স্থানীয় সংবাদ

সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য দৌলতপুর!

ফিল্মি স্টাইলে দু’ বাড়ীতে গুলি বর্ষণ
১৫ রাউন্ড শর্টগানের গুলির খোসা উদ্ধার, মামলার প্রস্তুতি
৩ খুন ও গুলি বর্ষণের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত এলাকাবাসী

স্টাফ রিপোর্টার : খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর থানাধীন মহেশ^রপাশা এলাকাটি সম্প্রতি সময়ে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে হিসাবে গড়ে উঠেছে। ওই এলাকার সন্ত্রাসীদের আধিপত্য বিস্তার, গ্রুপিং, মাদক সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি, পূর্ব শত্রুতার দ্বন্দ্বের জেরসহ বিবিধ কারণে শান্ত এলাকাটি এখন এলাকাবাসীর কাছে সন্ত্রাসীদের আতুর ঘরে পরিনত হয়েছে। বিশেষ করে, মহেশ^রপাশা এলাকায় পর পর ৩ টি হত্যাকা-ের ঘটনায় গোটা এলাকাবাসীর মধ্যে সর্বক্ষণ উৎকন্ঠা ও অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাত নামতেই সন্ত্রাসীদের ভয়াল থাবার ভয়ে গোটা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সন্ত্রাসী বাহিনীর কর্মকা-ে সাধারন মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, নেই ঘরেও নিরাপত্তা। গেল, ৩০ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে মায়ের পাশে ঘুমন্ত যুবককে মাথায় গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনা সাধারন মানুষকে আরো আতঙ্কিত ও ভাবিয়ে তুলেছে। হত্যাকা-ের প্রায় ১ মাস অতিবাহিত হতে গেলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ জড়িত কোনো আসামীকে প্রকাশ্যে আনতে বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
সর্বশেষ, মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ভোরে মহেশ^রপাশা খুটিরঘাট ও কার্তিককুল এলাকার পৃথক দুটি বাড়ীতে অস্ত্রে সজ্জিত সংঘবদ্ধ সস্ত্রাসীরা অর্তকিত গুলি বর্ষণ করে। ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে নিশ্চিত করছেন দৌলতপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মো. রফিকুল ইসলাম। সন্ত্রাসীরা ইসমাত জাহান ববি অর্থ্যাৎ (তার স্বামী মেহেদীর) বাড়ীতে ৯ রাউন্ড ও কুয়েটে কর্মরত চাকুরিজীবি মুহাসীন শেখের বাড়ীতে ৬ রাউন্ড গুলি চালায় বলে সূত্রে জানা গেছে। মহেশ^রপাশা এলাকায় পূর্বে যে ৩টি হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে, তারাই এই ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকতে পারে বলে পুলিশের প্রাথমিক ধারনা। পুলিশ ঘটনাস্থল হতে ১৫ রাউন্ড দেশীয় তৈরী শর্টগানের গুলির খোসা, অন্যান্য আলামত উদ্ধারসহ বিভিন্ন বিষয়কে সামনে রেখে তদন্তের কার্যক্রম চালাচ্ছে, জড়িতদের আটকে অভিযান চলছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে, মহেশ^রপাশা এলাকায় পর পর ৩ খুনের ঘটনা ও সম্প্রতি সময়ে পৃথক দুই বাড়ীতে অর্তকিত গুলি বর্ষণের ঘটনায় গোটা এলাকা জুড়ে নতুন করে আতঙ্ক ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাটিতে দিন দিন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে চরম অবনতি, তা নিয়ন্ত্রনে পুলিশ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বলে মনে করছেন সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ, তারা পুলিশি কার্যমের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এজাহারে বাদী ইসমাত জাহান ববি উল্লেখ করেন, সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে মায়ের বাড়ীতে যায়। মঙ্গলবার ভোরে এক প্রতিবেশি ফোনে জানায়, কে বা কারা আমার বাড়ী লক্ষ্যে করে গুলি ছুঁড়েছে। ৯৯৯ ফোন দিয়ে পুলিশকে বিষয়টি অবগত করি এবং মায়ের বাড়ী হতে চলে আসি। বাড়িতে এসে সিসি ক্যামেরা ফুটেজে দেখতে পায় অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন ব্যক্তি চারটি মোটরসাইকেল যোগে হেলমেট পরিহিত অবস্থায় আমার মহেশ্বরপাশা খুটিরঘাট আমার বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আমার স্বামী মোঃ মেহেদী হাসানকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাড়ির মেইন গেটে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে অতর্কিত গুলি চালায় এবং মেইনগেটের ফাঁক দিয়ে বাড়ির ভিতরে গুলি চালালে বাড়ির ভিতরে রুমের থাই গ্লাস ও টিভি ভেঙ্গে যায়। ওই সময় বাড়িতে কেউ ছিলো না। তখন অজ্ঞাতনামা আসামীরা গেটের পশ্চিমপাশের একটি সিসি ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলে বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি সহ আমার পরিবারের লোকজনদের প্রাণ নাশের হুমকী প্রদান করে মোটরসাইকেল যোগে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৯ রাউন্ড শর্টগানের গুলির খোসা উদ্ধার পূর্বক জব্দ করে। ওই ঘটনায় আমি বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় ৭/৮ জন অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করি।
অপর এজাহারে বাদী মুহসীন শেখ উল্লেখ করেন, মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ভোরে আমি নামাজ পড়ার জন্য বাড়ি থেকে মসজিদে যাই। নামাজ শেষ করে হাটতে বের হলে পথিমধ্যে পরিচিত একজন বলে কে বা কারা আমার বাড়ির জানালায় গুলি করেছে। ওই খবর শুনে আমি দ্রুত বাড়ীতে গিয়ে জানতে পারি অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি চারটি মোটরসাইকেল যোগে হেলমেট পরিহিত আমার মহেশ্বরপাশা কার্তিককুল বসতবাড়ির পূর্ব পাশে দাড়িয়ে আমার বাড়ির পূর্ব পাশের থাই জানালা ও জানালার নিচে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে আমার বা আমার পরিবারের লোকজনকে হত্যার উদ্দেশ্যে ৬ রাউন্ড গুলি করে বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতিসহ আমার পরিবারের লোকজনদের প্রাণ নাশের হুমকী প্রদান করে দ্রুত মোটরসাইকেল যোগে স্থাত ত্যাগ করে চলি যায়। সংবাদ শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং ৬ রাউন্ড শর্টগানের গুলির খোসা উদ্ধার করে জব্দ করে। ওই ঘটনায় আমি বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় ৭/৮ জন অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করি। এদিকে, মহেশ^রপাশা এলাকায় পর পর ৩ খুনের ঘটনা ও সম্প্রতি সময়ে পৃথক দুই বাড়ীতে গুলির ঘটনায় নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে গোটা এলাকা জুড়ে। রাত নামতেই অজানা আতঙ্কে গোটা এলাকাবাসী। এলাকাবাসী দ্রুত সময়ের মধ্যে মহেশ^রপাশা এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রন, সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধ, হত্যাসহ সম্প্রতি এলাকায় দুটি বাড়ীতে অর্তকিত গুলি বর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ মহেশ^রপাশা এলাকাকে সাধারন মানুষের বাসযোগ্য করে তুলতে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে বাদী ইসমাত জাহান ববি জানান, মাহবুব ভাইকেও সস্ত্রাসীরা হত্যার হুমকি দিয়ে ছিল, মাহবুব ভাই বেঁচে নেই। সস্ত্রাসীরা আমার স্বামীকে কোর্টে দাঁড়িয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছিল, চাঁদাদাবী করেছিল। ওই সন্ত্রাসীরাই আমার বাড়ীতে গুলি করেছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে ৭/৮ জন সস্ত্রাসী আমার বাড়ী লক্ষ্যে করে এলোপাতাড়ী গুলি চালায়। থানায় এজাহার করেছি। পুলিশ সঠিক তদন্ত করলে প্রকৃত দোষীরা আইনের আওতায় আসবে।
এ বিষয়ে অপর বাদী মো. মুহাসীন শেখ জানান, আমি সাধারন একজন চাকুরিজীবি। আমার সাথে তো কারো কোনো শত্রুতা নেই। কে বা কারা কি কারণে আমার বাড়ীর উপর গুলি চালালো ভেবে পাচ্ছিনা। ওই ঘটনায় আমার গোটা পরিবার ভয়ে শঙ্কিত, বাকরুদ্ধ। ওই ঘটনায় সোমবার থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে এজাহার করেছি।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ ইমাম হোসেন বলেন, সমগ্র খুলনা মহানগরী এলাকায় যে হারে খুুনের ঘটনা ঘটছে, তা নিয়ে সর্বস্তরের মানুষ শঙ্কিত। বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলার এতোটাই অবনতি হয়েছে, সর্বত্র সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সর্বস্তরের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমি মনে করি না, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহন করছে। তারা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করলে একটি ঘটনার পর আরেকটি ঘটনার জন্ম হতো না। সুতারং, খুলনাকে বাসযোগ্য করে তুলতে এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে পুলিশের কঠোর ভূমিকা ও পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।
এ বিষয়ে সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’র মহানগর সাঃ সম্পাদক এড.কুদরত-ই খুদা জানান, খুলনা বর্তমানে সন্ত্রাসের রাজত্বে পরিণত হয়েছে। আধিপত্য বিস্তার, গ্রুপিং, মাদক সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজিসহ বিবিধ বিষয়ে সামনে রেখে প্রতিদিনই মানুষ খুন হচ্ছে। জনমতে আতঙ্ক সৃষ্টির পায়তারার জন্যই গতকাল দৌলতপুরের গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটতে পারে। সত্যকার অর্থে বর্তমানে পুলিশের ভূমিকা অকার্যকর ও নিরব। সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে পুলিশের ভূমিকা ছাড়া এটি প্রতিরোধ অসম্ভব।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, মহেশ^রপাশা এলাকায় দুটি বাড়ী লক্ষ্যে করে দুবৃর্ত্তরা গুলি ছুঁড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল হতে ১৫ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করি। পৃথক ঘটনায় মামলা প্রস্তুতি চলছে। তদন্তের কার্যক্রম চলমান রয়েছে, আসামী গ্রেপ্তারে আমরা কাজ করছি।
এ বিষয়ে উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মাদ তাজুল ইসলাম জানান, দৌলতপুর মহেশ^রপাশা এলাকায় পূর্বে যে ৩টি হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে, তারাই এই ঘটনায় সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল হতে ১৫ রাউন্ড দেশীয় তৈরী শর্টগানের গুলির খোসা, অন্যান্য আলামত উদ্ধারসহ বিভিন্ন বিষয়কে সামনে রেখে তদন্তের কার্যক্রম চলছে। জড়িতদের আটকে আমাদের টিম কাজ করছে।
উল্লেখ্য, দৌলতপুর মহেশ^রপাশা এলাকায় গত, ৩০ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে পশ্চিমপাড়া বাজার মসজিদ সংলগ্ন নিজ বাসায় মায়ের পাশে ঘুমন্ত যুবক তানভীর হাসান শুভ (২৯)’কে জানালার ফাঁক দিয়ে মাথায় লক্ষ্য করে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এরপর, গত ১১ জুলাই দুপুরে দৌলতপুর থানা মহেশ^রপাশা পশ্চিমপাড়া নিজ বাড়ীর সামনে প্রাইভেটকার পরিষ্কার করার সময় দুর্বৃত্তরা গুলি ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করে সাবেক যুবদল নেতা মাহবুব রহমান মোল্লা। পরবর্তীতে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ নেওয়া হলে চিকিৎসক তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। ওই খুনের ঘটনার পর গত ৩ আগষ্ট রাতে মহেশ্বরপাশা উত্তর বনিকপাড়া খানাবাড়ী লিংক রোড এলাকায় দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন চোখঘোলা আলামিন নামের এক ব্যক্তি। খুলনার শান্তি প্রিয় নগরবাসী, আইন-শৃঙ্খলার উন্নতিতে একদিকে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ করছেন। পাশাপাশি, খুনসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকা-ের ঘটনায় প্রকৃত জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের জোরালো ভূমিকা রাখার প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button