ভৈরব সেতুর নির্মাণে কচ্ছপ গতি : দফায় দফায় বাড়ছে মেয়াদ

সৈয়দ জাহিদুজ্জামান দিঘলিয়া প্রতিনিধি ঃ দফায় দফায় বাড়ছে মেয়াদ। নির্মাণ কাজ শুরুর পর কেটে গেছে সাড়ে চার বছর। অগ্রগতি মাত্র ১৬ শতাংশ। এমনই কচ্ছপ গতিতে চলছে খুলনাবাসীর প্রত্যাশিত ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ। খুলনার মানুষের প্রত্যাশা ছিল ২০২৪ সালে শেষ হবে সেতুর নির্মাণ কাজ। অথচ ২০২৫ সাল শেষ প্রান্তে এসেও সাড়ে চার বছরেও সেতুটি আলোরমুখ দেখেনি। শুধু পিলার দেখেই শান্তনার খোরাক মিটাচ্ছে খুলনাবাসী।
সেতুর নির্মাণ কাজের মেয়াদ দ্বিতীয় দফায় ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হলেও শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তবে ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদী সেতুর নির্মাণ কাজের বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ)’র নির্বাহী প্রকৌশলী। এদিকে টানা ৩ মাস বন্ধ থাকার পর সেতুর শহরাংশে নির্মাণ কাজ আবারও শুরু হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য, ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর সেতু নামে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সেতুর নির্মাণকাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের ২৪ মে। তবে সাড়ে চার বছর পরও সেতুর শহরাংশে রেলওয়ের অধিগ্রহণ করা দুই দশমিক ৫৮৬ একর জমি এখনও বুঝে পাইনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সেতুর নির্মাণ কাজ শুরুর তিন বছর পর ২০২৪ সালের ১৪ মে নকশা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর এ নকশা পরিবর্তনের সাথে স্বার্থ জড়িয়ে আছে সড়ক জনপথ অধিদপ্তর এবং সেতু বাস্তবায়ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের। কারণ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের ক্ষেত্র দিতে পারেনি ভৈরব সেতু বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ। বর্তমান সময় পর্যন্তও খুলনা শহরাংশের জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। অর্থাৎ রেলওয়ের জায়গা স্থানান্তর করা হয় নি। দিঘলিয়া অংশের জায়গাও ঠিকাদার সম্পূর্ণরূপে পরিস্কার করতে পারেনি। সেতু নির্মাণের জায়গার মসজিদ অধিগ্রহণ হলেও মসজিদ স্থানান্তর করা হয় নি। পাশাপাশি রয়েছে গাছপালা ও অবৈধ স্থাপনা। এদিকে নকশা অনুমোদনের জন্য আরও সময় অপেক্ষা করতে হবে। কারণ পরিবর্তিত নকশা অনুমোদন ছাড়া ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ কাজ করলে মোটা অংকের টাকা লোকসান গুনতে হতে পারে। তাই তাদের কচ্ছপ গতির পিছনে চলছে নকশা পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষার প্রহর গোনা।
সেতুর রেলিগেট অংশের নদীর তীরবর্তী ১৩ ও ১৪ নং পিলারের নির্মাণের কাজ আংশিক সম্পন্ন হয়েছে। ১, ২, ৪, ৯-১২ নং ৭টি পিলারের পাইলিংয়ের কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ৮ নং পিলারের পাইলিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে ১৪ টি পিলারের মধ্যে ইতিমধ্যে ১৩টি পিলারের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
নির্মাণ কাজের দীর্ঘসূত্রিতা প্রসঙ্গে প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার (পিএম) প্রকৌশলী এস এম নাজমুল হক বলেন, ‘কাজের শুরুতে সেতু নির্মাণের অধিগ্রহণকৃত জমি বুঝে না পাওয়ায় শুরু থেকে কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। এছাড়া করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দা, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি, শ্রমিক সংকটের কারণেও কাজের ব্যাঘাত ঘটে। বর্তমানে সেতুর শহরাংশের পিলারগুলির পাইলিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। এখন থেকে কাজের ধারাবাহিকতা থাকবে। পরিবর্তিত নকশার অনুমোদন এবং সেতুর জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের অনুমোদন করা জমি বুঝে পেলে কাজে আরও গতি আসবে।
সেতুর বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ তানিমুল হক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সেতুর ১৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে। স্টিল সেতুর দৈর্ঘ্য ১০০ মিটারের পরিবর্তে ১৬০ মিটার এবং প্রশস্ত ৩ মিটার বৃদ্ধি করে নকঁশা পরিবর্তে অনুমোদন বুয়েট বিশেষজ্ঞ দলের কাছ থেকে এখনও পাওয়া যায়নি। আশা করি আগামী সেপ্টেম্বরের ভিতর একটা রেজাল্ট পাব। রেলওয়ের জমি হস্তান্তরের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়বে না। শুধু বর্ধিত কাজের ব্যয় বাড়বে। তবে সেতুর জন্য জমি অধিগ্রহণের ধার্যকৃত বেঁচে যাওয়া অর্থ রয়েছে, তা দিয়ে বর্ধিত কাজের ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। সেতুটির নির্মাণ কাজের সকল প্রকার জটিলতা নিরসন করে নির্মানকাজে গতি আনায়ন ও গণমানুষের স্বপ্নের ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার জোর দাবী দিঘলিয়ার সর্বস্তরের মানুষের।