রূপসায় কৃষি ব্যাংকে লুটকৃত দেড় লাখ টাকা উদ্ধার

# গ্রেফতারকৃত আসামীর ১৬৪ ধারা জবানবন্দী প্রদান
# ১০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে না দেওয়ায় ক্ষোভ থেকে টাকা লুট #
স্টাফ রিপোর্টার/রূপসা প্রতিনিধি ঃ খুলনার রূপসায় কৃষি ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ১৬ লাখ টাকা চুরির ঘটনায় ধরা পড়েছেন মূল হোতা ইউনুস শেখ । স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার কাছ থেকে চুরির দেড় লাখ টাকা সোমবার ভোরে উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে রোববার ভোরে রূপসা ঘাট কৃষি ব্যাংক ভবনেরই চারতলা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত ইউনুস (৪৮) উপজেলার নিকলাপুর গ্রামের ইনছান শেখের ছেলে।খুলনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘এ’ সার্কেল মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ইউনুসকে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি টাকা চুরির কথা স্বীকার করেছে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশের একটি দল প্রায় দেড় লাখ টাকা উদ্ধার করেছে। তবে এখনো পর্যন্ত লুট হওয়া সব টাকা উদ্ধার করা যায়নি। বাকি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তিনি জানান, তদন্তে প্রমাণ মিলেছে, এই চুরির ঘটনাটি ইউনুস একাই ঘটিয়েছে। সোমবার তাকে আদালতে প্রেরণ করে রিমান্ড চাওয়া হবে। পুলিশ জানায়, ইউনুস পেশায় একজন লেদ মিস্ত্রি, ট্রাকের যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করতেন তিনি। লোহা কাটার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েই তিনি ব্যাংকের ভল্ট ও তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করতে সক্ষম হন। শুক্রবার ভোর রাতে ব্যাংকে কোনো নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে টাকা নিয়ে পালিয়ে যান তিনি।এদিকে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক ব্যাংকের তিনজন নিরাপত্তা প্রহরী এখনো পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোন অভিযোগ না থাকায় তাদেরকে স্বাক্ষী হিসেবে রেখে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ওসি।রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান জানান, কৃষি ব্যাংক পূর্ব রূপসা ঘাট শাখার ৬টি তালাসহ ভল্ট ভেঙ্গে ১৬ লাখ টাকা লুট হওয়ার ঘটনায় ইউনুসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। আরও তথ্য জানা এবং লুট হওয়া টাকা উদ্ধারের জন্য পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আশরাফুল ইসলাম জানান, ইউনুস মোটা অংকের ঋণের টাকার চাপে ছিলেন। ইতিমধ্যে চুরি করা টাকা থেকে কিছু ঋণ পরিশোধও করেছেন তিনি। ইতোমেধ্য তার ঘরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে এক লাখ ৫২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার আদালতে হাজির করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত রূপসার বিচারক অনন্যা রায়। অপরদিকে আমাদের রূপসা প্রতিনিধি বেনজীর হোসেন জানান, রূপসায় কৃষি ব্যাংকের টাকা লুটের ঘটনায় থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোঃ ইউনুস শেখ (৩৮) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। তার নিকট থেকে ১লাখ ৫২ হাজার টাকা ও লুটকাজে ব্যবহারিত বিভিন্ন মালামাল উদ্বার করে পুলিশ। সে পেশায় গাড়ির গ্যারেজের গ্রাইন্ডিং মেশিন মিস্ত্রী। এ ঘটনায় ব্যাংকের ম্যানেজার থানায় মামলা দায়ের করেন, যার নং- মামলা নং- ১৭, তারিখ-১৬/০৮/২০২৫, ধারা-৩৮০/৪৫৪ পেনাল কোড। পুলিশ জানায়, টাকা লুটের ঘটনার পর থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান এর নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মো: আশরাফুল আলম অভিযান চালিয়ে রবিবার ভোরে ইউনুসকে গ্রেফতার করে। ইউনুস উপজেলার বাগমারা এলাকার কৃষি ব্যাংক রূপসা ঘাট শাখার উপরে পরিবার নিয়ে বসবাস করে এবং নিচেই তার ওয়াকশপ এর ব্যবসা করে এবং বাগমারা এলাকার মোঃ ইনছান শেখের ছেলে (ইসমাইলের ভাড়াটিয়া) হিসেবে বসবাস করে আসছে। ইউনুস জানায়, উক্ত ব্যাংক হইতে তাকে ১০ লাখ টাকা লোন দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন কাগজপত্র জমা নেয় ব্যাংক কৃর্তপক্ষ। তাকে লোন না দিয়া ১৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার ব্যাংক ম্যানেজার ও লোন অফিসার তাকে ব্যাংক হইতে অপমান করে বের করে দেয়। সেই রাগে ১৫ আগস্ট শুক্রবার ভোর বেলা ফজরের নামাজের পর ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মী আবুল কাশেম চলে গেলে সে ৪ তালা থেকে দেখে নিচে এসে তার গ্যারেজ থেকে গ্রাইন্ডিং মেশিন, কাটিং ডিক্স সংযুক্ত করে দোতলায় ব্যাংকের মূল গেটে এসে গ্রাইডিং মেশিন দিয়ে তালা কাটিয়া ভিতরে প্রবেশ করে। হাত ও পায়ের ছাপ না থাকে সে জন্য হাত ও পায়ে মোজা ব্যবহার করি (চুরি শেষে মোজাগুলি ছাদে পুড়িয়ে ফেলে) এবং মাথায় একটি সাদা রংয়ের টিস্যু কাপড়ের ব্যাগ দিয়ে মুখ আড়াল করার চেষ্টা করে বলে সে জানায়। ইউনুস আরো জানায়, গ্রাইন্ডিং মেশিন দিয়ে ব্যাংকের দরজার বাইরের কলাপ্সিবল গেটের তালা এবং ব্যাংকের কাঠের দরজার তালা কাটিয়া ব্যাংকের ভিতরে প্রবেশ করে প্রথমে সিসি ক্যামেরা গুলি ব্যাংকের ভিতরে থাকা ছোট তোয়ালে রোমাল দিয়া ঢেকে রাখে। অতপর গ্রাইন্ডিং মেশিন দিয়ে ভল্ট রুমের তালা কেটে ভিতরে প্রবেশ করে ভল্টের ভিতরে সিসি ক্যামেরা ঢেকে রাখে। গ্রাইন্ডিং মেশিন দিয়ে ভল্টের কবজা গুলি এবং পিতলের হ্যান্ডেল কেটে ফেলে। এসময় প্লাস্টিক চটের ব্যাগে ৫০ টাকা নোটের অনেক গুলি বান্ডিল সহ ২০ টাকা, ১০ টাকা, ১০০ টাকা ও ২০০টাকা নোটের অনেক গুলি বান্ডিল ভরে নেই।
পরে জুম্মার নামাজ শেষে আবারও ব্যাংকে প্রবশে করে স্ক্রু ড্রাইভার এর সাহায্যে ছোট ড্রয়ারটি খুলে ৫০০টাকা ও ১০০০টাকার নোটের অনেক গুলি বাল্ডিল লুঙ্গিতে করে ব্যাংকের উপরে ০৩ তলায় বিমা কোম্পানীর পাশে খালি ফ্লাটের রুমে দরজার পিছনে রাখে। সেখান থেকে ৫০ টাকা নোটের বান্ডিল নিয়ে রূপসা বাজার এর বিভিন্ন দোকানদার সহ অন্যান্য পাওনাদার ও কিছু সমিতির কিস্তি/দেনা পরিশোধ করে। এছাড়া ইউনুসের মেয়ের মামলা নিষ্পত্তির জন্য টাকা লেনদেন করার উদ্দেশ্যে খুলনায় যাই। পরবর্তীতে বিভিন্ন পাওনাদারের বিভিন্ন দেনা পরিশোধ করে। আটক ইউনুসের নিকট থাকা গ্যারেজের ড্রয়ারে ও কাছে রাখে। লুটকৃত টাকা থেকে তার বাড়ি ভাড়া বাবদ ১০ হাজার ও সংসার খরচ বাবদ ১০ হাজার টাকা তার স্ত্রীকে দেয়। ঐদিন রাত অনুমান ১০ টায় পুলিশ সহ ব্যাংকের লোকজন ২য় তলায় কৃষি ব্যাংকে আসে। তা দেখে সে দ্রুত চলে যায়। পুলিশ গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে টাকা পয়সা ও অন্যান্য মালামাল উদ্ধার করে বলে আটক ইউনুস স্বীকারোক্তী জানায়। খুলনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট্র অন্যন্যা রায় এর আদালতে ব্যাংকের তালাভেঙ্গে টাকা চুরি করার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী প্রদান করেন। থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ইউনুস কে গ্রেফতার করা হয়েছে ।
তার কাছ থেকে নগদ ১ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা ও বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।
জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন আদালত।