স্থানীয় সংবাদ

সেই খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে ট্রাক-ইজিবাইকের সংঘর্ষে নিহত ৪

শোকে কাতর ডুমুরিয়ার চার পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনার ডুমুরিয়ায় ট্রাক ও ইজিবাইকের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। সোমবার উপজেলার জিলেরডাঙ্গা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৪ জন আহত হয়েছেন। দ্রুতগামী একটি পিকআপ ভ্যান মুহূর্তেই কেড়ে নিল চারটি প্রাণ, রেখে গেল বুক ফাটা কান্না আর শোকে ভেঙে পড়া পরিবার। নিহতরা হলেন- রুস্তম শেখ (৬০), হাফিজ সরদার (৫৩), রুনা আক্তার (২৫) এবং ইজিবাইক চালক মুজাহিদুল (২০)। ঘটনাস্থলে ইজিবাইক যাত্রী ডুমুরিয়ার উত্তর কালিকাপুর গ্রামের রিনা খাতুন ও বাগদাড়ি গ্রামের মোহাম্মদ রুস্তম আলী খান নিহত হয়। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে ইজিবাইক চালক ডুমুরিয়ার খরসন্ডা গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ জাহিদুর মোড়ল ও ইজিবাইক চালক মুজাহিদুল ইসলাম মারা গেছে। ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয়রা জানান, ডুমুরিয়া বাজার থেকে ৭ জন যাত্রী নিয়ে ইজিবাইকটি খুলনা সাতক্ষীরা মহাসড়ক দিয়ে গল্লামারীর দিকে আসছিলো। যাত্রীবাহী ইজিবাইকটি খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের জিলেরডাঙ্গায় পৌঁছালে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা দ্রুতগামী ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ইজিবাইকটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে চার জন মারা যান। আহত হন ৪ জন। গুরুতর আহতদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পরপরই খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ যান চলাচল স্বাভাবিক করে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, ঘটনাস্থলেই দু’জন মারা যান এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর আরো দু’জন মারা যান। আহত ৪ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনার পর পিকআপ ভ্যানের চালক ও সহকারী পালিয়ে যান।
পরীক্ষার পথে সামিয়া ও দাদার শেষ যাত্রাঃ ২০২৫ সালের এইচএসসির শেষ ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছিলেন সামিয়া খাতুন। তাকে কলেজে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তার দাদা রুস্তম শেখ। কিন্তু খুলনা–সাতক্ষীরা মহাসড়কের ঝিলেরডাঙায় থেমে যায় তাদের জীবন। ভয়াবহ ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা যান রুস্তম শেখ। গুরুতর আহত সামিয়াকে নেয়া হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তার দুই পা রক্তাক্ত, অবস্থা আশঙ্কাজনক। চলছে রক্তদান। কিন্তু তাকে এখনও জানানো হয়নি তার প্রিয় দাদা আর নেই।
আদালতের পথে মায়ের লড়াই, সন্তানের কান্নাঃ একই ইজিবাইকে ছিলেন রিনা আক্তার, তার ছেলে আট বছরের আসিবুর ও খালা মিনা আক্তার। আদালতে যাওয়ার পথে সেই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান মিনা আক্তার। রিনা আক্তার লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে হাসপাতালের ওটিতে। আর মেঝেতে প্রায় অচেতন ছোট্ট আসিবুর মাঝে মাঝে আধখোলা চোখে তাকায়, কিন্তু বুঝে উঠতে পারে না কোথায় তার মা, কোথায় খালা।
প্রিয় স্ত্রীকে বাড়ি নেওয়ার স্বপ্ন ভেঙে গেল হাফিজেরঃ খরশন্ডা সাহস গ্রামের হাফিজ সরদার যাচ্ছিলেন খুলনায়, স্ত্রীকে চিকিৎসক দেখাতে। পরিকল্পনা ছিল চিকিৎসা শেষে তাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা। কিন্তু নিয়তি লিখেছিল অন্য পরিণতি। খুলনা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
জীবনের শেষ যাত্রায় মুজাহিদঃ মাত্র ২৫ বছরের তরুণ ইজিবাইক চালক মুজাহিদ মোড়ল। যাত্রীদের নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছানোই ছিল তার প্রতিদিনের দায়িত্ব। কিন্তু আজ আর পারলেন না। খুলনা মেডিকেলে নেয়ার পথেই থেমে গেল তার জীবনযাত্রা। তিনিই পরিবারের একমাত্র সন্তান। তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা।
শোকে স্তব্ধ হাসপাতালঃ একসাথে চারটি মরদেহ, নিভে যাওয়া চারটি পরিবারের আলো, অচেতন দৃষ্টিতে শুয়ে থাকা আট বছরের শিশু সব মিলিয়ে শোকের আবহে ভারী খুলনা মেডিকেলের পরিবেশ। ডুমুরিয়ার বাগদারী, খরশন্ডা সাহস ও হাসপাতাল এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। স্বজনদের কান্নায় ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে চারদিক।
উল্লেখ্য, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কটি খুবই খারাপ। যান চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রায় ঘটছে ছোট খাটো দুর্ঘটনা। সড়কটি নির্মাণের মাত্র ৫ বছরেরর মাথায় এমন বেহাল দশায় ফুসে উঠেছে নাগরিক নেতারা। তারা সড়ক তদারকি কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button