স্থানীয় সংবাদ

মনিরামপুরে ব্যতিক্রমী ‘জামাই হাটে’ কোটি টাকার মাছ বিক্রি

যশোর ব্যুরো ঃ যশোরের মনিরামপুরে প্রায় ৭০ বছরের ঐতিহ্য ধরে এবারও বসেছিল ব্যতিক্রমী “জামাই বাজার”। দুর্গাপূজার দশমীর দিনে অনুষ্ঠিত এই বিশেষ বাজারটি মূলত জামাইদের জন্য সাজানো এক দিনের মাছের উৎসব।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মনিরামপুর উপজেলার ঢাকুরিয়া প্রতাপকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে চলে এ বাজার। স্থানীয় বণিক সমিতির দাবি, একদিনে প্রায় কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে এখানে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভিড় জমেছে শত শত মানুষে—ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার চোখ বড় বড় মাছের দিকে। বাজারে কাতলা, রুই, ব্ল্যাক কার্প, গ্লাস কার্প, পাঙাশ ও সিলভার কার্পসহ নানা প্রজাতির মাছ তোলা হয়েছে বিক্রির জন্য। একেকটি মাছের ওজন ৫ থেকে ১৩ কেজির মধ্যে। জামাইরা সকাল থেকেই ভিড় করেন শ্বশুরবাড়িতে নেওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় মাছটি কেনার আশায়।
মনিরামপুরের প্রদীপ কুমার বাইন বললেন, “প্রতি বছর বিজয়া দশমীতে শ্বশুরবাড়ি যাই। যাওয়ার আগে এই মেলা থেকে বড় একটা মাছ কিনে নিয়ে যাই। মাছের সঙ্গে মুড়ি, মুড়কি, জিলাপিও থাকে। সবার সঙ্গে আনন্দ করে খাওয়া-দাওয়া করি।”
শ্যামল বিশ্বাস নামে আরেক ক্রেতা বলেন, “এবার মাছ কিছুটা কম। তবু জামাইদের মধ্যে বড় মাছ কেনা নিয়ে অঘোষিত প্রতিযোগিতা চলে। শুধু হিন্দু না, মুসলমানরাও দল বেঁধে এসে মাছ কেনে।”
৪০ বছরের বেশি সময় ধরে মেলায় মাছ বিক্রি করছেন শংকর বিশ্বাস। তিনি জানান, “আমার ঘের থেকে ভোরে মাছ ধরে এনেছি। রুই আর কাতলাই বেশি বিক্রি হয়। সবচেয়ে বড় ১২ কেজির মাছ বিক্রি করেছি।”
স্থানীয়দের মতে, এই মেলাকে ঘিরে ঢাকুরিয়া ও আশপাশের গ্রামগুলোতে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনিদের আগমনে বাড়িগুলো ভরে ওঠে। মাছের সঙ্গে পিঠা ও মিষ্টির দোকানও বসে।
তবে এবারের মেলায় কিছুটা ভিন্নতা ছিল। একটি অংশের বিক্রেতারা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে মূল মেলা মাঠে দোকান না বসিয়ে বাজারের অন্য অংশে অবস্থান নিয়েছেন।
ঢাকুরিয়া প্রতাপকাটি বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আব্দুল হান্নান গাজী বলেন, “১৯৫০ সাল থেকে এই মেলা বসছে। জামাইদের মাছ কেনার প্রতিযোগিতা এখন ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। মেলাকে ঘিরে আমরা ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছি।”
একদিনের এই মাছের উৎসব এখন মনিরামপুরের লোকসংস্কৃতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button