দিঘলিয়ায় শিশু জিসান হত্যার সঠিক কারণ উদঘাটিত

# জিসানের স্বজনেরা লাশ নিয়ে শেরপুরে
# গ্রেফতারকৃত আসামীদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি রেকর্ড
দিঘলিয়া প্রতিনিধি:
দিঘলিয়ায় শিশু জিসানের লাশ উদ্ধারের দুই দিনের শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশের অবসান ঘটেছে। ঘাতক ও তার মা-বাবাকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ৩ জনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্ধী প্রদান করেছে। জিসানের লাশের ময়না তদন্তের কার্যক্রম শেষে স্বজনরা খুলনা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে লাশ নিয়ে নিজ গ্রামের বাড়ি শেরপুর গমন করেছে। মিলের যে কোয়ার্টারে মিল শ্রমিক আলমগীর যে বাসায় পরিবার ও দুই পুত্র সন্তান নিয়ে বসবাস করত সে বাসায় তালা দেওয়া দেখা যায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই লিটন এ প্রতিবেদককে জানান, গ্রেফতারকৃত ৩ আসামীই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আদালতে সকল আসামীই হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তবে হত্যার কারণ এখন পর্যন্ত স্বীকার করেনি। ঘাতক হত্যার কারণ হিসেবে যা বলেছে তার কোনো ভিত্তি নেই এমনটাই জানিয়েছে পুলিশের এক সূত্র। তবে মৃত্যুর রহস্য উন্মোচনে নানা অজানা রহস্যকে সামনে রেখে এগোচ্ছে পুলিশ। ঘাতক ফয়সালের সাথে বাইরের কেউ ছিল কিনা? শিশু জিসানকে ফয়সাল কেন হত্যা করল? জিসানকে নিজ বাড়িতে কেন নিয়ে এলো?, ফয়সাল তার দুই হাত কেন পিঠমোড়া দিয়ে বাঁধলো? কেনো তার শরীর বটি দিয়ে কুপিয়ে ক্ষত বিক্ষত করা হলো? তার সাথে আর কেউ ছিল কিনা? তার পরিবারের কোনো সদস্য কি ছেলের এই নির্মমতা দেখেনি? এলাকায় হত্যার রহস্য নিয়ে লোক মুখে যা শোনা যাচ্ছে তা কি সব মিথ্যা? সব কিছুই পুলিশের তদন্ত করে দেখা দরকার। শিশু জিসানের মা-বাবা আর তার সন্তানকে ফিরে পাবেনা। ঘাতকের বিচার হলে ঐ পিতা-মাতার মনে একটু হলেও শান্তি পাবে। শিশু জিসানের মা-বাবা আর্তনাদে শ্বাসরুদ্ধকর দুই দিনে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছিল। আমরা তো কারো ক্ষতি করিনি। আমাদের শিশু পুত্র কি অন্যায় করেছে? কেন আমাদের সন্তানকে কেড়ে নেওয়া হলো? আমরা আমাদের সন্তান হত্যার বিচার চায়। আমাদের সন্তানের ঘাতকের ফাঁসি চাই। উল্লেখ্য, দেয়াড়া জুট টেক্সটাইল মিলের মেকানিক্যাল বিভাগের শ্রমিক আলমগীর হোসেনের দ্বিতীয় পুত্র। আলমগীর মিলের শ্রমিক হওয়ার সুবাদে মিলটির নিজস্ব কোয়ার্টারে পরিবার ও দুই পুত্রকে বসবাস করত। শিশু জিসান গত বৃহস্পতিবার বিকালে নিখোঁজ হয়। সে মসজিদে নামাজ পড়ে আর বাড়িতে ফেরেনি। জিসানের কোনো সন্ধান না পেয়ে মাইকিং ও নিখোঁজ সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয় এবং দিঘলিয়া থানায় জিডি করা হয়। দিঘলিয়া থানা পুলিশ ঘাতক ফয়সালকে খালিশপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে এবং তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গত শনিবার দেয়াড়া খেয়াঘাট সংলগ্ন জিএম হান্নানের বাড়ির ভেতর থেকে মাটিতে পুতে রাখা অবস্থায় জিসানের লাশ উদ্ধার করে নৌবাহিনী ও পুলিশ। লাশ উদ্ধার অভিযান চলাকালীন দিঘলিয়া নৌবাহিনী কন্টিনজেন্ট কমান্ডার ও খুলনা এএসপি সার্কেল ক অঞ্চল সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। ঐদিন রাত সাড়ে ১১ টায় পুলিশ ঘাতকের পিতা জিএম হান্নান ও মাতা মাহিনুর বেগমকে খালিশপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় দিঘলিয়া থানায় জিসানের পিতা আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-৪ তাং ১২/১০/২০২৫। গত রবিবার সকালে বিক্ষুদ্ধ জনতা জিএম হান্নানের বাড়িঘর ভেঙ্গে দেয় এবং বাড়িঘরে আগুন দেয়। দেয়াড়া খেয়াঘাটের মোড়ে এলাকাবাসীর ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।