নগরীতে চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে বৃদ্ধ কর্তৃক শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা

অভিযুক্ত মহুরি আবুবকরের জামিন না মঞ্জুর : কারাগারে প্রেরণ
নখের আঁচড়ে শিশুটির স্পর্শকাতর স্থানে ক্ষত সৃস্টি
ঘটনা ফাঁস হওয়ায় শিশুটিকে হত্যার হুমকি
এম এ আজিম : মহানগরীতে চকলেট দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৭৫ বছর বয়সি বৃদ্ধ কর্তৃক সাড়ে ৫ বছর বয়সী এক অবুজ শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। খুলনা মহানগরীর রূপসা স্ট্যান্ড রোডস্থ ডাক্তার গলি এলাকার এ ঘটনায় শিশুর মা বাদি হয়ে লম্পট মহুরি আবুবকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে খুলনা সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তবে, মামলা দায়েরের পর পুলিশ আসামিকে গ্রেফতার করতে না পারলেও রোববার (৫ অক্টোবর) দুপুরে আসামি আবুবকর সিদ্দিক খুলনার আদালতে জামিন নিতে গেলে আদালত জামিন না-মঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম।
এজাহারে বলা হয়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর বেলা আনুমানিক সাড়ে ১১ টার দিকে সাড়ে ৫ বছর বয়সী শিশুটি বাসার সামনে খেলা করার সময় প্রতিবেশী অবসরপ্রাপ্ত মহুরি মো. আবু বকর সিদ্দিক (৭৫) চকলেট দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে রূপসা স্ট্যান্ড রোডস্থ ডাক্তার গলির বাসায় ডেকে নিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে যৌনকামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে মেয়েটিকে খাটের উপর শুয়াইয়ে হাত ধরে বলে, বেশি কথা বলবা না, বেশি কথা বললে মেরে ফেলবো। এমনকি সে শিশুটির শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে তাকে ধর্ষণের চেষ্টাও করে। একপর্যায়ে লম্পট আবুবকরের নখের আঁচড়ে শিশুটির স্পর্শকাতর স্থানে ফোলা জখম হয়। এ সময় শিশুটি চিৎকার করলে তাকে বিভিন্ন হুমকি ধামকি প্রদান করে। এমনকি এ ঘটনা কাউকে বললে তাকে হত্যা করার হুমকি দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। ওই সময় শিশুটি তার নিজ বাসায় চলে যায়। পরবর্তীতে শিশুটি ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে কাঁদতে শুরু করলে শিশুটির মা কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে ঘটনার বিস্তারিত জানায়। তখন চিকিৎসার জন্য তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে ৩০ সেপ্টেম্বর শিশুটির মা বাদি হয়ে আবু বকর সিদ্দিককে (৭৫) আসামি করে খুলনা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ৩৭, ধারা : ৯ (৪) (খ) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০)।
এ ব্যাপারে নির্যাতিত শিশুটি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানায়, ‘মহুরি মুরব্বি আমাকে ব্যাথা দিয়েছে। শিশুটি আইনের কাছে অভিযুক্তের কঠোর শাস্তি দাবি করেছে। তার ভাষায়, আইন যেনো মুরব্বিকে বড় ধরনের শাস্তি দেয়’।
শিশুটির মা বলেন, আমার সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী মেয়েটি সেদিন বাইরে খেলাধুলা করছিল। সেই সময় অপরাধী খুলনা কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত মুহুরী আবুবকর সিদ্দিক চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে এই জঘন্য কাজটি করে। এতে মেয়েটি গুরুতরভাবে আহত হয়, রক্তক্ষরণ শুরু হয় এবং এখনো অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে। আমার মেয়ে এখনো স্কুলে যায় না, বাসায় বসেই পড়ালেখা করে। আমার স্বামী ঢাকায় চাকরি করেন। ওইদিন রাতে মেয়েটার শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে গেলে আমার মা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। দুই দিন ধরে চিকিৎসা চলে। পরে ৩০ তারিখ খুলনা সদর থানায় আমি মামলা করি।
তিনি অভিযোগ করেন, মামলা করায় আসামি আবুবকর সিদ্দিকের ছেলে রুহুল আমিন আমাকে এবং আমার পরিবারকে মামলা উঠিয়ে নিতে রাস্তা-ঘাটে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। বলছে, ‘বিষয়টি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করিস না, মামলা তুলে নে, না নিলে তোদের ক্ষতি হবে’।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এটি পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য ও নিকৃষ্ট অপরাধ। আমি তার ফাঁসি চাই। আমার মেয়ের সঙ্গে যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে, সেটি যেন আর কোনো শিশুর সঙ্গে না ঘটে এই প্রার্থনায় করছি’।
প্রতিবেশী ইমরান হোসেন রাব্বি বলেন, অপরাধী আবুবকরের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই এবং যেনো এমন নিকৃষ্ট ঘটনা আর কখনো কোন অবুজ শিশুর সাথে না ঘটে।
প্রতিবেশী রাসেল বলেন, অপরাধীর নাম বক্কার। সে খুলনা কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত মুহুরী। শুনেছি, এর আগেও সে এমন নিকৃষ্ট কাজ করেছে বা করার চেষ্টা করেছে বলে এলাকায় গুঞ্জণ আছে। এই অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।
প্রতিবেশী শাহেদা বেগম বলেন, বক্কার মুহুরীর সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। ভবিষ্যতে যেন এ ধরণের ঘটনা পুণরায় না ঘটে তার জন্যও কঠোর শিক্ষা দাবি করি।
খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, শিশু ধর্ষণের চেষ্টার আসামি আবু বক্কার সিদ্দিককে গ্রেফতারের জন্য আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আত্মগোপনে থাকার কারণে আটক করতে পারিনি। পরে আসামি আবুবকর আদালতে জামিন নিতে গিয়েছিলো। জামিন নিতে গেলে আদালত জামিন না মুঞ্জর করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে।