স্থানীয় সংবাদ

‘খুলনাঞ্চলে’ চলছে শীত সবজির আবাদ

চলতি অর্থ বছর ২০২৫-২০২৬’র আওতায় রবি মৌসুম

# অঞ্চলের ৪ জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমি নির্ধারন #
# ইতোমধ্যে অঞ্চলের চাষাবাদের অগ্রগতির হার ১৫.২%, চাষাবাদে ব্যস্ত চাষিরা।

মো. আশিকুর রহমান ঃ খুলনাঞ্চলকে কৃষি নির্ভর ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী করার লক্ষ্যে এ অঞ্চলের চাষিরা সারা বছর ধরে কৃষিজ চাষাবাদ অব্যহত রাখেন। ওই ধারাবাহিকতায় খুলনাঞ্চলের আওতায় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল জেলা সমূহের উপজেলা সমূহের চাষিদের অর্থনীতিকভাবে সচ্ছল করে তোলার প্রয়াসে ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলতি ২০২৫-২৬ রবি মৌসুমে শীতকালীন সবজির আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ওই লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই উপজেলা সমূহের চাষিরা তাদের জমিতে শীতকালীন সবজি হিসাবে ফুলকপি, বাধাঁকপি, ওলকপি, ব্র-কলি, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, শিম, কুশি, লালশাক, ঘি-কাঞ্চন (সাদা শাক), পালংশাক, গাজরসহ প্রভৃতি সবজির চাষাবাদ শুরু করেছেন। অঞ্চলের চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্ষেতে বীজ বপণ, কীটনাশক প্রয়োগ, পরিচর্চাসহ বিবিধ কার্যক্রম নিয়ে। সংশ্লিস্টরা বলছেন, কোনো বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা না দিলে চলতি রবি মৌসুমে শীতকালীন সবজির আবাদের লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ পূরণ করে অঞ্চলকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী করায় ভূমিকা রাখবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের সর্বশেষ তথ্যনুসারে, খুলনাঞ্চলের ৪ জেলায় চলতি ২০২৫-২৬ রবি মৌসুমে শীতকালীন সবজির আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৩০,৩৬৫ হেক্টর জমি। যার মধ্যে, খুলনা জেলার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৮,৩৩৫ হেক্টর জমি। অর্জিত জমি ৪৬৫ হেক্টর, যার হার ৫.৬%। বাগেরহাট জেলার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৯,২০০ হেক্টর জমি। অর্জিত জমি ৩১২২ হেক্টর, যার হার প্রায় ৩৪%। সাতক্ষীরা জেলার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৯,৬৯০ হেক্টর জমি। অর্জিত জমি ৮২২ হেক্টর, যার হার ৮.৫% ও নড়াইল জেলার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৩,১৪০ হেক্টর জমি। অর্জিত জমি ২১৫ হেক্টর, যার হার ৬.৮%।
কৃষক সাইফুল জানান, শীতের সবজির প্রতি মানুষের বেশ আগ্রহ থাকে। এ কারণে আগাম শীতের সবজির চাষাবাদ শুরু করেছি। প্রায় দেড় সপ্তাহ হলো শাকের বীজ ছড়িয়েছি। আশা করি আগাম সবজি বাজারে বা হাটে গেলে ভালো দাম পাবো। অপর কৃষক হামিদুল জানান, জমিতে ফুলকপি ও বাধাকপির চাষাবাদ করছি। সারা বছর সবজির বেশ চড়া দাম থাকে বাজারে। কিন্তু আমরা চাষাবাদ করার পর দাম আস্তে আস্তে কমতে থাকে। ভালো দাম না পাওয়ার কারণে অনেক সময় আগ্রহ হারিয়ে যায়। ঘের মালিক সালাম জানান, ঘেরে মাছের ব্যবসা করি। কয়েক বছর ধরে শীত মৌসুমে ঘের পাড়ে কুমড়া, সীম, লাউয়ের চাষাবাদ করছি। গত বছরও ভালো দাম পেয়েছি। আশা করি, এ বছরও ভালো চাষাবাদ হবে এবং ভালো দামে বিক্রি করবো।
কালিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আমিরুল ইসলাম জানান, আমার সালামাবাদ ইউনিয়নে ধুসহাটি, বিল বাউচ, বলাডাঙ্গা ব্লকের ২০ হেক্টর জমিতে রবি মৌসুমে শীতকালীন সবজি চাষাবাদ করা হচ্ছে। কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্ষেতে শীতকালীন সবজির বীজ বপণ, কীটনাশক প্রয়োগ, পরিচর্চাসহ বিবিধ কার্যক্রম নিয়ে। আমরা তাদের সর্বক্ষন বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি।
এ বিষয়ে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. কিশোর আহম্মেদ জানান, চলতি রবি মৌসুমের আওতায় শীতকালীন চাষাবাদের লক্ষ্যে ৩১৫ হেক্টর জমিতে ইতোমধ্যে চাষাবাদ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে ২০০ হেক্টর জমি। সমতল জমির পাশাপাশি ঘেরপাড়েও শীতকালীন সবজির চাষে ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রনোদনা হিসাবে কৃষদের বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। আশা করি, বড়সড় কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা না দিলে গত বছরের মতো এ বছরও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সক্ষম হবো।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম জানান, খুলনাঞ্চলকে কৃষি নির্ভর ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী করার লক্ষ্যে সারা বছর ধরে আমাদের চাষাবাদের কার্যক্রম অব্যহত থাকে। ওই ধারাবাহিকতায় ইতেমধ্যে অঞ্চল সমূহে রবি মৌসুমে শীতকালীন সবিজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বিশেষ করে, এই মৌসুমে ঘেরের পাড়ে সবজি চাষের উপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ, এখানে কীটনাশক প্রয়োগ হয় না, যা স্বাস্থ্যের জন্য অধিক নিরাপদ। ঘেরে সবজি চাষে চাষি ও ভোক্তা উভয় লাভবান হন। প্রতিদিনই এ অঞ্চলে চাষাবাদের অগ্রগতি বাড়ছে। আশাকরি, কোনো বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা না দিলে শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ পূরণ করে এ অঞ্চল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি স্থাপণে ভূমিকা রাখবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button