তিন ফ্যাসিস্টের অবৈধ দখলদারীত্ব দৌলতপুর লঞ্চ ঘাট এক বছরেও দখলমুক্ত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ

# কেসিসি ও বিআইডব্লিউটিএ’র গতিহীন পদক্ষেপ #
# সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব #
খলিলুর রহমান সুমন ঃ তিন ফ্যাসিস্টের অবৈধ দখলদারীত্ব খুলনার ঐতিহ্যবাহী দৌলতপুর লঞ্চ ঘাট গত এক বছরেও দখলমুক্ত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি কেসিসি ও বিআইডব্লিউটিএ-কে অবগত করলেও কাজের কাজ তেমন কিছুই হয়নি। এতে আসন্ন দুর্গাপূজায় ভৈরব নদীতে মূর্তি ডুবাতে গেলে এসব অবৈধ স্থাপনা স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধাগ্রস্ত করবে। এমনই অভিযোগ কেসিসির প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ফিরোজ সরকারকে করা হলে তিনি কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও গত দু’ সপ্তাহে তা আলোর মুখ দেখেনি। বছরের পর বছর ধরে এই তিন ফ্যাসিস্ট লঞ্চঘাট দখল করে বালু, ইট ও পাথরের ব্যবসা করে আসছে। এতে করে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমনকি লঞ্চঘাটটি নদী পারাপারে ঘাট করা নিয়ে চাপ থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক আচরণ করছে। কারণ দিঘলিয়ার মানুষ এপারে আসতে হয় দৌলতপুর খেয়াঘাট দিয়ে। ওই খেয়া ঘাটটি বাজারের ভিতরে হওয়ায় পারাপারে বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে দিঘলিয়াবাসীর। তারা খেয়া ঘাটটি লঞ্চঘাটে স্থানান্তরের জন্য আন্দোলন করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ঘাটের সাথে গড়ে ওঠা (পুলিশ ফাড়ি সংলগ্ন) অবৈধ দখলদাররা একের পর এক নদী দখল করে ব্যবসা করে চললেও ফাঁড়ির পুলিশ রয়েছে নিরব। এ ব্যাপারে কেএমপির সহকারি পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া ও ট্রাফিক) খোন্দকার হোসেন আহম্মদ বলেন, বিষয়টি তিনি অবগত নন, তবে দৌলতপুর থানার ওসির সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। ওই ঘাটের একাংশ ইজারা নিয়ে ব্যবসা পরিচালনাকারি বিএনপি নেতা রিয়াজ শাহেদ বলেন, বিআইডব্লিউটিএ তাকে ভূল করে নোটিশ দিয়েছে। তিনি যেখানে দখলে আছেন তার পৈত্রিক সম্পত্তি আর কিছু জমি লিজ নেয়া আছে। অথচ যুবলীগ নেতা রানা পারভেজ সোহেল, ৬নং ওয়ার্ড-এর আ’লীগের সাবেক কাউন্সিলর সামসুদ্দীন প্রিন্স ও ৬নং ওয়ার্ড আ’লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মীর্জা তরফদার-এই তিনজন কোন রকম বরাদ্দ না নিয়েই ঘাট দখল করে বালু, ইট ও পাথরের ব্যবসা পরিচালনা করছে। চক্রটি এমনভাবে লঞ্চঘাটটি ভরাট করেছে যে তার অস্তিত্ব পাওয়া কঠিন। এমনকি ওই ঘাটে যাওয়ার সড়কের পাশে ৮/১০টি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে একটি চক্র ভাড়া উঠিয়ে খাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী কেসিসির প্রশাসক ও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ ব্যাপারে বিএল কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর হুমায়ুন কবির বলেন, এ দখলদারের মধ্যে তাদের কেউ থাকলে প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেসিসির সচিব শরীফ আসিফ রহমান বলেন, দৌলতপুর বাজার বাটার দোকানের মোড় থেকে লঞ্চ ঘাট পর্যন্ত যেসব দোকান সড়কের পাশে রয়েছে তা অধিকাংশই বরাদ্দ দেয়া। ২/১টি দোকান অবৈধভাবে করেছে। সে ব্যাপারে দেখছি। বিআইডব্লিউটিএ-এর বন্দর ও পরিবহন বিভাগের উপ পরচিালক মাসুদ পারভেজ বলেন, গত ২৫ সেপ্টেম্বর তিন দখলদারকে অবৈধ স্থাপনা ও বালু ইট অপসারণে নোটিশ দেয়া হয়েছে। নোটিশপ্রাপ্ত অবৈধ দখলদাররা হলেন, শাহজালাল ট্রেডার্সের মালিক খায়রুল আলম, মেসার্স কামরুল ট্রেডার্সের মালিক মোঃ কামরুল ও মেসার্স তরফদার ট্রেডার্সের মালিক মিজানুর রহমান মীর্জা তরফদার। এর মধ্যে যুবলীগ নেতা রানা পারভেজ সোহেলের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছে কামরুল আর সাবেক কাউন্সিলর প্রিন্সের কাছ থেকে খায়রুল ভাড়া নিয়েছে । ওই নোটিশে বলা হয়, আগামী দু’দিনের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা ও মালামাল অপসারণ না করা হলে বন্দর আইন ও বন্দরবিধিমালাসহ ফৌজধারী দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪৩১ ও ৪৩২ ধারা অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। কিন্তু ওই বেধে দেয়া সময় পার হলেও বিআইডব্লিউটিএ বুধবার পর্যন্ত অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকরী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। দৌলতপুর পূজা উদযাপন পরিষদের সাঃ সম্পাদক প্রকাশ চন্দ্র অধিকারী বলেন, দৌলতপুর লঞ্চঘাটে বিসর্জন হবে ৮টি মন্দিরের প্রতিমা। এখানে বিসর্জনের সময় ২/৩ হাজার মানুষের সমাগম হবে। এসব বালু, ইট আর অবৈধ স্থাপনা প্রতিমা বিসর্জনের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যারা এসব ব্যবসা করে তাদের সেক্রিফাইজ করা উচিত। কিন্তু তারা তা করছে না। যারা ইট-বালুর ব্যবসা করে তারা ওই জায়গাগুলো একেবারে আটকে দিয়ে পড়ে আছে। এখন সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যম দিয়ে গত দু’দিন আগে কোন রকম একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে। বালুর বস্তা ফেলে মোটামুটি কোন রকমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘাটটি এতকাল ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে এখন সে জায়গাটা কেন থাকবে না। এটা হচ্ছে এই এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি। এটা অবশ্যই হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। বুধবার লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়, দখলদাররা তাদের ইট-বালু রাখা ও সরানোর কাজ করছে। কেসিসি প্রতিমা বিসর্জনের স্থানে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা করছে।