খুলনার ‘লাজ ফার্মা’য় নকল ওষুধ!

ফিলিপাইনের নামে নকল ওষুধ বাজারজাত
ভোক্তা অধিকারের অভিযানে ৫ লাখ টাকা জরিমানা
গ্রাহকদের আস্থা ও বিশ্বাস ভঙ্গ, ক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার : দেশিয় একটি ভূয়া প্রতিষ্ঠানের নকল ওষুধকে ফিলিপাইন থেকে আমদানিকৃত ওষুধ বলে বিক্রি করেছে ‘লাজ ফার্মা’ নামক ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। একজন গ্রাহকের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার (১৮ আগষ্ট) লাজ ফার্মায় অভিযান পরিচালনা করে সত্যতা মেলে। তাৎক্ষনিক প্রতিষ্ঠানটিতে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। নকল ওষুধের এ ব্যবসা ‘লাজ ফার্মা’র খুলনা মহানগরীর রয়েল মোড় সংলগ্ন শাখার (আউটলেটে)।
এদিকে, স্বনাম ধন্য প্রতিষ্ঠান ‘লাজ ফার্মায়’ নকল ওষুধ বিক্রির এমন ঘটনা ধরা পাড়ায় গ্রাহকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সু-নামের মুখোশের আড়ালে তাদের এমন প্রতারণা ও অপরাধে অনেক গ্রাহক প্রতিষ্ঠানটির ওপর থেকে বিশ্বাস ও আস্থা ভঙ্গ করে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর রয়েল মোড়ের লাজ ফার্মায় সোমবার (১৮ আগস্ট) অভিযান পরিচালনা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনার বিভাগীয় পরিচালক মোহাম্মাদ সেলিম। অভিযোগ ছিল লাজ ফার্মায় ঝিনাইদহের এডোরাবেলা হেলথকেয়ার কর্তৃক ভেজাল ও নকল ওষুধ সরবরাহের। অভিযানকালে নকল ঔষধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এডোরাবেলা হেলথকেয়ার ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান লাজ ফার্মা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। এ সময় নকল ওষুধ বিক্রির অপরাধে লাজ ফার্মাকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালক মোহাম্মদ সেলিম জানান, সাইফুল্লাহ আল রাব্বি নামে এক ক্রেতা গত মে মাসে লাজ ফার্মা থেকে তার মায়ের জন্য একটি ওষুধ সরবরাহ করেন। ওই সময় তার নিকট ওই ক্রয়কৃত ওষুধটি ফিলিপাইনের ওষুধ বলে বিক্রি করা করে লাজ ফার্মার সংশ্লিষ্টরা। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (১৮ আগষ্ট) লাজ ফার্মায় অভিযান চালালে নকল ঔষধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এডোরাবেলা হেলথকেয়ার ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান লাজ ফার্মা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। ওই অপরাধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৪০, ৪৪ ও ৫০ ধারা মোতাবেক রয়েল মোড়স্থ লাজ ফার্মাকে তাৎক্ষনিক ৫ লাখ টাকা জরিমানা ও আদায় করা হয়। লাজ ফার্মার সিও মঈনুদ্দিন তাৎক্ষণিক জরিমানার অর্থ পরিশোধ করেন।
তিনি আরো বলেন, ভোক্তা অধিকারের জেল দেওয়ার এখতিয়ার নেই, জরিমানার এখতিয়ার আছে। সেনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লাজফার্মার সিও মঈনুদ্দিন বলেন, ভোক্তা অধিকারের তথ্যমতে তারা চেষ্টা চালিয়ে ঝিনাইদহ অবস্থিত এডোরাবেলা হেলথ কেয়ারের মার্কেটিং অফিসার তানভির আহমেদ পলাশকে সোমবার (১৮ আগস্ট) ভোক্তা অধিকারের কাছে হাজির করেন। তাদের Ithching Reliefe Lotion (চুলকানি নিরাময়) নামের চর্ম রোগের ওষুধটি নকল বলে শনাক্ত হয়। এ ওষুধ বিক্রির অভিযোগে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এদিকে, একাধিক গ্রাহক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা থেকে লাজ ফার্মা থেকে ওষুধ কিনতাম। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এতবড় প্রতারণা ও অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে সেটি বুঝতে পারেনি। তাদের এ ধরণের প্রতারণা প্রকাশ হওয়ায় বিষ্মিত হয়েছি। এখন আর তাদের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা থাকলো না। তবে, তারা যে অপরাধ করেছে- সেজন্য শুধুমাত্র জরিমানা নয়, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা দায়ের করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানিয়েছেন গ্রাহকরা।
অপরদিকে, সোমবার (১৮ আগষ্ট) খুলনার নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়াধীন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় ও খুলনা বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন জেলা কার্যালয় সমূহ নিয়মিত বাজার তদারকিসহ অভিযান অব্যহত রয়েছে। ওই ধারাবাহিকতায় ভোক্তা অধিকারের ১১ টিম তদারকিমূলক অভিযান পরিচালনা করে। এসময়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসমূহের বাজার দর ও ক্রয় ভাউচার যাচাই করা হয় এবং সকল ব্যবসায়ীকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রির নির্দেশনা দেয়া হয়। তদারকিকালে সরকার নির্ধারিত মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির জন্য ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয় এবং কেউ সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে বেশি মূল্য নিলে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারি দেওয়া হয়। অভিযান কালে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বাজার তদারকি ও জরিমানা করা হয়। নিয়মিত এ অভিযানে ১৮ প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। জনস্বার্থে অভিযান চলমান রাখার আশ^াস সংশ্লিস্টদের।
এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মাদ সেলিম জানান, খুলনার বাজারে আমাদের নিয়মিত তদারকিসহ অভিযান অব্যহত আছে। ভোক্তার অধিকার লঙ্ঘিত করলে ওই ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা হিসাবে জরিমানা আরোপসহ আদায় করা হচ্ছে। খুলনার বাজার সমূহে কোনো ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠান সরকার প্রদত্ত নিয়মনীতির বাইরে ব্যবসা পরিচালনা করলে তাদের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। জনস্বার্থে আমাদের কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।