স্থানীয় সংবাদ

নগরীতে সৎ মা কর্তৃক এতিম দুই সন্তানকে অর্থ-সম্পদ থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র!

কোটি টাকাসহ স্বর্ণালংকার আত্মসাতের অভিযোগ
এক বিয়ের দুই কাবিননামা তৈরির অভিযোগ কাজী’র বিরুদ্ধে

স্টাফ রিপোর্টার : খুলনায় সৎ মা কর্তৃক পিতার পেনশন ও জমি বিক্রির প্রায় কোটি টাকাসহ স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেইসাথে মায়ের নামে থাকা বাড়িটি দুই সন্তানের নামে দলিল করে দেওয়া হলেও সেটি দখলের পায়তারাসহ এতিম দুই সন্তানকে পিতার অর্থ-সম্পদ থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র চলছে। এসব অভিযোগ উঠেছে দ্বিতীয় স্ত্রী জাহিদা সুলতানা রুমা’র বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে খুলনা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। যার অনুলিপি খুলনা জেলা রেজিষ্ট্রারের দপ্তরেও দাখিল করা হয়েছে। সোমবার (২০ অক্টোবর) অবসরপ্রাপ্ত মৃত পুলিশ পরিদর্শক রফিকুল ইসলামের মেয়ে ভুক্তভোগী অসহায় মোসাঃ ফারজানা শারমিন রুপা এ লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। একই অভিযোগে খুলনা সিটি করপোরেশনের ২৮নং ওয়ার্ডের কাজী (নিকাহ রেজিস্ট্রার) হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধেও রুপার বাবা এবং সৎ মায়ের ভিন্ন ভিন্ন তারিখ ও সালে দুটি কাবিননামা তৈরির অভিযোগ করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, মহানগরীর নিরালা আবাসিক প্রান্তিক এলাকার মরহুম অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক রফিকুল ইসলামের মেয়ে এবং খানজাহান আলী থানার যোগীপোল এলাকার আসাদুজ্জামান তোতার স্ত্রী ফারজানা শারমিন রুপার গর্ভধারিণী মা মিসেস মানসুরা খানম ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর মারা যান। এরপর তার পিতা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত এসআই মোঃ রফিকুল ইসলাম ২০২২ সালের ১৭ জুন জাহিদা সুলতানা রুমার সাথে দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের পর থেকে সংসারে সব সময় তার পিতার সাথে কলহ-বিবাদ লেগেই থাকতো। তখন রুপা ও তার ভাই রাজ এবং রুপার মেয়েরা তার পিতার সাথে কথা বললেই তাদের সংসারে অশান্তি হতো। এমনকি দ্বিতীয় স্ত্রী তার পিতার গায়ে হাত তুলতে পর্যন্ত দ্বিধাবোধ করতো না। সেই কারণে বিবাহের মাস খানেক পর থেকে রুপা, ভাই রাজ এমনকি রুপার ছোট দু’টি মেয়ে যোগাযোগ পর্যন্ত বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। আর সেই সুযোগে সৎ মা তার পিতার পেনশনের ৭০ লাখ টাকা এবং জোরপূর্বক চাপ সৃষ্টি করে গ্রামের বাড়ি থেকেও জমি বিক্রি করে ২৮ লাখ টাকা এবং মায়ের স্বর্ণের নেকলেস, ৪টি চুরি (বালা), ৩টি চেইন এবং হাতের আংটি কৌশলে হাতিয়ে নেয়। এতোদিন যোগাযোগ বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ঈদুল ফিতরের দিন অর্থাৎ ২৯ মার্চ পিতা রফিকুল তার মেয়ে রুপাকে ফোন করে বলে তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে পেনশনের ৭০ লাখ টাকা, জমি বিক্রির ২৮ লাখ টাকা এবং স্বর্ণালংকার ফেরত দিতে বলেছে। সে দিলে তাদের দুই ভাই বোন এবং দ্বিতীয় স্ত্রীকে ভাগ-বাটোয়ারা করে দিবে। তারপর থেকেই সংসারে শুরু হয় আরও অশান্তি। এরপর থেকে রফিকুল ইসলাম তার মেয়ে রুপাকে ফোন করে প্রায়ই বলে আমি আর পারছি না। যে কোন সময় আমাকে মেরে ফেলতে পারে তার দ্বিতীয় স্ত্রী। এরপর রুপা ও তার ভাই রাজ কয়েকদিন পিতাকে শান্তনা দিতে থাকে। সর্বশেষ এ বছরের ৯ এপ্রিল রাত ৮টার সময় পিতার সাথে রুপা ও তার মেয়েরা কথা বলতে লাগলে তখন শুনতে পায় পাশ থেকে তার পিতাকে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করছে ওই নারী সুলতানা রুমা। তখন কিছু না বলেই ফোনটি কেটে দেয়। ভুক্তভোগী রুপার স্বামীকে রুপা তখন বলে তার পিতাকে সকালে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে বলে ঘুমিয়ে পড়ে। তখন রাত ১১ টা ৫৯ মিনিটে রুপার চাচা ফোন করে সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলে। গিয়ে দেখে তার পিতা আর নেই। ওইদিন রাত ১ টায় সকলে পোষ্টমর্টেম করার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে তারা দেখে ৭/৮ জন অপরিচিত লোক। তখন তারা বলে পোষ্ট মর্টেম করা লাগবেনা। আর পোষ্ট মর্টেম করলে পিতা-মাতা হারা রুপা ও তার ভাই রাজেরও পরিণতি পিতার মত হবে বলে হুমকি দেয়। তখন লাশ নিয়ে পূণরায় নিরালা প্রান্তিকা বাসায় ফিরে আসে রুপা।
লাশ নীচতলায় রেখে রুমে ঢুকে দেখে পানির গ্লাস ভাঙ্গা, তরকারি ফ্লোরে ছড়ানো-ছিটানো। রুপা তখন ধারনা করেছিলো ওই নারীর মানুষিক অত্যাচারে হয়তো তার পিতা হার্ট এ্যাটাক করে মারা গেছেন। ওই রাতেই বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার কালেখার বেড় গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। ১১ আগষ্ট পিতার দোয়া’র অনুষ্ঠান করার জন্য গ্রামে গিয়ে কথা বলা শুরু করলে উক্ত ওই নারী এলাকার একদল চিহ্নিত সন্ত্রাসী এনে রুপার স্বামী এবং চাচাকে মারধর করে। মুহুর্তের মধ্যে গ্রাম থেকে তখন তারা পালিয়ে চলে আসে। এরপর থেকে আজও পর্যন্ত কবর জিয়ারত পর্যন্ত করতে পারিনি এতিম দুই সন্তান।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, পুলিশ দম্পতি বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর এতিম দুই সন্তানের পিতা-মাতার শোক কাটতে না কাটতেই অর্থ-সম্পত্তি নিয়ে ওই নারী বেইমানি শুরু করে। ইতিমধ্যে ফন্দি আঁটতে ওই নারী সুলতানা রুমা খুলনা সদর থানাধীন ২৮নং ওয়ার্ডের পিটিআই মোড় এলাকার হারুনুর রশিদ কাজীকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ২০১৬ সালের ১০ জুন বিবাহের একটি ভূয়া কাবিননামা বের করে পেনশনের টাকার জন্য খুলনা পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে ডিআইজি বরাবর দাখিল করে (যার রেজিষ্টার নং-৩, বালাম নং-৫/১৬, ক্রমিক নং-৮৫)। তখন ভুক্তভোগী রুপা বিষয়টি জানার পর একই কাজী অফিস থেকে হারুনুর রশিদের কাছে থেকে সঠিক বিবাহের কাবিননামা এনে খুলনা পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে ডিআইজি বরাবর জমা দেন। বর্তমানে কাবিননামাটি তদন্তাধীন রয়েছে। তবে উক্ত জাহিদা সুলতানা রুমা টাকার বিনিময়ে ভূয়া কাবিননামাটিকে সঠিক এবং সঠিক কাবিননামাটিকে ভূয়া বলে প্রমাণ করতে পারেন বলে রুপা সন্দেহ প্রকাশ করেন। এই কাজী হারুনের বিরুদ্ধেও ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
আরও উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে নিরালা প্রান্তিকার ৬৩নং বাড়িটি রুপা ও রাজের মা মানসুরা খানমের নামে থাকা অবস্থায় তিনি মৃত্যুর আগে তাদের দুই ভাই বোনকে সমান অংশে দলিল করে দিয়ে যান। কিন্তু তারপরও তাদের সৎ মা জাহিদা সুলতানা রুমা সন্ত্রাসীদের দিয়ে হুমকি দিচ্ছে এবং বাড়িটি দখলের পায়তারা করছে। সেই সাথে তার ভাই পুলিশের এসআই মোঃ মাহাবুবুল ইসলাম রাজ কিভাবে চাকরি করে তা দেখে নেবে বলেও সে বিভিন্ন ধরনের হুমকিও দিচ্ছে। বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনের প্রতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
দু’টি কাবিননামা প্রদানের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে কাজী মোহাম্মদ হারুনার রশীদ খান বলেন, ‘রফিকুল সাহেব সম্ভবত ওসি অথবা দারোগা ছিলেন। প্রথম যে কাবিনটি হয়েছে সেইটা রফিকুল সাহেব তার প্রথম স্ত্রীর অসুস্থতা ও সরকারি চাকরির কারণে গোপন রাখেন। পরবর্তীতে স্ত্রী মারা যাবার পর ঘটনাটি সবাইকে জানিয়ে পুনরায় দ্বিতীয় কাবিনটি করা হয়। তবে দুটো কাবিননামা-ই সঠিক। এখন আমলে কোনটা নিবে সেটা আইনের ব্যাপার। তবে তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মৃত পুলিশ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী অভিযুক্ত জাহিদা সুলতানা রুমাকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর বলেন, বাইরে আছেন ১০ মিনিট পরে কথা বলবেন। এ কথা বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে আবারও তাকে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি, এমনকি কল ব্যাকও করেননি।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button