রূপসায় ওসির নেতৃত্বে চা দোকানির ওপর নির্যাতন ও লুটপাটের অভিযোগ

প্রতিকার চেয়ে পুলিশ সুপার বরাবর মায়ের আবেদন
 চরমপন্থী ও কথিত সোর্স ইব্রাহিমের বিরুদ্ধেও অভিযোগের আঙ্গুল
স্টাফ রিপোর্টার : খুলনার রূপসা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ও তার নেতৃত্বাধীন পুলিশের বিরুদ্ধে এক চা দোকানি যুবকের ওপর অমানবিকভাবে নির্যাতন ও দোকান থেকে নগদ টাকা-মোবাইল লুটের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ভুক্তভোগীর মা খুলনা জেলা মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রূপসা উপজেলা মহিলা দলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মনিরা বেগম জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
 অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২৭ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১ টারদিকে রূপসা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ও তার পুলিশ ফোর্স চরমপন্থী ও কথিত সোর্স ইব্রাহিমকে সঙ্গে নিয়ে পূর্ব রূপসা ঘাট এলাকায় গিয়ে মিরাজুজ্জামান মামুনের (২৪) চায়ের দোকানে প্রবেশ করে। কোন প্রকার কথা বলার সুযোগ না দিয়েই মুহুর্তে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন (অপ্পো অ-৯২) এবং দোকানে থাকা নগদ ১২ হাজার টাকা জোর পূর্বক নিয়ে নেওয়া হয়। তখন চা দোকানি মামুন তার অপরাধ জানতে চাইলে ওসি ও তার সঙ্গে থাকা ফোর্সরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে অমানবিকভাবে মারধর করে। এমনকি চেয়ার দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে চেয়ার ভেঙ্গে ফেলে। কিন্তু প্রমাণ না রাখার জন্য ভাঙ্গা চেয়ারের গুড়িগুলো পুলিশ সদস্যরা তুলে রূপসা নদীতে ফেলে দেয়। এতে মামুন মারাত্মক রক্তাক্ত জখম হয়। এ ঘটনার সময় আশে পাশের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে মামুনের মা মহিলা দল নেত্রী মনিরা ইয়াসমিনকে খবর দেয়।
 খবর পেয়ে মামুনের মা মহিলা দল নেত্রী মনিরা ইয়াসমিন তাৎক্ষনিক ভাবে সেখানে ছুটে গিয়ে ওসির কাছে তার ছেলেকে মারধর করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে প্রতি উত্তরে ওসি বলেন, ‘এটা কি আপনার ছেলে’। তখন মামুনের মা মনিরা বলেন ‘হ্যাঁ’। তখন ওসি কিছু না বলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। আহত মামুনকে রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে খুলনায় নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন।
 মামুনের মা মহিলা দল নেত্রী মনিরা ইয়াসমিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তার ছেলে চায়ের দোকান দিয়ে বৈধভাবে উপার্জন করে এটাই কি তার অপরাধ। কোন কারণ ছাড়াই তার ছেলেকে পুলিশ মারধর করলো, তার মোবাইল ও টাকা লুট করলো। তাও আবার একজন ওসির’র নেতৃত্বে। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী পুলিশের কি এই চেহারা- প্রশ্ন করেন তিনি। এই সঙ্গে ঘটনাটি নিরপেক্ষ তদন্ত পূর্বক দোষিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করেন তিনি।
 তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রূপসা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, পূর্ব রূপসায় সরকারি যাত্রী ছাউনি অবৈধভাবে দখল করে হোটেল এবং চলাচলের রাস্তায় টোং দোকান করা হয়েছে। যেখানে রাতে মাদক ব্যবসা এবং ছিনতাইকারীরা অবস্থান করে। তারপরও ঘাট এলাকা হওয়ায় রাত ১২টা পর্যন্ত তাদের দোকান খোলা রাখার সর্বশেষ সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু তারা গভীর রাত পর্যন্ত দোকান খোলা রাখায় সেখানে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। মামুন নামে কাউকে মারধর করা হয়নি। তবে ৪/৫জনের কাছ মোবাইল নিয়ে থানায় রাখা হয়। অন্যরা গিয়ে নিয়ে আসলেও মামুন আনেনি। তার মোবাইল থানায় রয়েছে, গেলে দিয়ে দেওয়া হবে। তবে, এ বিষয়টি নিয়ে ওই সময় থেকেই তার মা মহিলা দল নেত্রী মনিরা পারভীন ঝামেলা পাকাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
 এদিকে স্থানীয় একাধিক সূত্র অভিযোগ করেছে, রূপসায় কথিত র্যাবের সোর্স ইব্রাহিম চিংড়ি মাছের ব্যবসার আড়ালে মাদক ও সন্ত্রাসীদের গোপনে সহযোগীতা করে আসছে। এলাকাবাসী উক্ত ইব্রাহিমের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ইব্রাহিম বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের একজন সক্রিয় সহযোগী ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে।
 নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন সাধারণ মানুষ বলেন, এই কথিত র্যাবের সোর্স ও সন্ত্রাসী এবং মাদক ব্যবসায়ীদের প্রশ্রয়দাতা ইব্রাহিম থানা পুলিশকে ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মানুষকে চরমভাবে ক্ষতি করে যাচ্ছে। ইব্রাহিমের হাত থেকেও থেকে তারা প্রতিকার চেয়েছেন।
 কথিত র্যাব সোর্স ইব্রাহিমের কাছে বিষয়টি জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
 এ বিষয়ে খুলনার পুলিশ সুপার টি,এম, মোশাররফ হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, অভিযোগের কপি তিনি হাতে পাননি। পেলে বিষয়টি দেখবেন।
 
  
 


