাকে বদলি করা হয়েছে। এখানে অনিয়ম দুর্নীতির কোন বিষয় নেই। তবে অনেকের তদবির রাখতে না পারা এবং ও এম এস এর ডিলারশিপের বিষয়ে তাদের আবদার পূর্ণ করতে না পারায় অভিযোগ করেছে বলেও দাবি করেন তিনি

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button